জাকির হোসেন, ঢাকা: পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমাতে চায় ভারত। ভারতীয় রেলওয়ে ট্রেন নিয়ে বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে প্রবেশ করে নীলফামারীর চিলাহাটি বন্দর হয়ে বের হতে চায়। এজন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর অনুমতিও চেয়েছে ভারত। বর্তমানে প্রস্তাবটি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারত সরকারের আলোচনা হচ্ছে৷
বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেন চালানোর প্রস্তাবের আগে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের ইন্টারচেঞ্জ (সীমান্তে ট্রেনের পরিচয় পরিবর্তনের জায়গা) ঘুরে দেখেছে ভারতের প্রতিনিধিদল। এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশের দর্শনা দিয়ে ভারতের ট্রেনের প্রবেশ এবং চিলাহাটি দিয়ে বের হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতের প্রস্তাবের সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেছেন, “বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।” বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, “চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে ঈশ্বরদী, সান্তাহার ও পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত রেলপথটি ব্যবহার করতে চায় ভারত। আপাতত পণ্য পরিবহনের জন্য রুটটি ব্যবহার করার কথা বলেছে তারা। এক্ষেত্রে নেপাল ও ভুটানকে যুক্ত করতে চায় বাংলাদেশ।” বিষয়টি বাংলাদেশ আন্তঃমন্ত্রক সভায় সিদ্ধান্ত হলে পরবর্তীতে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আরও বলেন, “এক্ষেত্রে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত হবে। তাছাড়া প্রতিদিন একটি থেকে দুটি মালবাহী গাড়ি আসে। সেক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হবে না। দুই দেশই যদি লাভবান হয় এটা থেকে, তবে দুই দেশের জন্যই তা মঙ্গলকর হবে৷”
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতকে এই রেল ট্রানজিট দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বাংলাদেশ সরকার। ট্রানজিট শুল্ক থেকে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপনে নয়াদিল্লির কাছে প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী ট্রানজিট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি না হলে ট্রানজিট একসময় টিকবে না। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র, সেহেতু হয়তো বাংলাদেশ সরকার ট্রানজিট দেবে। তবে এক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।”
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, “দক্ষতার উন্নয়ন করা গেলে যেকোনো চুক্তি থেকে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব৷”
প্রসঙ্গত, বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলে। তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী। বর্তমান পদ্ধতিতে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। বাংলাদেশি লোকোমাস্টার (চালক) তা চালিয়ে আনেন। বাংলাদেশ হতে ভারতে ফিরে যাওয়ার সময়েও একই রকম নিয়ম অনুসরণ করা হয়।