Bangladesh বাংলাদেশে আজ কোটা মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে , শুনশান পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে গুটি -গুটি পায়ে মানুষ ফিরছেন দু’ বাংলায়

0
98

পার্থ সারথি নন্দী ও সৃজিতা শীল :কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। থানা জ্বলছে। গাড়ি জ্বলছে। পুলিশের গুলি চলছে। সমস্ত শহর ও আধা শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চলছে পুলিশের সংঘর্ষ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গুজব।রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ঘুরছে সেনা ট্যাঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে রবিবারও বাতিল করা হল কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস। শুধু তা-ই নয়, রাজধানী ঢাকা থেকে কোনও ট্রেন চলাচল করছে না বৃহস্পতিবার থেকে। কবে ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে বাংলাদেশে থাকাটা আর নিরাপদ মনে করছেন না ভারত ও নেপালের নাগরিকেরা। শিলিগুড়ির ফুলবাড়ি, কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা ও নদিয়ার গেদে সহ পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মানুষ ফিরছেন। অধিকাংশই ছাত্রছাত্রী।

আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকেও ফিরছেন অনেকে। তবে সরাসরি বাস রাস্তা দিয়ে ফিরতে পারছেন না তাঁরা। গ্রামের গলির রাস্তা দিয়ে ফিরেছেন। বাংলাদেশের লোকজনই টাকার বিনিময়ে শহর এড়িয়ে সীমান্তে ফেরার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি ভারত থেকেও বহু বাংলাদেশী  সড়ক পথে ফিরছেন পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে।

জুলাইয়ের ১৪ তারিখ বাংলাদেশের ঢাকা থেকে তিন দিনের জন্য ভারতে এসেছিলেন সৈয়দ মায়া হাসান । তিনি জানান , বাংলাদেশে এখনও থমথমে পরিস্থিতি । পেট্রাপোল থেকে বেনাপোল হয়ে ঢাকায় ফিরব । কিন্তু রাস্তায় কি পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব বোঝা যাচ্ছে না । ফোনেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যেই বাংলাদেশে পা বাড়াচ্ছেন ।

আরও বাংলাদেশী টুঙ্গীর বাসিন্দা মহঃ সৈফুল ইসলাম ও ফিরবেন সে দেশে । পেট্রাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে দাঁড়িয়ে বলেন, বাবার চিকিৎসার জন্য ওষুধ কিনতে ভারতে এসেছিলাম । বাড়ীতে অসুস্থ বাবা হাঁটুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । আর আমি জীবন হাতে নিয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করছি ।

এদিন পেট্রাপোল -বেনাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ড এ দীর্ঘ ৮ ঘন্টা হুইল চেয়ারে বসে ঢাকা শহরের উত্তরাতে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মাসুদ রানা চৌধুরী । তিনি জানান , ভারতে এসেছিলেন পায়ের চিকিৎসা করাতে । ভারতের  শুল্ক বিভাগে পাসপোর্ট দেখিয়ে কোন ত্রুমে নোম্যান্সল্যান্ডে পৌঁছালেও বাংলাদেশের গেটের কাছে  দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় । মাসুদের কথায় পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ বললেই চলে তাই বাধ্য হয়েই এখানে অপেক্ষা করতে হয়েছিল । পরে বিএসএফ জওয়ানদের সহযোগীতায় একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় নোম্যান্সল্যান্ড পার হতে পারলেও দুঃশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে নিজের দেশের এত টা পথ কিভাবে পেরব ।

অন্যদিকে জুনের ১১ তারিখে বাংলাদেশের ঠাকুরদগাঁওয়ের শালবাড়ি এলাকায় গিয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা বলরামচন্দ্র বর্মন।

এ দিন সীমান্ত পেরিয়ে  শুল্ক দপ্তরের সিঁড়িতে বসে গা এলিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, ‘যা পরিস্থিতি তাতে দেশে ফিরতে পারব বলে মনে হচ্ছিল না।’  ফার্মাসি পড়ছেন লালন ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘কী করব? বন্ধুরা বলছে দেশে ফিরে যেতে। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় লোক চলাচল নেই। কলেজের শিক্ষকেরা আশ্বস্ত করলেও ভয় লাগছিল।’

গোপালগঞ্জ থেকে এদিনই ফিরলেন নেপালের বাসিন্দা অস্মিতা কারকি। তিনি গোপালগঞ্জে পশু চিকিৎসা সংক্রান্ত স্নাতক স্তরের কোর্স করছেন। তাঁদের দলে মোট দশ জন ছাত্রছাত্রী ছিলেন। লোকজনকে টাকা দিয়ে বাইকে চড়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ফেরেন।

এ দিন কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ১৩ জন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে অসম, ভুটান ও মালদ্বীপ-এর তিন জন ছিলেন৷ বাকি ছাত্ররা সকলেই নেপালের বাসিন্দা। তাঁদের একজন আশিস অধিকারী বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র আমরা। অশান্তির মধ্যে কী করে বাড়ি ফিরব, তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলাম আমরা রাস্তায় ছাত্র পরিচয় দিয়ে শনিবার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত পর্যন্ত আসতে পেরেছি আমরা। নিরাপদে সীমান্ত পেরিয়ে এখন নিশ্চিত লাগছে।’

শনিবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ যাওয়ার জন্য রওনা হলেও ফিরে আসতে হয়েছে অসমের বাসিন্দা গোলাম মহম্মদ মহসিনকে। তিনি বলেন, ‘মেয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে পড়ে। চার দিন থেকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশের দিকে রওনা হয়েছিলাম। তবে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে দশ কিলোমিটার যাওয়ার পর কোনও গাড়ি পেলাম না। কেই যেতে রাজি হলো না। বাধ্য হয়ে ফিরে এলাম।’

কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ দিন যাঁরা এপারে এসেছেন তাঁদের অধিকাংশ পড়ুয়া।’ নদিয়ার গেদে সীমান্ত দিয়ে পঞ্চাশ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী এ দিন এপারে ফিরেছেন। অনেকে নিজেদের নাম, পরিচয় বলতে চাননি। তবে বলেছেন আতঙ্কের কথা। অভিজ্ঞতার কথা।

এক ডাক্তারি ছাত্র বলেন, ‘ঢাকায় দফায় দফায় গুলি চলেছে। শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা অনেক ঝুঁকি নিয়ে বেসরকারি বাসে দর্শনা আসি। তারপর শনিবার সকালে রিক্সা করে দর্শনা সীমান্তে এলাম।’ আরেক ছাত্র বলেন, ‘এখনও অনেক ছাত্রছাত্রী বন্দি অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাম্পাসে রয়ে গিয়েছে। তবে বাংলাদেশের অনেকেই আমাদের ফিরে আসতে সাহায্য করেছেন। আমরা বিপদ আঁচ করে ভারতীয় জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে পথ হেঁটেছি। তাতে অসুবিধে হয়নি।’

এপারে ফেরা বাংলাদেশের একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্ধা শেখ বলেন, ‘আমিও আন্দোলনের মধ্যে ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম ছাত্রছাত্রীরা যে যার দক্ষতা দিয়ে সুযোগ পাক। কোটা মুক্ত হোক। পরিস্থিতি বড্ড খারাপ দেখে এপারে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।’ গেদেতে ফিরে মহারাষ্ট্রর আদি বাসিন্দা বাংলাদেশের এক ডাক্তারি ছাত্র বললেন, ‘ঢাকায় যেখানে ছিলাম সেখানে টিয়ার গ্যাসের মুখে পড়েছিলাম। মাঝে মাঝে বোমা পড়ছিল। গুলিও চলছিল। তবে ভারতীয় দূতাবাস থেকে বার বার আমাদের খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তারা সাহায্য না করলে দেশে ফিরতে পারতাম না। ভারতে এসে মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেলাম।’

শুক্রবার রাত বারোটা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছিল বাংলাদেশে। রবিবার বেলা দশটা পর্যন্ত কারফিউ ছিল। সময় বাড়িয়ে দুপুর তিনটে পর্যন্ত কারফিউয়ের ঘোষণা করেছে সরকার। পাশাপাশি রবিবার ও সোমবার গোটা দেশে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। দুইদিন সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে।

শনিবার কারফিউয়ের মাঝেও ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। গতকাল ঢাকায় অন্ততপক্ষে দশজনের মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু।

রবিবার সকাল দশটা থেকে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে কোটা মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা। কোটা সংস্কার নিয়ে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে বাতিলের আবেদন করবে শেখ হাসিনার সরকার।

Previous articleDesher Samay ePaper দেশের সময় ই পেপার
Next articleMamata Banerjee on Bangladesh ওপারের মানুষ বিপদে পড়ে আমাদের দরজায় যদি কড়া নাড়ে, পাশে থাকব: বাংলাদেশ নিয়ে ‘মমতাময়ী’ সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here