BJP: বনগাঁয় পিকনিকে বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ নেতারা, পোস্টার অমিতাভর বিরুদ্ধে

0
722

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রাজ্য বিজেপি-তে এমন চড়ুইভাতির আয়োজন নতুন নয়। তবে রাজ্য বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ নেতারাদেরকে নিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজনে বঙ্গ বিজেপিতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে৷

গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য বিজেপিতে যে ভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাতে বনগাঁয় সোমবারের চড়ুইভাতি নিয়ে গেরুয়া শিবিরে আলোচনা মধ্যগগনে। কারণ, এই চড়ুইভাতিতে আমন্ত্রিতরা সকলেই রাজ্য বিজেপি-র বর্তমান কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ।

কয়েকদিন আগে পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে কয়েকজন বিজেপি নেতাকে নিয়ে বৈঠক করে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। রাজ্য বিজেপির কোন্দল কার্যত রাস্তায় নামিয়ে এনেছিলেন ঠাকুরবাড়ির ছেলে। বলেছিলেন, একজন ব্যক্তি রাজ্য বিজেপিকে কুক্ষিগত করতে চাইছেন। তা হতে দেবেন না।

নতুন কমিটি নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরে বিদ্রোহের আঁচ গনগনে। তার মধ্যেই এদিন বনগাঁয় বনভোজনে মিলিত হলেন বিক্ষুব্ধ শিবিরের একাধিক নেতা। বনগাঁর নহাটায় একটি পিকনিকের আয়োজন করেছেন শান্তনু ঠাকুর। সেখানে গিয়েছেন সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদার, রিতেশ তিওয়ারিরা। .

প্রসঙ্গ উল্লেখ্য, শনিবার কলকাতায় বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বৈঠক করেছেন শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা শান্তনু রবিবার ঠাকুরনগরে বৈঠক করেছেন মতুয়া বিধায়ক ও অন্য নেতাদের নিয়ে। সোমবার আয়োজন হল চড়ুইভাতির।

কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা থেকেও রাজ্য বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ নেতারা এসেছেন বনগাঁর নহাটায়। সেখানেই পিকনিকের আয়োজন হয়েছে । তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, পিকনিকে নেই বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার। তিনি রাজ্য পার্টি অফিসে বসে জানিয়ে দিয়েছিলেন, “আমিও বিধায়ক, কিন্তু আমি শান্তনু ঠাকুরদের সঙ্গে নেই।”

এ প্রসঙ্গে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত ছোটগল্পের চড়ুইভাতি। সামাজিক একটা অনুষ্ঠান, এর মধ্যে রাজনীতি নেই। পরিচিত লোকজন মিলে, আমাদের এখানকার যাঁরা কোর কর্মী ছিলেন, তাঁদের নিয়ে বসা। এটা সংঘবদ্ধতা। তাঁঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার চেষ্টা। বহু কর্মী এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে পাত পেড়ে বসে খাওয়া।” তবে এই পিকনিকের পিছনে কি কোনও ইঙ্গিত রয়েছে? বিজেপির বর্যীয়ান নেতা সাফ বললেন, “একটা তো ইঙ্গিত রয়েইছে। সেটা হল কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা। দূরে না থাকা।”

আগের দিন শান্তনু বলেছিলেন, এ ভাবে কমিটি গঠনে ৯০ শতাংশ বদল মানা যায় না। নতুন যাঁরা এসেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে এটা করানো হয়েছে। একজন সংগঠনের দখল নেবেন বলে। শান্তনু এও বলেছিলেন, এই লড়াইয়ে দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী সবাই তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন।

এখন প্রশ্ন, এই একজন কে? কার বিরুদ্ধে এই ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছিলেন ঠাকুর বাড়ির ছেলে?
শান্তনু নাম নেননি। অনেকের মতে, নতুন সংগঠন সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেই শান্তনুদের ক্ষোভ। নাম না করে তাঁর অপসারণও দাবি করেছিলেন শান্তনু।

গতকাল থেকে আবার দেখা যাচ্ছে, বনগাঁ লোকালের কামরায় পোস্টার পড়েছে, ‘পিকে-র টিমের দালাল অমিতাভ চক্রবর্তী হঠাও, বিজেপি বাঁচাও।’ সোমবার এই পোস্টার ঝুলতে দেখা গিয়েছে বিজেপির রাজ্য দফতরের অদূরেও। সব মিলিয়ে বাংলা বিজেপি যে আড়াআড়ি বিভাজিত, তা স্পষ্ট।

নতুন কমিটিতে জায়গা না পাওয়া রীতেশ , সায়ন্তনরা, প্রথম থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। অন্য দিকে জেলা সভাপতিদের নামের তালিকা প্রকাশের পরে সাংগঠনিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ করে প্রতিবাদে শামিল হন পাঁচ মতুয়া বিধায়কও। সেই ক্ষোভের সুরকে আরও মজবুত করে দলের একাধিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু। তাঁর সব ক্ষোভই রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে ঘিরে।

যদিও প্রকাশ্যেই নাম না করে অমিতাভের দিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার তির ছুঁড়েছেন শান্তনু। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন জয়প্রকাশ,রীতেশ,সায়ন্তনদের মতো পরিচিত মুখেরা।

এদিকে, মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের ওপর নির্ভর করে লোকসভা নির্বাচনে যে ফল দেখেছিল পদ্ম শিবির। কিন্তু নতুন রাজ্য ও জেলা কমিটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জায়গা না দেওয়ায় ভীষণভাবে বিরক্ত শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নিজের ক্ষোভের কথা জানাতেও প্রস্তুত। তবে এখনও পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।

অন্য দিকে, অমিতাভার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পোস্টার পড়েছে শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে,ব্যানার দেওয়া হয়েছে মুরলীধর সেন লেনেও।এমনকি ট্রেনের কামরাতেও৷ সেই ক্ষোভ বিক্ষোভের রাজনীতির মধ্যেই সোমবারের পিকনিক প্রতিবাদ নতুন মাত্রা যোগ হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ এদিনের এই পিকনিক যে কেবল একটা সাধারণ চড়ুইভাতি নন, তা ভালই আঁচ করতে পারছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বরাও। তবে এই চড়ুইভাতি ও তার নির্যাসকে পদ্মশিবির কীভাবে দেখে, সেটাই দেখার।

Previous articleDilip Ghosh on CAA:রাজ্য বিজেপি-র ঝগড়ায় নিরুত্তাপ দিল্লি,বাংলায় সিএএ দাবি প্রসঙ্গে শান্তনুদের বার্তা দিলীপ ঘোষের
Next articleAbu Dhabi Drone Attack: আবু ধাবি বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here