মিলন খামারিয়া: গত ৬ ই মার্চ, ২০২৩-এ দোল পূর্ণিমার আগের দিন দেড়শো জন ছাত্রী ও কুড়িজন শিক্ষিকার একটি দল এলেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গবেষণা কেন্দ্রে। নদীয়ার শিকারপুর থেকে তাঁরা এসেছিলেন শিক্ষামূলক ভ্রমণে। দিনভর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। ছিল প্রকৃতি পাঠের অনবদ্য আসর।
ছাত্রীদের বলা হল ফলের গুণাবলীর কথা, ফলের উপকারিতার কথা, দৈনিক কতটা পরিমাণ ফল গ্রহণ করতে হবে — তার কথা, ফল চাষের প্রয়োজনীয়তা কথা, কেন পথের ধারে এবং সমাজভিত্তিক বনসৃজনের অঙ্গ হিসাবে ফলের গাছ লাগাতে হবে — তার কথা ৷
ছাত্রীরা চিনলেন গৌণফল বা হারিয়ে যেতে বসা ফলের গাছগুলিকে। চোখের সামনে দেখলেন ফলসা, আঁশফল, গাব, আমড়া, জলপাই, বৈঁচি, কেন্দু, ভেলা, কুসুম, আমলকি, হরিতকী, বহেড়া, মহুয়া, করমচা, নোনা প্রভৃতি গাছ। চল্লিশটি প্রজাতির অসংখ্য গাছের তলায় তাদের আনন্দ ক্রীড়া চললো দিনভর — যেন খেলা খেলা পড়া। গাছের তলা থেকে কুড়িয়ে নিলেন ত্রিফলা, অর্থাৎ আমলকি-হরিতকী-বহেড়ার ফল। লটকনের বীজের রঙ দেখে তারা অভিভূত হলেন। বীজ তুলে পরীক্ষা করে নিলেন সবাই — কেমন তার ভেষজ রঙ, কেমন সুন্দর করে রাঙানো যায় দোলের দিন! নানান গাছের পাতা হাতে নিয়ে চিনলেন তারা, নানান ফলের গুঁড়ি, ডালপালা, বিটপ-বিস্তারের পাঠ। শুনলেন উন্নত জাতের কথা।
ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে স্কুল তাদের যথাযোগ্য এডুকেশনাল ট্যুরে নিয়ে লগেলে, কেবল আনন্দ লাভই হয় না, তা হয়ে ওঠে প্রকৃতি-পাঠের আসর। শিকারপুর বিবেকানন্দ গার্লস হাইস্কুলের ক্লাস এইট থেকে টেন পর্যন্ত এই ছাত্রীদল সেই উদ্দেশ্যই এসেছিলেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গবেষণা কেন্দ্রে। ছাত্রীরা শিখলেন প্রকৃতির কোলে কীভাবে ফুল ফোটে, ফল ভরে ওঠে। গাছ, পাতা, ফুল-ফলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় কীভাবে!
এই ফল গবেষণা কেন্দ্র কৃষি এবং পরিবেশগত প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সারা রাজ্যে নজর কেড়েছে। সবার চাহিদা এই বাগানে আসা। এখান থেকে কিছু শিক্ষালাভ। চারা সংগ্রহ করা। এখানকার বিজ্ঞানীরা কেবল গবেষণাই করেন না। তারা ছাত্রও পড়ান গভীর মনোযোগ দিয়ে। পাশাপাশি নিয়মিত কৃষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন। উদ্যান রচয়িতা, বাগান বিলাসীদের জন্য এই গবেষণা কেন্দ্রের জ্ঞানের দরজা সবসময় খোলা। এই খোলা হাওয়ায় বসন্ত উৎসবের প্রাক-পর্বে তাই এলেন ছাত্রী-শিক্ষিকার দল৷ প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী গার্গী বসু ধর মহাশয়া সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, যেভাবে তাদের আপ্যায়িত করেছেন গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। ফার্মে তৈরি লটকনের আবীর দিয়ে স্বাগত জানানো হয় সকলকে। ভেষজ রঙের ফল ব্যবহারের জন্য সকলকে দেওয়া হয়৷
ডি. এল রায় সভাকক্ষে তাদের স্বাগত জানান আধিকারিক প্রফেসর দিলীপ কুমার মিশ্র। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী এবং অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউরি। তাদের সকলকে পুরো কেন্দ্রটি ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সমস্ত গাছ চিনিয়ে দেওয়া হয়৷
অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র জানান, আগামী দিনেও এখানে আসার সুযোগ থাকছে বিবিধ স্কুলের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে অনুমতি নিতে হবে৷ অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী ফল কেন্দ্রিক সংস্কৃতির কথা উপস্থাপন করে বিজ্ঞানের কথা দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করিয়ে দেন ছাত্রীদের মনে। বিবিধ ফলের কবিতা আবৃত্তি করে চিনিয়ে দেন গাছপালা। লোকসংস্কৃতির আলোকে বিজ্ঞান প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে অধ্যাপক চক্রবর্তীর বক্তব্যে। ছাত্রীরা সকলেই এখানে এসে আনন্দ পেয়েছেন, জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারা।