দেশের সময়: তখন সবে ক্লাস থ্রি। বাবা মারা যান। সাধারণ মধ্যবিত্ত সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েন মা রীনা চ্যাটার্জী। সংসারের হাল ধরতে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বাড়িতেই একটি বুটিক খোলেন। নিজের রোজগারের টাকায় ছেলে মেয়েকে মানুষ করাই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রীনাদেবীর। ছোট থেকেই নাচ পছন্দ ছিল মেয়ে শ্রীলার। মেয়ের শখ দেখে পাশে দাঁড়ান মা। আর মায়ের সমর্থন পেয়েই আনন্দে নেচে ওঠে মেয়ের মন।

বনগাঁর আমলাপাড়া থেকে যে জার্নি শুরু হয়েছিল একদিন, দিনে দিনে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়। এমনকী বাংলার বাইরে। কিন্তু ভালোবেসে একদিন যে নাচ বেছে নিয়েছিলেন শ্রীল, তা যে এমন খ্যাতির মুকুট পরাবে ভাবতে পারেননি শিল্পী নিজেই। আর তাই তো ভুবনেশ্বরের উৎকল মঞ্চে যখন তাঁর হাতে উঠছে ‘গুরু পদ্ম’ পুরস্কার, তখন খুশিতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি শ্রীলা। মঞ্চে ও সামনে দর্শকাসনে অজস্র গুণী মানুষের সামনে ওই পুরস্কার হাতে নিতে গিয়ে শ্রীলার বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল, পুরনো সে দিনের কথা। কত্থক শাস্ত্রীয় নৃত্যেবিশেষ পারদর্শিতার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে শ্রীলাকে।

২৩-২৫ সেপ্টেম্বর কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ওড়িশার ভুবনেশ্বরের উৎকল মঞ্চে আয়োজন করেছিল ‘উর্বশী ২০২২’ নামে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। সেখানেই বিশেষ আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলা। তাঁর অনবদ্য পারফরম্যান্স উপস্থিত অতিথি এবং দর্শকদের মন কেড়ে নেয়। একইসঙ্গে শিল্পীকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করতে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় গুরু পদ্ম পুরস্কার। গ্লোবাল ক্লাসিক মেগা ডান্স ফেস্টিভ্যালের সুর ছিল উচ্চ তারে বাধা।

সেখানে নাচ, গান সহ শিল্পের বিভিন্ন ফর্মে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ৩১ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয় গুরু পদ্ম পুরস্কার। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রসন্নকুমার পাতাসনি। এই পুরস্কারের জন্য তাঁকে বিবেচিত করায় গর্বিত শিল্পী শ্রীলা। বললেন, আজ যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। তবে এই পুরস্কার, সম্মান দ্বায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দিল। আরও ভাল কাজ করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে এই পুরস্কার। আগেই গায়ক কুমার শানুর সঙ্গে তাঁর একটি এলবাম প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম ‘নাচব আমি গাইবে তুমি’।

কথায় কথায় আরও একটি সুখবর জানাতে ভুললেন না। বললেন, দীপাবলিতে তাঁর দ্বিতীয় এলবাম প্রকাশিত হতে চলেছে নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গে। ওই এলবামে গেয়েছেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। শ্রীলার কথায়, মা না থাকলে উত্তরণের সিঁড়িটাই খুঁজে পেতাম না। আর এখন বিরাটি কলেজের অধ্যাপক স্বামী সুমিত মুখার্জীর সাহায্য ও অনুপ্রেরণা আমাকে ভালো কাজ করার ইচ্ছে জাগায় সবসময়। তাঁর নাচের স্কুল ‘সৃষ্টি’ কে নিয়েও অনেক ভাবনা রয়েছে শ্রীলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here