Bangladesh ধৈর্য ধরুন, না পারলে দোষ দেবেন’ -বাংলাদেশে হিন্দুরক্ষায় বড় আশ্বাস ইউনূসের

0
160
জাকির হোসেন, ঢাকা

জাকির হোসেন, ঢাকা: বাংলাদেশের নব্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ধর্ম বা জাতি দিয়ে নিজেদের বিভক্ত না করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা এক মানুষ, এক অধিকার৷ এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না৷ আমাদেরকে একটু সাহায্য করেন আপনারা৷ ধৈর্য ধরেন৷ করতে পারলাম কি পারলাম না সেটা বিচার করবেন৷ যদি না পারি তখন আমাদেরকে দোষ দেবেন৷” তিনি বলেন, “দেশের সব মানুষের জন্য এক আইন, এক সংবিধান। বর্তমানে বিভক্ত হয়ে নয় বরং সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সংকটের সমাধান করতে হবে। দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেটা হবে এক পরিবারের মতো৷”

১৩ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির দর্শনে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন৷ ইউনূস বলেন, ”আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশে থাকব এটাই নিশ্চিত করতে চাই। এটা নিয়ে যেন আর কোনো বিবাদ না হয়। আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাঙ্ক্ষা সেখানে আমরা হিন্দু-মুসলমান হিসেবে নয়, বরং মানুষ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক। সব সমস্যার গোড়া হল আমাদের যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করেছি সবগুলো পঁচে গিয়েছে। এ কারণেই গোলমাল হচ্ছে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলো ঠিক করতে হবে।”

ইউনূস বলেন, “একটা বড় রকমের বিভেদের আওয়াজ শুনছি। বিমানবন্দরে নেমেই যেটা বলেছিলাম, এমন বাংলাদেশ আমরা করতে চাচ্ছি; যেখানে আমরা এক পরিবার। এটা হলো মূল জিনিস। পরিবারের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা, বিভেদ করা, এটার কোনও প্রশ্নই আসে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এটা নিয়ে যেন আর কোনও বাদ-বিবাদ না হয়।” তিনি আরও বলেন, ”ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলে কে ন্যায়বিচার পাবে না আমাকে বলেন? আমি কি দেখছি এটা কোন ধর্মের, কোন জাতের? এটা কি আইনে বলা আছে যে এই সম্প্রদায় ওখানে যাবে, আরেক সম্প্রদায় অন্যখানে যাবে? আইন হচ্ছে একটা। কার সাধ্য আছে সেখানে বিভেদ করা! এটা হতে পারে না। আমরা সেখান থেকে ঠিক করতে চাই। এটা এমন রোগ যা সারতে আমাদের মূলে যেতে হবে।”

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, “এটা (সাম্প্রদায়িকতা) একটি রোগ, এর মূলে যেতে হবে। আপনারা যদি বলেন, আমাদের সংখ্যালঘু হিসেবে এটা বলছে, এটা হলো মূল সমস্যা থেকে আপনারা দূরে সরে যাচ্ছেন। আমাদের বলতে হবে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটা পেলে আমাদের বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যেগুলো আছে, আমরা নতুন কিছু বলছি না। আমাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।” তিনি বলেন, “আপনারা যদি টেনে নিয়ে আসেন আমি অমুক, আমি তমুক; আবার পুরনো খেলায় চলে গেলেন। আপনাদের শিকার করার জন্য যারা বসে আছে, তারা এগুলো শিকার করে।

নিজেদের সংখ্যালঘু, অমুক-তমুক বলে শ্রেণিবিভাগ না করে আপনারা বলবেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমার সাংবিধানিক অধিকার এই, আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন৷” গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনি শুনবেন না গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাসে আমরা হিন্দু পাড়া বলে বাদ দিয়ে মুসলমান পাড়ায় গেছি। একসঙ্গে গেছি, একভাবে গেছি। আমাদের মূল কাজটায় যেতে হবে। আপনাদের অনুরোধ, আপনারা বিভিন্ন খোপের মধ্যে চলে যাইয়েন না। এই খোপ হলেই মারামারি-কাটাকাটি লেগে যাবে। একত্রে আসেন, সবার জন্য এক আইন।” এসময় ড. ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ এম খালিদ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ। বৈঠক প্রসঙ্গে বাসুদেব ধর বলেন, “আমরা ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তার সঙ্গে আমাদের খুবই আন্তরিক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে।”

এদিকে সংখ্যালঘুদের উপর যাতে হামলা না হয় তা নিয়ে আগেই কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। এবার তিনি নিজেই গেলেন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেই সঙ্গেই সংখ্যালঘুদের জন্য হেল্পলাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে ফোন করে নালিশ জানানো যেতে পারে। এদিকে বাংলাদেশের ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গোটা পৃথিবীর কাছেই অত্যন্ত পরিচিত নাম। সেই প্রাচীন মন্দিরে এদিন যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই স্থানটিকে হিন্দুদের অন্যতম শাক্তপীঠ বলে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডাতে বা যে কোনও ধর্মীয় স্থানে হামলা হলে +৮৮০১৭৬৬-৮৪৩৮০৯ এই নম্বরে ফোন করে জানানো যাবে। এই নম্বরে ফোন করে বা এসএমএস করেও বিষয়টি জানানো যাবে৷

এদিকে গত ৮ আগস্ট ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির। সংগঠনের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছিলেন, তাঁরা যেন সাহস করে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলেন। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “খুব পরিষ্কার করে বলছি, বাংলাদেশের কোনও জায়গায় জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যারা কাজ করে, যদি কোথাও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে কোনও অপকর্ম করছে তাহলে সে একজন দুর্বৃত্ত। কথা দিচ্ছি আমরা কোনও দুর্বৃত্তকে কোনো ধরনের প্রশয় দেবোই না।” সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট থেকে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দিরে পালাক্রমে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। এই পাহারায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্ররা থেকে শুরু করে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেয় যা প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছে৷

নেটমাধ্যমে মানুষ লিখছেন, “এর মাধ্যমে সবার ওপরে মানুষ সত্য ও সবাই আমরা এক আছি তার প্রমাণ হল৷” ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার রায়সহ নেতারা জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার রায়, ঢাকেশ্বরী মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক দীপেন চ্যাটার্জি, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল ও জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকসহ আরও অনেকে।

Previous articleKolkata Doctor Rape-Murder Caseআরজিকর কান্ডের প্রতিবাদে আন্দলনের ঢেউ এবার বনগাঁ হাসপাতালে, চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে হবে, বার্তা স্বাস্থ্যসচিবের: দেখুন ভিডিও
Next article‘সীমান্তে পিঠ দেখাবেন না’ -বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here