দেশের সময়: রাজ্যের দুই জেলার দুটি পুরসভার দুটি ওয়ার্ডে আজ উপনির্বাচন । উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকেই চলছে ভোটগ্রহণ। অন্যদিকে, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও উপনির্বাচন চলছে। আশঙ্কা ছিল। সেটাই হল।
পৌরসভা উপ নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত বনগাঁ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ, বনগাঁয় ভোট ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা, যশোররোড অবরোধ ৷
বনগাঁর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি বুথে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। মোতায়েন রয়েছে আধাসেনাও। এখানে লড়াই মূলত চতুর্মুখী। তৃণমূলের পাপাই রাহা, বিজেপির অরূপ পাল, সিপিএমের প্রার্থী ধৃতিমান পাল এবং কংগ্রেসের প্রভাস পালের মধ্যে জোরদার টক্কর চলছে। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর দিলীপ দাসের মৃত্যুতে বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আজ উপনির্বাচন হচ্ছে।
বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপ নির্বাচন ঘিরে ছড়াল ব্যাপক অশান্তি। বিরোধীরা সকাল থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ তোলে। একটু বেলা বাড়তেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তৃণমূল ও বিরোধী দলগুলির কর্মীদের মধ্যে তুমুল বচসা, ধাক্কাধাক্কি এমনকী হাতাহাতিও হয়। ভোট লুটের প্রতিবাদে সিপিএমের পক্ষ থেকে রামনগর রোডের মোড় ও বাটার মোড়ে রাস্তা অবরোধ করা হয়। অবস্থান বিক্ষোভ করা হয় বনগাঁ থানার সামনে।
জোরদার লড়াই শুধু ইভিএমে নয়, ভোটকেন্দ্রের বাইরেও হচ্ছে। সাতসকালেই বনগাঁর কবি কেশবলাল বিদ্যাপীঠে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার উপস্থিতিতে বুথের বাইরে বহিরাগতদের জমায়েতের অভিযোগ করেন তৃণমূলের প্রার্থী পাপাই রাহা। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিজেপি বিধায়ক। এরপর তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ-দুটি কেন্দ্রেই বিজেপি বিধায়ক। তাঁরা বুথে গেলেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পাল্টা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারকে নিগ্রহের অভিযোগ এনেছে বিজেপিও। গেরুয়া শিবিরের দাবি, স্বপনবাবুকে বাঁচাতে গেলে ধাক্কা দেওয়া হয় তাঁর নিরাপত্তারক্ষীকেও। বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, অবাধে ভোট লুঠ করছে তৃণমূল। সেই পরিস্থিতি দেখতে গেলে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। বিজেপির মহিলা কর্মী সমর্থকদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
অন্য দিকে, তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূল নেতা নারায়ণ ঘোষ বলেন, স্বপন মজুমদারই গায়ের জোর ফলিয়েছেন। মিথ্যা কথা বলছেন।
বিজেপি বিধায়কের আরও দাবি, ভোট লুট করছে তৃণমূল। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে যেতেই তাঁর উপর হামলা চালানো হয়। গেরুয়া শিবিরের দাবি, বিজেপি মহিলা কর্মী-সমর্থকদের উপরও হামলা চালানো হয়। বহিরাগতদের নিয়ে বুথ জ্যাম করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বিজেপি কর্মীরাই গায়ের জোর ফলিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছেন।
পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর পর ওই ওয়ার্ডের গাঁধীপল্লিতে একটি বুথে যান বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার। তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। স্লোগান দেওয়া হয়। পাল্টা ‘চোর চোর’ স্লোগান দেন বিজেপি কর্মীরা। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি বাধে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, বিজেপি বিধায়করাই লোক জন এনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলেন।
বিজেপি প্রার্থী অরূপ পালের বক্তব্য, এদিন কোনও ভোট হয়নি। ভোটের নামে যা ঘটেছে, তা চোখে দেখাও পাপ। আমাদের একাধিক কর্মী জখম। দুজন হাসপাতালে ভর্তি। প্রশাসনের চোখের সামনেই সবটা ঘটেছে। কাকে অভিযোগ জানাব। এই বাংলায় অভিযোগ জানিয়ে কিছু হয় না। পুনর্নিবাচনের দাবি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তাঁর বক্তব্য, তা দল বুঝবে। আমার মন মেজাজ ভাল না। একটা ওয়ার্ডের উপ নির্বাচন ঘিরে যে এত বড় সন্ত্রাস চলতে পারে, ভাবতেই পারছি না।
সিপিএমের প্রার্থী ধৃতিমান পালের অভিযোগ, সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই তৃণমূল ওয়ার্ডের ছটি বুথই দখল করে নেয়। সুভাষপল্লীর চারটি বুথ ও গান্ধীপল্লীর দুটি বুথ দখল করে ভোট লুট চালাতে থাকে। এমনকী কন্ট্রোল রুমেরও দখল নিয়ে নেয় শাসক দল। প্রশাসন কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথের মতো হয়ে ছিল। এদিন ভোটের নামে প্রহসন হল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। পুনর্নিবাচনের দাবি জানিয়েছি।
কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দের অভিযোগ, ভোট তো আর ভোট হয়নি। আমাদের প্রার্থী পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। তাঁর পরিবারের লোকেরাও ভোট দিতে পারেননি। আমাদের এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে আমরা বাটার মোড়ে কিছুক্ষণ অবরোধ করেছিলাম। পুনর্নিবাচনের দাবি জানিয়েছি। কৃষ্ণবাবুর বক্তব্য, আজ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে তৃনমূল। ভোট মানে মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে। সেটা করতে দিলে কী অসুবিধা হত। বিরোধীরা যদি এই উপ নির্বাচনে জিতত, তাহলে তো পুর বোর্ড পাল্টে যেত না। তাহলে কেন এই সন্ত্রাস?
বুথ দখলের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের পাল্টা দাবি, গতকাল রাত থেকেই বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার সন্ত্রাস শুরু করে এলাকায়। ফোন করে বিভিন্ন জনকে হুমকি দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে কাল রাতেই দুটি এফআইআর হয়েছে। আজ সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে বুথে ঢুকে বুথ দখলের চেষ্টা করে বিজেপি বিধায়ক। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ পাল্লায়। তিনি কী করে এখানে এসে বুথে ঢুকতে পারেন। এটা গান্ধিপল্লীর ভোটাররা মেনে নেননি। তাঁরা প্রতিবাদ করেন। আমরাও প্রশাসনের ডেপুটেশন দিই। আসলে পুর নির্বাচনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি তৃতীয় স্থানে ছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভয় দেখিয়ে আজকের ভোটে জেতার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ রুখে দিয়েছে তাদের সেই অপচেষ্টা।