Biswajeet Das (Tmc) বাগদা-র বিজেপি বিধায়ক হলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি ! এবার কি স্বমহিমায় ফিরবে শঙ্কর আঢ্য? জল্পনা তুঙ্গে

0
1256

দেশেরসময়, বনগাঁ: মনে পড়ে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রানি রাসমণির তুলনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বাগদার বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস।বিশ্বজিতের একটি ভিডিয়ো বার্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।সেই ভিডিয়োর সত্যতা দেশের সময় যাচাই না করলেও সেটা যে তাঁরই বক্তব্য তা অস্বীকার করেননি বিশ্বজিৎ।

গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা আসন থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। 

তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে বনগাঁর বিশ্বজিৎ সেই শিবিরের সঙ্গেই ছিলেন। তার আগে ছিলেন কংগ্রেসে। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন। 

বিজেপির এই জয়ী বিধায়ক সম্প্রতি ইডি হেফাজতে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নেন পরবর্তীতে। বিশ্বজিতের পুরনো দল তৃণমূলই। ঘাসফুলের টিকিটে দু’বার বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু দলের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে চলে গিয়েছিলেন বিজেপিতে। একটা সময়ে তিনি মুকুল ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে দলের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতানৈক্য হতেই মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যান। দিল্লিতে গিয়ে যোগদান করেন। 

সোমবার তৃণমূলের সাংগঠনিক যে রদবদল হয়েছে, তাতে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন সেই বিশ্বজিৎ।

২০১১ সালে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিধানসভা ভোটে দলীয় টিকিট দেন। প্রথম বারেই বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন বিশ্বজিৎ। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটেও একই আসনে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন। মমতার সঙ্গে বরাবর সুসম্পর্ক থাকলেও একটা সময়ে তিনি মুকুল ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে দলের সঙ্গে কিছু বিষয়ে মতানৈক্য হতেই মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যান। দিল্লিতে গিয়ে যোগদান করেন। রাজ্যে ফেরেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বাজেট অধিবেশনের সময় বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে বিশ্বজিৎ প্রণাম করতেই সতর্ক হয়ে যায় বিজেপি। তাঁকে ডেকে মুকুল ও কৈলাস বিজয়বর্গীয় (রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক) বৈঠক করেন। এর পরে বিজেপি প্রার্থীও করে তাঁকে। জেতার পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে বৈঠক করতেও দেখা যায়। যদিও সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি-র টিকিটে জিতেছি। আমি বিজেপি-র বিধায়ক। বিজেপিতেই আছি।” যদিও তার অনেক আগেই তৃণমূলে ফেরেন বিশ্বজিৎ।

উল্লেখ্য, জুলাইমাসের প্রথম সপ্তাহের এক রবিবার বনগাঁ বিএস ক্লাবের মাঠে তৃণমূলের কর্মী সম্মেলন ও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন সেখানে। বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস সহ উপস্থিত ছিলেন বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়, সহ-সভাপতি তরুণ ঘোষ, বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য, একাধিক প্রাক্তন কাউন্সিলর-সহ আরও অনেকে। সেই সম্মেলনেই মমতাকে রানি রাসমণির সঙ্গে তুলনা করেন বাগদার বিধায়ক। ওই সভায় বিশ্বজিৎবাবু মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, বিশ্বজিৎ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ, গরিব মানুষেত্র জন্য যে কাজ করেছেন তার জন্য আগামী ১০০ বছর রানি রাসমণির মতো মানুষের মনের মণিকোঠায় থেকে যাবেন।

সেই বক্তব্য নিয়ে বিরোধীরা বিতর্কও তৈরি করলেও তৃণমূল অবশ্য সেই সময়ে বিশ্বজিতের ওই মন্তব্যে একরকম চুপই ছিল৷

এদিকে তৃণমূল নেতার নামে পোস্টার পড়তেই প্রকাশ্যে এসেছে গোষ্ঠী কোন্দল। আসন্ন উপনির্বাচনে বনগাঁ ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শঙ্কর আঢ্যকে চায় বনগাঁ। এই পোস্টার ভাইরাল হতেই শুরু হয় গোষ্ঠী কোন্দল।

পুরনির্বাচন হওয়ার পরপরই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী কাউন্সিলর দিলীপ দাস মারা যান। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী ২১ শে অগাস্ট উপ নির্বাচনের দিন ঘোষিত হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একপ্রকার ‘বিতাড়িত’ শঙ্কর আঢ্য বনগাঁর প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তাঁকে আবার কেন প্রার্থী করা হবে? এই প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ওই ওয়ার্ডের মুখপাত্র তথা কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ বিশ্বাস।

সাম্প্রতিক অতীতে শংকর আঢ্যকে গত পৌর নির্বাচনে ভোট প্রার্থী না করায় তারপর থেকে দলের বিরুদ্ধে শঙ্কর আঢ্য প্রার্থী দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও, এক্ষেত্রে শঙ্কর আঢ্যর বার্তা, মানুষ যদি চায়, দল যদি চায় তিনি ভোটে লড়তে প্রস্তুত। শঙ্করবাবু বলেন, ‘ওই ওয়ার্ডের নাগরিকরা সর্বসম্মত ভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন দলের উচ্চ স্তরের নেতৃত্বর কাছে পাঠানোর জন্য। তাই সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই গ্রহণ করা হবে।’

তবে শঙ্কর আঢ্য ভোটের লড়াই করছেন কি না তা নিয়ে তেমন কোনও মাথা ব্যাথা নেই কংগ্রেস-বিজেপির।শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হলে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেই দাবি রয়েছে বিরোধী দলগুলি। তবে তৃণমূল কংগ্রেস যদি শঙ্কর আঢ্যকে প্রার্থী না করে সেক্ষেত্রে সে তিনি নির্দলে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘যিনি মিটিং করে এই কথা বলছেন তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত। দলের বিরুদ্ধে তিনি নির্দল প্রার্থী দিয়েছিলেন সেই কারণে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। শঙ্কর আঢ্য হচ্ছেন রাত্রিবেলা কংগ্রেস ও সকাল বেলা জোড়া পাতা করা লোক।’

সম্প্রতি বনগাঁ শহরে তৃণমূলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশ্বজিৎ দাস এবং শঙ্কর আঢ্যকে এক সঙ্গে একই মঞ্চে বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছে৷ এমন কি এবছর ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের সমাবেশে বনগাঁ লোকাল ট্রেনের একই কামরায় পাশাপাশি বসে গিয়েছিলেন দুজনে৷ আর আজ সোমবার তৃণমূলের সাংগঠনিক যে রদবদল হয়েছে, তাতে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন সেই  বিশ্বজিৎ। স্বাভাবিক ভাবেই শঙ্করের স্বমহিমায় ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে জল্পনা তুঙ্গে৷

Previous articleMamata Banerjee: উত্তর ২৪ পরগনা ভেঙে নতুন জেলার নাম ইছামতী! বাংলায় আরও ৭ নতুন জেলা ‘ঘোষণা মমতার
Next articleEast Bengal Day: ইস্টবেঙ্গল দিবসে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ইনভেস্টরই!’ভারত গৌরব’ সম্মান পেলেন লিয়েন্ডার, ঝুলন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here