দেশের সময় , বনগাঁ: ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটল বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে ৷ চিৎকার করা আটকাতে প্রসূতির মুখে লিউকোপ্লাস লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সব শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরও প্রসূতিকে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় মা ও বাচ্চা দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গাফিলতির অভিযোগে ধুন্ধুমার বনগাঁ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গেধস্তাধস্তি-হাতাহাতি পরিবারের সদস্যদের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালের গাফিলতির জেরেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। লিখিত অভিযোগ হলে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার। মৃতের নাম সাধনা মণ্ডল (২৬)।
শনিবার সকালে বনগাঁর রাওতরারার বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা সাধনাকে ভর্তি করা হয় বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে সাধনা মণ্ডলকে সি- সেকশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। এরপর ওই প্রসূতিকে অ্যানাস্থেসিয়া করা হয়। তারপরই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
পরিবারের বক্তব্য, এরপর চিকিৎসকরা প্রসূতির কোভিড পরীক্ষা করান । করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে ওই প্রসূতির। রবিবার ভোর রাতে মৃত্যু হয় সাধনার। এর পরই রোগীর পরিবারের লোকেরা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। হাসপাতাল কর্মীদের ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বনগাঁ থানার পুলিশ। পুলিশ গিয়ে রোগীর পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মৃতের মা বলেন, রাত থেকেই আমার মেয়ের শরীরটা খারাপ হতে থাকে। ওরা একটা ইঞ্জেকশন দিয়েছিল। তারপর আরও ওর শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। আমি ডাক্তারের হাতে ইঞ্জেকশন দেখেছি, কিন্তু ডাক্তার বলছেন তিনি নাকি ইঞ্জেকশন দেননি। এগুলো মিথ্যা। আমার মেয়েটার মুখে লিউকোপ্লাস লাগানো ছিল। যাতে ও চিৎকার করতে না পারে। আর আমার মেয়ের অ্যালার্জি ছিল। কিন্তু, সব পরীক্ষার পরও কেন তাকে ভুল ইঞ্জেকশন দেওয়া হল? যদিও চিকিৎসক বলছেন যে কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়নি। এদিকে আমি তাঁর হাতে খালি সিরিঞ্জ দেখেছিলাম। তার জন্যই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকের তরফে জানানো হয়েছে, অ্যালার্জির সমস্যা ছিল প্রসূতির। অবকাশ ইঞ্জেকশন দেওয়ার আগেই অপারেশন টেবিলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। এদিকে প্রশ্ন উঠতেই মৃতের পরিবারকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মৃতদেহ আটকে রাখার হুমকি দেওয়া হয় হাসপাতালে থাকা দুষ্কৃতীদের তরফে। এদিকে এই ঘটনার পর হাসপাতাল সুপারের দেখা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের সদস্যদের।
এই বিষয়ে বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে সুপার ফোনে জানিয়েছেন, রোগী মৃত্যুর ক্ষেত্রে আমরা এখনও পর্যন্ত কোনও গাফিলতি লক্ষ্য করিনি। শনিবার রাত থেকে রোগীর বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ ছিলেন চিকিৎসকরা। যদি পরিবারের কোনও অভিযোগ থেকে থাকে, তা লিখিতভাবে জানান।
অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে ঘটনার রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে। তবে মুখে লিউকোপ্লাস্ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সুপার। তাঁর বক্তব্য, ভেন্টিলেশনে দেওয়ার আগে মুখে টিউব ঢোকানো হয়েছিল, সেটি যাতে কোনওভাবে নড়ে না যায়, তার জন্য লিউকোপ্লাস্ লাগানো হয়।