দেশের সময়: মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশ। গত একমাসে সেখানে মোটা চালের দাম বেড়েছে অন্তত ১৫ শতাংশ। আটার দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। ফলে নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাথায় হাত। চাল, আটার পাশাপাশি আজ, মঙ্গলবার থেকে বেড়েছে সয়াবিন তেলের দামও। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৭ টাকা করে দাম বেড়েছে। ২০ টাকা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ছিল। ফলে এদিন সাত টাকা দাম বাড়লেও ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েক ধাপে তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের স্বর্ণ মোটা চালের চাহিদাই বেশি। আর এই চালেরই দাম বেড়েছে সবথেকে বেশি। এখন বাংলাদেশের বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। যা গত একমাসের আগের দামের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। সরু ও মাঝারি সরু চালের দামও বেড়েছে। তবে তুলনায় কম। চার থেকে পাঁচ শতাংশ হারে বেড়েছে ওইসব চালের দাম। সরু চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। আর মাঝারি সরু চালের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
গত এক দশকে বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধি কীভাবে হয়েছে, তা দেখলে সত্যিই চমকে উঠতে হয়, বলছেন দেশের সাধারণ মানুষ। তাঁদের কথায়, ২০০৯ সালে ঢাকায় মোটা চালের দাম ছিল কেজি প্রতি ২৩-২৪ টাকা। সরু চাল সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হত।
২০১৪ সালে ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম ছিল ৩৪-৩৫ টাকা। ২০১৯ সালে সেই দাম বেড়ে হয় ৩৮-৪০ টাকা। কিন্তু এখন ৮০ টাকা। ফলে কী হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে, তা সহজেই অনুমেয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি বৃষ্টির কারণে ফলন মার খাওয়ায় ২০১৭ সালে দেশে চালের দাম অনেকটাই চড়া হয়েছিল। সেসময় মোটা চালের দাম প্রায় ৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। তখন চাল আমদানি করতে হয়। কিন্তু পরে স্থানীয় বাজারে চালের দাম কমতে থাকে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় মোটা চালের কেজি ৩০ টাকায় নেমে যায়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফের তা বাড়তে থাকে। দামের সেই বৃদ্ধি আর ঠেকানো যায়নি।
ঢাকার মহম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আড়তে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা পাইকারি। একমাস আগে এই দাম ৪২ টাকা ছিল। জনপ্রিয় মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা করে। আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকায়। মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই চালের দাম বাড়ছে। তার সঙ্গে রয়েছে ট্রাক ভাড়া।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কেজিতে চালের দাম বেড়েছে চার থেকে পাঁচ টাকা।
বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থ বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। আমদানি খরচ কমাতে কমানো হয়েছে কর। ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ২৫ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে চাল আমদানিতে শুল্ক কমলেও মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে আমাদানি করে পোষানো যাচ্ছে না। গত পয়লা জুলাই থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
ভারত থেকে আমদানি করলে জাহাজ ভাড়া সহ দেশের বাজারে সেদ্ধ চালের দাম পড়বে কেজি প্রতি ৩৯ টাকা। থাইল্যান্ড থেকে চাল আনলে সেই দাম দাঁড়াবে ৪৪ টাকা। অবশ্য এই দরের সঙ্গে যুক্ত হবে দেশের কর।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার চাল আমদানিতে আরও কর কমানোর চিন্তাভাবনা করছে। শুল্ক কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন আশ্বাস দিয়েছেন, চালের দাম কমাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করবে।
এদিকে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল বাংলাদেশে। এক ধাক্কায় অনেকটাই।লিটারে দাম বেড়েছে ৭ টাকা।
ফলে এখন থেকে বাংলাদেশে এক লিটার সয়াবিন তেল কিনতে হবে ১৯২ টাকায়। আজ মঙ্গলবার থেকেই নতুন দামে তেল কিনতে হবে দেশের মানুষকে। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
গত ৩ আগস্ট বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছিল মিল মালিকদের সংগঠন। ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে। সেক্ষেত্রে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা দাম হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
যদিও আজ বাংলাদেশের মিল মালিকদের সংগঠন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে সাত টাকা বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের উপর খরচের বোঝা কিছুটা হলেও বাড়ল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।