দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন-সহ ৮টি জাতীয় দিবস আগেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলোর নামও বদলে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গভবন অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় মুজিবের ছবি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ফিল্ম সিটি থেকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম। আগামী বছর থেকে আর পাঠ্যবইয়েও থাকছে না ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুজিবের রচনা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’। পাঠ্যক্রমে যুক্ত হবে আরবি ভাষা। আর মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপগুলোয় বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ থেকে মুজিব-হাসিনার নাম-স্মৃতি সব কিছু মুছে ফেলতেই কি এই সিদ্ধান্ত?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যিনি কাণ্ডারী। অগস্ট বিপ্লবে সেই মুজিবকেই ফাসিস্ত আখ্যা দিয়ে তাঁর মূর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধীরা। এবার যেন চিরতরে মুছে ফেলার পালা শুরু হল। বাংলাদেশে শিশু পাঠ্য বই থেকে বাদ যাচ্ছে ‘মুজিব মানে মুক্তি’ কবিতাটি। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে এটি বিরল খবর ।
চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের উপর নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’ বাদ দিয়ে রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ সংযোজন করা হচ্ছে।প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যবইয়ে বড়সড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে বেশ কিছু অধ্যায় ।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যবইয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে চলেছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বাংলা ও ইংরেজি বই থেকে সাতটি গদ্য ও পদ্য বাদ দেওয়া হচ্ছে এবং নতুন করে আটটি গদ্য ও পদ্য যুক্ত হচ্ছে।
বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বেশ কিছু গদ্য ও পদ্য সরানো হচ্ছে। তৃতীয় শ্রেণির একটি বই থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাদ দিয়ে সেখানে জাতীয় চার নেতার জীবনী সংযোজন করা হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা ইংরেজি গদ্যও বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালে প্রণীত পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল করে দেয়। এরপর পুরনো শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে বই ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে পিঁপড়া ও পায়রার গল্প যুক্ত করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও ৭ মার্চের ভাষণের অংশ বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অধ্যায় শুরু হচ্ছে ২৫ মার্চের ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে।
দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কাজী নজরুল ইসলামের ওপর লেখা ‘দুখু মিয়ার জীবন’ যুক্ত হয়েছে, বাদ পড়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ‘সোনার ছেলে’। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’ যোগ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা ‘সেই সাহসী ছেলে’ অধ্যায়টি সরিয়ে জাতীয় চার নেতার জীবনী রাখা হয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণির বইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘মুজিব মানে মুক্তি’ বাদ দিয়ে রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ সংযোজন করা হয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বইগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অতিবন্দনা ও অতিকথনের পরিবর্তে সহজবোধ্য ও বয়স উপযোগী লেখা সংযোজন করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে এই নতুন বই পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও বছরের শুরুতেই সবার হাতে সব বই পৌঁছবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সিলেবাসে বদল যে অনিবার্য হয়ে উঠেছে তার দেওয়াল লিখন এখন স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। বাধ্য হন দেশ ছাড়তে। এর পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার কয়েকদিনের মধ্যেই আসে ১৫ আগস্ট। এতদিন এই শোক দিবস পালনের জন্য সরকারি ছুটি থাকত বাংলাদেশে। কিন্তু হাসিনা গদিচ্যুত হতেই এবছর সেই ছুটি বাতিল করে দেয় ইউনুস সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনা-সহ বঙ্গবন্ধু মুজিবের স্মৃতি মুছতে তৎপর বিএনপি, জামাত-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। আর সেই মতোই পদক্ষেপ করছে ইউনুস সরকার। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের নানা প্রান্তে হাসিনা ও মুজিবের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুজিবের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি।