লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্প্রতি জাতীয় স্তরে বিজেপি-র (BJP) সাংগঠনিক রদবদল করা হয়েছে। আর এবার বঙ্গ বিজেপিতেও সাংগঠনিক রদবদল (Organizational Change in Bengal BJP) করা হল। বদল জেলা সংগঠনেও। পাল্টে দেওয়া হল বিজেপির ১১ জন জেলা সভাপতিকে।
রিয়া দাস, বনগাঁ : সংগঠন ঢেলে সাজাচ্ছে বিজেপি। প্রতি লোকসভা কেন্দ্র পিছু একটু সাংগঠনিক জেলা। আর জেলা সভাপতি হলেন ছ’জন বিধায়ক। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, জেলাসভাপতিদের একটি নতুন তালিকা এসেছে। দক্ষিণ কলকাতার জন্য যাদবপুর সাংগঠনিক জেলা তৈরি করা হয়েছে। সল্টলেক সাংগঠনিক জেলাকে বিলোপ করা হয়েছে। তার বদলে বারাসাত সাংগঠনিক জেলার আওতায় সল্টলেক ও দক্ষিণ দমদমকে রাখা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আলিপুরদুয়ারে পঞ্চায়েত ভোটের খারাপ ফলাফলের পর বর্তমানে দায়িত্ব দেওয়া হল মনোজ টিজ্ঞাকে। এছাড়াও দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি বদল করা হয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য। কোচবিহারের দায়িত্ব পেলেন মনোজ টিজ্ঞা।
বনগাঁয় শান্তনু ঠাকুর ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।রবিবারই রাজ্যের ৩০ টি সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি-র নাম ঘোষণা করেছে বিজেপির রাজ্য কমিটি। আর সেই তালিকায় সংযোজিত হয়েছে বনগাঁর দেবদাস মন্ডলের নাম।
এতদিন তিনি বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি, তিনি বনগাঁ পুরসভার বিজেপির একজন কাউন্সিলরও বটে। দেখুন ভিডিও
রাজ্য কমিটির কাছ থেকে খবর পাওয়ার পরেই বিজেপির বনগাঁ সংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি হিসেবে দেবদাস মন্ডলকে বরণ করে নেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। এদিন শান্তনু ঠাকুরের বাড়িতেই জেলার নতুন সভাপতিকে বরণ করে নেন শান্তনু ঠাকুর সহ দলের অন্যান্য বিধায়ক এবং নেতারা।
সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পরই দেবদাস মন্ডল জানান, ‘সমস্তরকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে দলের সমস্ত কর্মীদেরকে নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে আমরা লড়াই করার প্রস্তুতি নেব।’ দেবদাস মন্ডল আরও বলেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ভোট লুট করে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে মানুষ তার জবাব দেবে। বিপুল ভোটে জয়ী হবে বিজেপি। কেন্দ্রে আবার ক্ষমতায় আসবে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি।’
পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল রাজ্য জুড়ে যে দুর্নীতি, লুটতরাজ চালিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে তার ফল ভোগ করতে হবে তৃণমূলকে। জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে এমনই ভবিষ্যৎবাণী করলেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা নবনিযুক্ত সভাপতি দেবদাস মন্ডল।
আগাগোড়াই শান্তনু ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দেবদাস মন্ডল। আর তাঁকেই এবার দল সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ায় খুশি শান্তনু ঠাকুর নিজেই। এ ব্যাপারে এদিন তিনি বলেন, দেবদাস মন্ডলের নেতৃত্বে সংগঠন আরো মজবুত হবে। তার নেতৃত্বে দলের সমস্তস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন রূপে কাজ করবে বিজেপি।
বদল হয়েছে বারাসত,ব্যারাকপুরের জেলা সভাপতি। পরিবর্তন হয়েছে মথুরাপুরের জেলাসভাপতিও। তমলুকে জেলাসভাপতি পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া কাঁথিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ সুদাম পণ্ডিতকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষ্ণপুর ও আসানসোলেও জেলা সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে পুরনো যে সকল সভাপতিরা ভাল লড়াই দিয়েছেন তাঁদেরকে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি একই রয়েছেন।
কী কী পরিবর্তন হল ?
রাজ্যে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে দু’টি পরিবর্তন করা হয়েছে। একটি হল, এতদিন বিজেপির সাংগঠনির জেলার সংখ্যা ছিল ৪১টি। ২টি সাংগঠনিক জেলা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখন মোট সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা হল ৪৩। মুর্শিদাবাদে এতদিন পর্যন্ত ২টি সাংগঠনিক জেলা ছিল- উত্তর মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ। সেটাকে ভেঙে তিনটি করা হয়েছে। যোগ করা হল- জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা। নতুন এই জেলার সভাপতি হয়েছেন ধনঞ্জয় ঘোষ। আর একটি সাংগঠনিক জেলা বাড়ানো হয়েছে। সেটি হচ্ছে- যাদবপুর সাংগঠনিক জেলা। নতুন এই জেলার সভাপতি হয়েছেন- কুন্তল চৌধুরী।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এতদিন এই যে ৪১টি সাংগঠনিক জেলা ছিল, তার মধ্যে ১১ জন জেলা সভাপতির পদে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, মোট ১১ জন জেলা সভাপতিকে পাল্টানো হল।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিধায়কদের মধ্যে মাত্র ২ জনকে এতদিন পর্যন্ত জেলা সভাপতির পদে রাখা হয়েছিল। সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে সাত করা হল। অর্থাৎ, আরও পাঁচ জন বিধায়ককে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হলেন বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা। তাপসী মণ্ডল, অমরনাথ শাখা, অরূপ কুমার দাস ও বিমান ঘোষকে দেওয়া হল জেলা সভাপতির দায়িত্ব।
সম্প্রতি বাংলা থেকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে ৷ তাঁদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমিত শাহ ৷ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, বাংলায় বিজেপি-র রোডম্যাপ তৈরির জন্য পর পর দু’দিন বৈঠক হয়।
তার পর পরই জাতীয় স্তরে সাংগঠনিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নেয় গেরুয়া শিবির। প্রকাশ করা হয় নতুন তালিকা। তাতে বাদ পড়েন দিলীপ ঘোষ ৷ দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি ছিলেন তিনি। সেই পদ খোয়ান। সংশ্লিষ্ট তালিকায় বাংলা থেকে একমাত্র নাম ছিল অনুপম হাজরার। দলের সচিব হিসাবে নাম ছিল তাঁর। যদিও দিলীপ এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেন, “আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে লড়বেন যাঁরা, তাঁদের নাম রাখা হয়নি তালিকায়, যাতে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে মনোনিবেশ করতে পারেন তাঁরা।”
বস্তুত, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি। কয়েকদিন পরই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা আসছেন বঙ্গ সফরে। তার আগেই লোকসভা কেন্দ্রিক জেলা ও নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা বঙ্গ বিজেপির।