BGBS 2025: বাংলায় শিল্প টানতে নয়া ব্যবস্থা এ মাসেই , বাণিজ্য মঞ্চে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

0
2
হিয়া রায় , দেশের সময়

বঙ্গ বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলনে চাঁদের হাট বসেছে। মঞ্চে উপস্থিত দেশের তাবড় শিল্পপতিরা। একের পর এক বিনিয়োগের কথা আলোচিত হচ্ছে। প্রায় সকলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, প্রশংসা করছেন, বাণিজ্যের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি রাজ্যে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। পাশাপাশিই তাঁরা জানাচ্ছেন এ রাজ্যে বিনিয়োগের কথা, আশ্বাস দিচ্ছেন আগামী দিনে আরও ভাল বাণিজ্যেরও।

শিল্পায়নের জন্য অনেক রাজ্যই সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেম চালু করেছে। যাতে লগ্নিকারীদের সরকারের দরজায় দরজায় ঘুরতে না হয়। বুধবার বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের (BGBS 2025) তারও এক কদম এগিয়ে পা ফেলতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee।

মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দল, সঞ্জীব গোয়েঙ্কায় মায় শিল্পপতির চাঁদের হাটে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য স্তরে শিল্প সমন্বয় কমিটি (State level Industry Synergy Committee) গঠন করা হবে। সেই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন মুখ্য সচিব।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করার পরই এদিন প্রেক্ষাগৃহে করতালির ঢেউ ওঠে। তা থামলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই কমিটির মানে শুধু সিঙ্গল উইন্ডো নয়। এর কাজ হবে বৃহত্তর। এই কমিটি সমন্বয় করবে সব দফতরের সঙ্গে। এবং শিল্পবান্ধব পরিস্থিতি আরও মজবুত করবে। দমকল, পরিবেশ, ভূ রাজস্ব, অর্থ, আবাসন, শিল্প সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এই কমিটি দেখবে যে বিনিয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিতে যেন সময় না লাগে। প্রতি চোদ্দ দিনে একবার করে এই কমিটি বৈঠক করবে। কোথাও কোনও বাধা থাকলে তা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে।

বাণিজ্য এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন শিল্পপতিরা। সবার আগে তা শুরু করেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তিনি বলেন, বড় কথা হল, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সব সমস্যার কথা বলা যায়। অপেক্ষা করতে হয় না। তাতে সঙ্গত করেন করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মহারাজ বলেন, দিদিকে সব সময়েই পাওয়া যায়। আমি অবাক হয়ে যাই, এক ব্যস্ততার মাঝে কোনও মেসেজ করলেই উনি উত্তর দেন। 

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এদিন বোঝাতে চান, এই পারসোনাল টাচ তথা যোগাযোগ তো থাকবেই। বিনিয়োগ ও লগ্নি টানতে যে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন তার পত্তন এবার তিনি করছেন। সমন্বয় কমিটির কাজই হবে শিল্প মহলের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝে পদক্ষেপ করা।

মুকেশ আম্বানি (রিলায়েন্স)

“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিডারশিপে বাংলার বাণিজ্য একটা অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০১৬ সালে প্রথম বিজিবিএসের সময়ে রিলায়েন্সের বিনিয়োগ এখানে ২০০০ কোটি টাকার কম ছিল, সেখান থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে চলেছে আগামিদিনে। ডিজিটাল পরিকাঠামো, জিও অপারেশন, এআই সেক্টর তৈরি হবে কলকাতায়। বাংলায় এখনও পর্যন্ত জিও স্টোর রয়েছে ১৩০০। আরও ৪০০ হবে। স্বদেশ নামে একটি স্টোর খোলা হবে, জামদানি, মুর্শিদাবাদি সিল্ক, বিষ্ণুপুরী বালুচরী, মসলিন, কাঁথা স্টিচের কারুকাজ ও শিল্পকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া হবে। সোনার বাংলার জন্য সোলার বাংলা তৈরিই লক্ষ্য রিলায়েন্সের।”

সঞ্জীব গোয়েঙ্কা (আরপিএসজি):

“আমি এই শহরেই জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি। এটা আমারও বাংলা। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সব বিষয়কেই খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তিনি তৎক্ষণাৎ সেই সমস্যার সমাধান করেন। আমরা এই রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবো। মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও এনার্জি সেক্টরে এই বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে।”

হর্ষবর্ধন নেওটিয়া (অম্বুজা গ্রুপ) :

“এ রাজ্যে ব্যবসা করতে গেলে সরকারের যে সহযোগিতা পাওয়া যায়, তা অভুতপূর্ব। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর আমলা মহল খুবই সাপোর্টিভ। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৫টা হাসপাতাল রয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, গরুমারা ফরেস্ট, দীঘা ও শান্তিনিকেতনে আমাদের নতুন প্রজেক্ট তৈরি হচ্ছে, যেখানে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। আগামি ৫-৬ বছরে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছি।”

সৌরভ গাঙ্গুলি :

“বঙ্গ বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন রাজ্যের ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়েছে। রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ১০০ শতাংশ নিয়োগ করেছেন। আমিও এই রাজ্যে একটা ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করছি। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের আমলা মহলের সম্পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি। এই সুযোগে আমি আপনাদের কাছে রাজ্যের পক্ষ থেকে আবেদন করব, এখানে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করুন। শুধু ক্রিকেট নয়, বাংলা ফুটবলেরও ভক্ত। ফলে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুন।”

সজ্জন জিন্দাল (জেএসডব্লিউ):

“দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলা সব সময়ই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জে‌এসডব্লু এখানে বিনিয়োগ করেছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, এখানে ব্যবসা চালিয়ে যেতে একদিনের শ্রমদিবসও নষ্ট হয়নি। ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শালবনিতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এছাড়া প্রায় ২০০০ একর জমির উপর একটা শিল্পতালুক তৈরিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাজারেরও বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাকরির জায়গা তৈরি হতে চলেছে এই বিনিয়োগের মাধ্যমে।”

সঞ্জীব পুরী (আইটিসি)

“বাংলার অনেক কিছু আছে। ম্যানপাওয়ার থেকে শুরু করে ট্যালেন্ট, হার্ড ওয়ার্কিং ইয়ং জেনারেশন– সব আছে। আমরা (আইটিসি) এই রাজ্যে অনেক ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছি। প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে আমাদের এই রাজ্যে। আমরা এখানে গ্লোবাল সেক্টর ফর ইন্টেলিজেন্স তথা কৃত্রিম মেধার হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে আমাদের বিনিয়োগের এই ধারা আগামী দিনেও বজায় থাকবে।”

নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী দিনে শিল্প সংস্থার জন্য কিছু ইনসেনটিভ স্কিমের ব্যবস্থাও করতে পারে সরকার। যাতে শ্রম নিবিড় শিল্প কারখানা স্থানে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হন। কারণ, বাংলার জনসংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। তাই শ্রম নিবিড় শিল্প স্থাপন অতিশয় জরুরি।

Previous articleKolkata Airporকলকাতা বিমানবন্দরে হঠাৎ আগুন!বেঙ্গল সামিটে যোগ দিতে আসছেন শিল্পপতিরা , তীব্র আতঙ্কে যাত্রীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here