দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই বাংলাই এখন আন্দোলিত।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে টানাপড়েনের আবহেই ঢাকায় ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে মিস্রীর বিমান। তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের বিদেশ দফতরের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) ইশরাত জাহান।
ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গিয়েছে,বেলা ১১টায় অতিথি নিবাস পদ্মা ভবনে সে দেশের বিদেশসচিব মহম্মদ জসীমউদ্দিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসছেন তিনি। সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার পর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন মিস্রী। সূচি অনুযায়ী, তার পর বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে তাঁর। তাঁর এই সংক্ষিপ্ত সফর রাতেই শেষ হবে এবং তিনি দিল্লি ফিরে যাবেন।
নয়াদিল্লির কূটনীতিকদের দাবি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, উপমহাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে অগ্রাধিকার দেবে সাউথ ব্লক। কারণ, নয়াদিল্লি মনে করে বাংলাদেশে যত দ্রুত শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরে আসবে ততই উপ মহাদেশে তথা পড়শি দুই দেশের জন্য মঙ্গলজনক।
আবার ঢাকার কূটনীতিকদের দাবি, বৈঠকে দুই দেশের সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হলেও বাংলাদেশ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোর দেবে—ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি, ভারতীয় গণমাধ্যমের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার প্রতিরোধ, এবং ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা নিরসন।
গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তার পর এই প্রথম দিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা নিয়ে কৌতুহল জন্ম নিয়েছে দু’দেশেই। আগামী দিনে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন চাইছে বাংলাদেশ?
রবিবারই তার একটা আভাস দিয়েছেন সে দেশের তদারকি সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ। তাঁর মতে, ৫ অগস্ট (হাসিনার পতন)-এর পর থেকে দু’দেশের সম্পর্কে গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। তা মেনে নিয়েই দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
হাসিনার পতনের পর সে দেশে অঘোষিত প্রধান রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে এসেছে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। হাসিনার ভারতে সাময়িক আশ্রয় নেওয়া নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তাদের মনে। রবিবার ভারতীয় দূতাবাসে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতেও সে কথা জানিয়েছে তারা। তদারকি সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টারাও এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন। তার উপরে, হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর একের পর এক হামলার অভিযোগ উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে আদালতে মামলা করেছে ইউনূসের তদারকি সরকার। যদিও তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম পুলিশ। সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলিতে ভারত-বাংলাদেশ উভয় প্রান্তেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব কম কি না, তা-ই এখন দেখার।