পার্থ সারথিনন্দী,বনগাঁ: বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু কে বলবে তিনি বৃদ্ধ? এখনও সাবলীল সাইকেলে। তিনি আর কেউ নন। এবারের বনগাঁর ৩নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। তরুণ তুর্কীদের টেক্কা দিয়ে নিজেই সাইকেল চালিয়ে করছেন দেদার ভোটের প্রচার।
বনগাঁ পুরসভার ২২ টি আসনের জন্য ভোটের মাঠে নেমেছেন বিজেপি, তৃণমূল, সিপিআইএম এবং কংগ্রেসের প্রার্থীরা। তাঁদের মধ্যে একদিকে যেমন তরুণ রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন ৭০-এর উপরের বৃদ্ধ। তবে কেউ কাউকে লড়াইয়ের এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। এই বছর লড়াইয়ে তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রবীণ বিজেপি প্রার্থী মধু মন্ডল। বয়েসে প্রবীণ হলেও নিয়মিত প্রচার করে চলছেন। নিজের কাজের ভরসা বাইসাইকেলে ৷
পোড় খাওয়া এই বিজেপি নেতাকে এবার দল শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করেছে। এর আগে তিনি ২০০০ সালে পুরসভার সদস্য হয়েছেন। পরবর্তীতেও লড়াইয়ে ছিলেন। কিন্তু হেরে যান।
শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এই প্রবীণ বিজেপি প্রার্থী জোরকদমে প্রচারে নেমেছেন। নিজেই নিজের দলের ফ্লেক্স পতাকা লাগাচ্ছেন, আবার বাড়ি-বাড়ি প্রচার করছেন। এরই মাঝে নিজের কাজে কখনো স্টেশন রোডে আবার কখনো এসডিও অফিসে যেতে হচ্ছে। ভরসা কিন্তু সেই সাইকেল। কে বলবে বয়স হয়েছে তাঁর? এত কিছুর পরও বোঝা দায়! বয়সের ভার তাঁকে এতটুকু ঝোঁকাতে পারেনি। যথেষ্ট সাবলীল ভাবেই শহরের সর্বত্র দুপায়া সাইকেলে ঘুরে বেরাচ্ছেন তিনি।
এই বিজেপি প্রার্থী মধু মন্ডল জানালেন, “হ্যাঁ! আমিই সবচেয়ে বয়স্ক তবে কোনও সমস্যা নেই। রোজই মানুষের বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছি। মানুষের সাড়া পাচ্ছি। সারা বছর মানুষের পাশে থাকি। আস্থা ও বিশ্বাস আছে জিতব। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, এই ওয়ার্ডে কংগ্রেস তৃণমূল যেভাবে মানুষকে ডেকে ডেকে মাছ, মাংস খাওয়াচ্ছে এবং শাড়ি ,পাজ্ঞাবীর সঙ্গে রাতের অন্ধকারে নগদ টাকা দিচ্ছে তা দেখে সেই সব মানুষের মনেই পাল্টা প্রশ্ন জেগেছে তাঁদের ভোট কী তবে বিক্রি হয়ে গেল নাকি তাঁরা সবাই স্থানীয় ভিক্ষারী! এর জবাব আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী দেবেন ৩নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন ভোটারেরা৷”
ওই একই ওয়ার্ড অর্থাৎ ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছেন তৃণমূল নেতা গোপাল শেঠ ও সিপিআইএম প্রার্থী উৎপল কুমার মন্ডল এবং কংগ্রেস প্রার্থী মলয় আঢ্য৷
সিপিআইএম প্রার্থী উৎপল কুমার মন্ডল বলেন, কংগ্রেস ও তৃণমূল প্রার্থীরা যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতে এলাকার মানুষকে পিকনিকের নামে খাওয়াচ্ছেন, তাতে সাধারণ মানুষের আত্মসম্মান বোধ কোথাও যেন ধাক্কা খাচ্ছে বা আত্মসম্মানটা থাকছে না এবং সেই সঙ্গে ভোটাধিকারের পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে ভোট টাকে কিনতে চায় ৷ বেক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করছে৷ মানুষ এর বিরুদ্ধে ভোটের বাক্সে জবাব দেবে৷
কংগ্রেস প্রার্থী মলয় আঢ্য জানান, এই ওয়ার্ডে বেশির ভাগ মানুষ আমাদের আত্মীয় সজন এবং প্রচুর বন্ধু রয়েছে৷ তাঁদের সঙ্গে প্রচারের ফাঁকে একটু খাওয়া দাওয়া করছি এতে অসুবিধা কোথায়৷ তাছাড়া আমিতো বিরোধিদের কেউ প্রচারে ফাঁকে আমাদের পিকনিকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷
তৃণমূল প্রার্থী গোপাল শেঠ বলেন, আমি ভক্ত মানুষ এই ওয়ার্ডে প্রচুর মতুয়া ভক্ত এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ডাকে যাই তারা আমাকে তাঁদের পাশে বাসিয়ে নিজের সন্তানের মতো ভালবেসে খাওয়ান৷ আমার অর্থ নেই যে পিকনিক করব৷
এত পিকনিকের আয়োজন, ভোট প্রচারের ধূমের মধ্যে বিরোধীদের কাছে কড়া চ্যালেঞ্জ প্রবীণ এই ৭০ বছরের মধু বাবু এখনও তৎপর। তবে মানুষ এই প্রবীণের পাশে এবার কতটা থাকে সেইটাই দেখার।