Bangladesh Crisis: বাংলাদেশ গিয়ে বেলঘরিয়ার সায়নের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দেশে ফিরে জানাল সংবাদ মাধ্যমকে, এদিকে সোমবার থেকে ফের বন্ধ হবে পেট্রাপোল? দু’পারেই দেশে ফেরার তাড়া

0
69

দেশের সময় : ‘মার ওকে, মার-মার! ও ইন্ডিয়ান হিন্দু…।’ যেমন বলা তেমনই কাজ। অভিযোগ, বেলঘরিয়ার বাসিন্দা সায়ন ঘোষকে বাংলাদেশে গিয়ে চরম নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছে একদল দুষ্কৃতীর হাতে। পাথর দিয়ে মেরে মাথা ফাটানো হয়েছে সায়নের। কোনও মতে প্রাণটুকু নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। রবিবার সংবাদ মাধ্যমের সায়নের  তিনি অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

সায়ন জানান তিনি বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকায়। যেদিন ফেরার কথা ছিল সেদিনই বিপদ। সায়নের কথায় , “আমি নভেম্বরের ২৩ তারিখ গিয়েছিলাম বাংলাদেশের ঢাকায়। সেখানে আমার এক বন্ধুর বাড়ি। আমার কাছে পাসপোর্ট ছিল। সম্পূর্ণ বৈধভাবে গিয়েছিলাম সেখানে। ২৬ তারিখ বাড়ি ফেরার কথা। রাতের ট্রেন ছিল। সেই কারণে বন্ধু বলল চল সকালবেলা ঘুরে আসি। সাড়ে আটটার দিকে বের হই আমরা।”

বেলঘরিয়ার বাসিন্দা নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে প্রায় কেঁদেই ফেললেন। বললেন, “সেই সময় বাংলাদেশি মুসলিম যুবক মিলে আমায় ঘেরাও করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমায় বলছে তোকে তো কখনও দেখিনি। তোর ধর্ম কী? আমি বললাম আমি ইন্ডিয়ান। হিন্দু। তারপর  পকেট থেকে টাকা পয়সা ফোন ছিনতাই করে। আমি বাধা দিতে গেলে আমার মাথা পাথর মেরে ফাটিয়ে দেয়। চোখে ছুরি চালায়। গভীরভাবে আহত হই।”

সায়ন এও জানান, ওরা যখন মারছিল তখন চিৎকার করে বলছিল, ‘ইন্ডিয়ান হিন্দু। মার একে মার। ওরা এই সব বলে মারছিল।’ যুবকের এও অভিযোগ, সেই ঘটনার পর কেউ একবারও তাঁদের বাঁচাতে আসেনি। যে বন্ধুর বাড়ি তিনি গিয়েছেন তিনিই শুধু তাঁর পাশে ছিলেন। এমনকী এখন নাকি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকেও হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সায়নের কথায়, “এর আগেও তিন চারবার বাংলাদেশ গিয়েছি। হাসিনার সরকারের সময় অতিথি আপ্যায়ন করতেন সেখানকার লোকজন। কিন্তু এখন…।” সায়ন এও বলেছেন, যেহেতু আমি ভারতীয়-হিন্দু, কেন আমার বন্ধুর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে আমায় সেই কারণে ওদের এত ভয়।” সায়নের কথায় ওপার বাংলার পরিস্থিতি উদ্বেকজনক ।

অশান্ত বাংলাদেশ। তার প্রভাব পড়ল আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্যে। গত কয়েকদিনে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। চিকিৎসা বা অন্যান্য প্রয়োজনে যাঁরা দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন, তাঁদের মধ্যে দেশে ফেরার তাড়া বেড়ে গিয়েছে। 
২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারপর বিভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঘটনার পরম্পরায় দু’দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে। তার প্রভাব পড়ল ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে।

উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। গত কয়েকদিনে সেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তলানিতে ঠেকেছে। পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন পাঁচশোর ওপর পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে যায়। ওপার থেকে দু’শো ট্রাক এপারেও আসে। পেট্রাপলের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত তিন চার দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি রপ্তানি ট্রাক যাতায়াত অনেক কমে গিয়েছে। 

বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তেও উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছে। প্রতিদিন চারশো পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে যেত। সেখান থেকেও দেড়শো থেকে দু’শো ট্রাক এপারে আসত। বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে তা একেবারেই কমে গিয়েছে। ‌দু’দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

শুধু পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যই নয়, বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা বা অন্য প্রয়োজনে ওপার থেকে আসা মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বেড়েছে। ‌ দেশে ফেরার জন্য তাঁরা পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্তে ভিড় করছেন। আবার বাংলাদেশ যাঁরা গিয়েছিলেন, সেই সব ভারতীয় নাগরিকরাও দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। 

প্রসঙ্গত ,শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে অগস্ট মাসে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয় বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে। সেই সময়ে তিনদিন বন্ধ ছিল সীমান্ত বন্দর। নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় ফের বন্ধ হবে বন্দর? এই আশঙ্কায় পেট্রাপোল সীমান্তে এ দেশে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের লম্বা লাইন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে রেখেই ওপারে যাওয়ার হিড়িক বাংলাদেশি নাগরিকদের।

বাংলাদেশে সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পরেই পরিস্থিতি বদলায়। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ফের উত্তাল বাংলাদেশ। গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভারতে আসা কয়েক হাজার বাংলাদেশি নাগরিকরা রাতারাতি ফিরতে চাইছেন নিজেদের দেশে। যে কোনও মুহূর্তে সিল করে দেওয়া হতে পারে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, এমন আতঙ্ক ছড়াতেই ভিসার মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় কাজ, চিকিৎসা এমনকী ঘুরতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকরাও ফেরার তোড়জোড় করছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ছাড়া ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান চললেও সে দেশে অস্বাভাবিক জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে থাকা পরিবার-পরিজনদের পাশেই থাকতে চাইছেন ভারতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকরা।

যদিও পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এখনও তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি বলেই জানালেন পেট্রাপোল বন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় এখনও কোনও প্রভাব পড়েনি। তবে যাত্রীদের মধ্যে চঞ্চলতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। অনেকেই জানতে চাইছেন সোমবার আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে কি না। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে বহু বাংলাদেশি নাগরিক এই দু’দিনে দেশে ফিরছেন। বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যে সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, ইন্দিরা গান্ধীর সমর্থন, ভারতীয় সেনার বলিদান। এসবের বিনিময়ে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু, এখন একেবারে যেন অন্য ছবি। যেভাবে লাগাতার ভারত বিরোধী মন্তব্য ধেয়ে আসছে, যেভাবে ভারতের উপর আক্রমণ নেমে আসছে তা দেখে অনেকেই বলছেন অকৃতজ্ঞভাবে ইতিহাস বদল দেওয়ার কাজ চলছে। গত কয়েক মাসে হিন্দুদের উপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার, ঘরবাড়ি লুটপাট, মারধর, বিনা কারণে ধরা নিয়ে যাওয়া, চাকরি থেকে জোর করে ছাঁটাইয়ের মতো অভিযোগ সামনে এসেছে।

অথচ এখন বাংলাদেশে কমবেশি ২ কোটি হিন্দুর বাস। তাদের একটা বড় অংশের আত্মীয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা বা অসমে থাকেন। যে দেশের স্বাধীনতায় সংখ্যালঘুদের বড় অবদান, এখন তাদেরকেই উত্‍খাতের ছক? অনেকেই আবার তথ্য দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, ভারত না থাকলে একটা দিনও চলবে না বাংলাদেশের। শুভেন্দু অধিকারী তো বলেই দিয়েছেন ফরাক্কা দিয়ে বিদ্যুত্‍ না গেলে ওপার বাংলার বড় অংশে অন্ধকার নেমে আসবে। 

তথ্য বলছে, বাংলাদেশের মোট আমদানির ১৮ শতাংশই আসে ভারত থেকে। বস্ত্রশিল্পের জন্য তুলোর সিংহভাগ যায় ভারত থেকে। ভারত থেকে রফতানি হয় চাল, গম, পেঁয়াজ, মশলা। পেট্রোপণ্য থেকে যন্ত্রাংশ, শিল্পের কাঁচামাল যায় ভারত থেকেই। তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের জামাত সমর্থকদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন।

ভারত যদি, চাল-ডাল বন্ধ করে দেয়, বাংলাদেশের মানুষ খাবে কী? ভারত জল বন্ধ করে দিলে কি হবে, বিদ্যুতের লাইন কেটে দিলে কী হবে! বাংলাদেশে জামাকাপড় ছাড়া, আর কিছুরই তো কারখানা নেই। সবই তো আমদানি করতে হয়। চিন, পাকিস্তান দেবে তো?

এই প্রেক্ষাপটে কড়া অবস্থান নেওয়ার কথা বলছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।

বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে কড়া বিবৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। আরএসএসের বিবৃতিতে অবিলম্বে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। চিন্ময় প্রভুর গ্রেফাতারি অন্যায়। ওপার বাংলায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এপারের সংখ্যালঘুরা।

গত কয়েকদিন ধরে ঢাকার উপর চাপ বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লিও। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনা আইনত প্রধানমন্ত্রী।

সূত্রের খবর, একই কথা বলছেন আওয়ামী লিগের অনেক নেতাও। এ কথা বলেই বর্তমানে তাঁরা জমি তৈরির চেষ্টা করছেন। এমতাবস্থায়, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে বিষয়টি পৌঁছালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ আরও পুড়বে বাংলাদেশের। 

Previous articleDesher Samay ePaper দেশের সময় ই পেপার
Next articleBangladesh Unrest  বাংলাদেশের এমন ‘প্রতিদানে’ চোখে জল মুক্তিযোদ্ধার ! আজ দুপুরে পেট্রাপোল সীমান্তে শুভেন্দু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here