Binoy Majumder: কবি বিনয় মজুমদারের জন্মদিনে তাঁরই একটি কবিতা ব্যাখ্যা করলেন ড. কল্যাণ চক্রবর্তী

0
741

ভালোবাসা দিতে পারি – বিনয় মজুমদার

ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?
লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝ’রে যায়-
হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা, স্মৃতি, অবশিষ্ট কিছুই থাকে না।
এ আমার অভিজ্ঞতা। পারাবতগুলি জ্যোৎস্নায়
কখনো ওড়ে না; তবু ভালোবাসা দিতে পারি আমি।
শাশ্বত, সহজতম এই দান-শুধু অঙ্কুরের
উদ্গমে বাধা না দেওয়া, নিষ্পেষিত অনালোকে রেখে
ফ্যাকাশে হলুদবর্ণ না ক’রে শ্যামল হতে দেওয়া।
এতই সহজ তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালবেসে ফেলি।
গ্রহণে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচূড়া থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রের মত চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চ’লে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি।

ব্যাখ্যা :
‘ফিরে এসো চাকা’-র ৬৫ সংখ্যক কবিতা এটি।
‘লীলাময়ী করপুটে’ অর্থাৎ বিচিত্র লীলাময় জীবনযাত্রায় জীবনের সবকিছুই ঝরে যায়। জীবনকে তিনি এক রহস্যময়ী নারী বলেছেন। তার হাতে ধীরে ধীরে জীবনের সবকিছুই ম্লান হয়ে যায়। দেখুন তথ্যচিত্র:

কবি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই বলছেন এবং তার স্পষ্ট স্বীকারোক্তি এই কবিতা।

এই দান অর্থাৎ কবির যে ভালোবাসা, যেটা উনি দিতে পারেন, সেটা কী রকম? শাশ্বত, সহজতম। তিনি তাঁর প্রেমিকাকে কোনোদিন কিছুতেই বাধা দেন নি। এই ভালোবাসা অঙ্কুরে বিনষ্ট হতে দেয় না। বুকে পাথর চেপেও চেষ্টা করেন তিনি। সহজ, শ্বাশত ভালোবাসা জীবনপথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। আমি যদি কাউকে ভালোবেসে নিজেই ‘ইঁট’ হয়ে তাকে চাপা দিয়ে নিষ্পেষিত করি, অনালোকিত করি, তবে সেখানেই তার অঙ্কুরোদগমের বিনষ্টি ঘটবে। ইঁটেল-চাপা ঘাসের মত ফ্যাকাসে হলুদবর্ণ হবে তার জৌলুষ।


এ রকমই সহজ তার ভালোবাসা, তবুও মৃত্যুর পাথর তিনি হাতে ধরে রাখেন। তিনি ভালোবাসতে পারেন কিন্তু ভালোবাসা যাবে না। এটাই তার অভিজ্ঞতা। লোকে ভালোবাসার সুযোগ নেয়। কবি একদম কনফিডেন্ট। কবির শ্বাশত ভালোবাসা নেবার জন্য পৃথিবী প্রস্তুত নয়।
সে জন্যই হাতে মৃত্যুকে গুঁজে রেখেছেন তিনি। ভালোবাসাকে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। মৃত্যু বলতে ভালোবাসার সমাপ্তি বুঝিয়েছেন।

মোনালিসা এক পুরনো ছবি; সে স্থির, অপরিবর্তনীয়। তুমিও মোনালিসার হাসি নিয়ে চলে যাবে, কোনোদিনই ফিরে আসবে না।

তাহলে কবির কী হবে?
নিজেই যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে থাকবেন কবি।
তাই তিনি পরিষ্কার করে বলে দিলেন, আমি ভালোবাসাকে পরিণতি টেনে দিয়েছি। পৃথিবীবাসী আমার ভালোবাসা নেবার উপযুক্ত নয়।

এখানে একটা গভীরতর অভিমান কাজ করছে। সারা পৃথিবীর প্রতি অভিমান। একজন ব্যক্তি থেকে সবার মধ্যেই সেই অভিমান কবিতার মধ্যে দিয়ে সঞ্চারিত হয়ে যায়, সঞ্চারিত হয় এই বোধ। সবার ক্ষেত্রেই বলেছেন তিনি। তাঁর গায়ত্রী যেন ‘তুমি’ থেকে ‘তোমরা’ হয়ে গেছেন।

Previous articleDesher Samay Title Song: শুভঙ্কর ভাস্করের কন্ঠে ” দেশের সময়” এর টাইটেল সং রিলিজ : দেখুন ভিডিও
Next articleRanna Puja Rituals 2023: অরন্ধন বা রান্নাপুজোর গল্প জানতে বাগবাজারের শীল বাড়িতে হাজির দেশের সময়-এর প্রতিনিধি সৃজিতা সঙ্গে দেবাঙ্গনা: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here