দেশের সময়: বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে দল ভাঙানোর খেলায় নেমেছিল বিজেপি। তৃণমূল ছেড়ে বহু নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরে। তৃণমূল এমনভাবে ভাঙতে শুরু করেছিল, রীতিমতো গেল গেল রব উঠে গিয়েছিল। কিন্তু এতকিছুর পরও রাজ্যে ক্ষমতা দখল অধরা থেকে যায় পদ্ম শিবিরের কাছে।
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তৃণমূল কংগ্রেস। এর পর বিজেপিতে থেকে লাভ নেই বুঝে তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া নেতা-কর্মীদের অনেকেই ফের পুরনো দলে ফিরে আসেন। এমনকী আগে থেকেই যাঁরা বিজেপিতে ছিলেন, তাঁরাও তৃণমূলে ভিড়তে শুরু করে দেন। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা দমে যায় বিজেপি। কিন্তু এখন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম।
দুর্নীতি ও পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে ইতিমধ্যেই জেল হেফাজতে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা, মন্ত্রী। কথায় কথায় তৃণমূল নেতাদের তলব করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি, সিবিআইয়ের আতশ কাচের নিচে রয়েছেন বেশকিছু আমলাও। ফলে কিছুটা হলেও চাপে তৃণমূল শিবির। তার পর দলের বিভিন্ন নেতা মুখ ফসকে নানা সময় নানা মন্তব্য করছেন, যা আরও অস্বস্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে শাসকদলকে।
প্রাক্তন আমলা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার সর্বশেষ হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন। তৃণমূলের একটা অংশ পুরোপুরি পচে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁকে নিয়ে এখন দল রীতিমতো অস্বস্তিতে। তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা তো বলেই দিয়েছেন, জহরবাবুর মন্তব্য নিয়ে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে বসা উচিত। তাঁকে অবিলম্বে পদত্যাগ করা দরকার। দলে থেকে এ ধরনের কথা তিনি বলেন কী করে, এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে ফের যাতে তৃণমূলকে দুর্বল করা যায়, সেজন্য দল ভাঙানোর খেলাতেই নামতে চলেছে বিজেপি। বিভিন্ন দল থেকে নেতা-কর্মীদের ভাঙিয়ে আনার যে কৌশল, তাতে গতকালই সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন বিজেপির এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল। গেরুয়া শিবিরের চিন্তন বৈঠক চলছে রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজে। তিনদিনের ওই শিবিরে যোগ দিয়েছেন বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। তাঁদের ক্লাস নিচ্ছেন বনসল।
মঙ্গলবার সেশন চলার সময় তিনি জানিয়ে দেন, বিভিন্ন দল থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের সম্মান দিয়ে গ্রহণ করতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন, আবার দল ভাঙানোর খেলা শুরু করা হোক। প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা ভোটের আগে অমিত শাহ এসে বলেছিলেন, যেভাবেই হোক দল বড় করতে হবে। তার পরই বঙ্গ বিজেপি দল ভাঙানোর খেলায় নেমে পড়ে।
বনসলের বক্তব্যের পর সেই খেলা আবার শুরু হবে বলে মনে করছে বিভিন্ন দল। যদিও এতে বিজেপি শিবিরে ফের কোন্দল দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলেরই অনেকে। কারণ, বিধানসভা ভোটের আগেও বিজেপিতে আদি-নব্য সঙ্ঘাত বড় আকার নিয়েছিল। দলের আদিদের বাদ রেখে নব্যদের অনেককেই বিধানসভা ভোটে টিকিট দেওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আছড়ে পড়েছিল ক্ষোভ। সেই ক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বকে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন।
ফলে এখন থেকে দল ভাঙানোর খেলা শুরু করলে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দেবেন, তাঁদের প্রায় সবাই পঞ্চায়েতের টিকিট প্রত্যাশী হবেন। ফলে এটা নিয়েই বিজেপিতে দ্বন্দ্ব বাড়তে পারে। বনসলও সেটা আঁচ করেছেন। আর তাই তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ করারও বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। কথায় কথায় নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করা চলবে না। বিজেপিকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন চুম্বক, সবাই আকৃষ্ট হন। সব দল ছেড়ে এখানে আসতে চান। এটা করতেই হবে।