দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বুধবারই ঘোষণা করেছিলেন, শিক্ষার সর্বস্তরেই সরকার আরও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশ্যা করে। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে সরকারের প্রত্যাশা খানিক পূরণ হল। প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে মৌ চুক্তি বা সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
শিক্ষায় বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধিতে এবার বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেখানে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে শিক্ষার পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের পরিকল্পনার কথা জানায়।
রাজ্য সরকারের তরফে মূলত শিক্ষায় কারিগরি ব্যবস্থার প্রসারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আধুনিক ক্লাসরুম থেকে শুরু করে শিক্ষকদের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য প্রস্তুত করতে পরিকাঠামো তৈরিতে সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলিকে পাশে চায়।
বিজিবিসে এ পর্যন্ত শিক্ষায় নতুন বিনিয়োগের ঘোষণা করে জেআইএস গ্রুপ। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল ও ম্যানেজমেন্ট শিক্ষায় অগ্রণী বেসরকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা রয়েছে। তারা কল্যাণীতে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রসার ঘটাতে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করবে।
গড়িয়ায় অবস্থিত সারনিম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বিনিয়োগ করবে ১০০ কোটি টাকা। ওই অর্থ ব্যয় হবে পরিকাঠামোর উন্নতিতে। স্বামী বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আধুনিক কোর্স চালু এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর প্রসারে ব্যয় করবে ৪৫ কোটি টাকা।
টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ তাদের সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে সেন্টার অফ এক্সেলেনন্স গড়ে তুলতে ব্যয় করবে ১৮০ কোটি টাকা। আর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট তাদের নিউটাউনের ক্যাম্পাসের প্রসারে ব্যয় করবে ২৫০ কোটি টাকা।
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে একদিকে যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে রাজ্যে একের পর এক বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করছেন শিল্পপতিরা, পাশাপাশি এই সম্মেলনের অন্তর্গত একটি ‘ইন্টারেক্টিভ সেশন’-এ রাজ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করলেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির (এসএনইউ) আচার্য সত্যম রায়চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২ বছরের মধ্যে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ রাজ্যে পাঁচটি বড় প্রকল্প রূপায়িত করবে। চুঁচুড়ায় গড়ে উঠবে নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অফ স্পোর্টস অ্যান্ড অঁত্রেপ্রেনোশিপ, উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাণিপুরে গড়ে উঠবে অত্যাধুনিক মেডিক্যাল কলেজ।
শিলিগুড়ির কাছে সুকনায় গড়ে তোলা হবে স্কিল ইউনিভার্সিটি। একই সঙ্গে শিলিগুড়ি শহরেই গড়ে উঠবে টেকনো গ্লোবাল স্কুল। সেই সঙ্গে সল্টলেকের রোটারি-টেকনো গ্লোবাল হাসপাতালকে ৭০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে।’ শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতিতে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে এরাজ্যের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি যথেষ্টই উৎসাহিত বলে জানিয়েছেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
সায়েন্স সিটিতে আয়োজিত ‘শিক্ষাক্ষেত্রে অতিমারি পরবর্তী পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই আলোচনায় উপস্থিত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তুলে ধরেন শিক্ষার উন্নতিতে রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কীভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি এগিয়ে আসছে।
ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হওয়া কন্যাশ্রী, তরুণের স্বপ্ন-সহ একাধিক প্রকল্পগুলি কীভাবে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। গোটা রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে উদ্যোগী, এদিন সেই বিষয়টিও তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রশংসা করে অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর বারবারা উইকহ্যাম বলেন, ‘ভারতবর্ষে কলকাতা শিক্ষাক্ষেত্রে সবসময় অগ্রণী।’
এদিন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও আগামীদিনে তাদের বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করে। সেইসঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে উৎকর্ষ বাড়ানোর লক্ষ্যে এরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে অন্য রাজ্য এবং বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এদিন ‘মৌ’ চুক্তি সই করা হয়।
স্বাক্ষর করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাশ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিবাজিপ্রতিম বসু। একইসঙ্গে জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই করেন এসএনইউ-র উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়।
চুক্তি সই করে রাজ্যের অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও। অনুষ্ঠানের মডারেটর ছিলেন অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষ নেওটিয়া। ছিলেন রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব মণীশ জৈন এবং অন্যান্য অতিথিরা।
বুধবারই শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বর্তমান সরকারের বিগত ১১ বছরে স্কুলে ১৫ হাজার কোটি এবং উচ্চ শিক্ষায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে।