দেশের সময়: বনগাঁয় উপ নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই ফের সরব হল বিরোধীরা। এই ভোটে জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলল তারা। এর বিরুদ্ধে দলগতভাবে বিক্ষোভ, পথসভার পাশাপাশি এবার মামলার পথে বামেরা।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী ধৃতিমান পালের অভিযোগ, বুথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে যে কন্ট্রোল ইউনিট সিল করা হয়, সেখানে তাঁদের প্রতিনিধির সিল জাল করা হয়েছে। এমনকী নির্বাচন শেষে কত ভোট পড়ল, তা ১৬সি ফর্মে প্রত্যেক দলের পোলিং এজেন্টদের সই করিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেন প্রিসাইডিং অফিসার।
পাশাপাশি মেরে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের পোলিং এজেন্টকে। অথচ তাঁর নামে সই জাল করিয়ে ওই ফর্ম জমা দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হবেন।
সিপিএমের বনগাঁ শহর এরিয়া কমিটির সদস্য পীযূষ সাহার অভিযোগ, গোপন সূত্রে আমরা খবর পেয়েছি, বিভিন্ন বুথে ইভিএমও বদলে দেওয়া হয়েছে। ভোটের নামে আক্ষরিক অর্থেই এটা প্রহসন হয়েছে। এনিয়ে মঙ্গলবার আমরা বনগাঁর মহকুমা শাসককে চিঠি দিতে গিয়েছিলাম।
কিন্তু তিনি হার্ড কপিতে সই করে রিসিভ করেননি। পরে আমরা তাঁকে ওই চিঠি মেল করেছি। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়েছি। পাশাপাশি ওই চিঠি আমরা জেলাশাসক ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনেও পাঠিয়েছি। একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত পুর নির্বাচনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৩৭৪টি। উপ নির্বাচনে তাদের ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩২টি।
এনিয়ে বাম প্রার্থী ধৃতিমানের বক্তব্য, আমরা এই ওয়ার্ডে বরাবর গান্ধীপল্লির দুটি বুথ ২১৩ ও ২১৪ নম্বর থেকে লিড পায়। কিন্তু এই দুটি বুথেই সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী দখল করে নেয়। বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টদের মেরে বের করে দেওয়া হয়। অবাধে ভোট লুট চলতে থাকে।
আমরা ২১৩ নম্বর বুথ থেকে ৭৫টি এবং ২১৪ নম্বর বুথ থেকে ১১৬টি ভোট পেয়েছি। এখনও বলছি, সুষ্ঠু ভোট হলে বামেরাই জিতত। যেভাবে ভোট হয়েছে, তা মানুষ দেখেছে। মানুষ তার অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বুঝবে। আমরাও পথসভা, বিক্ষোভ সভার মধ্যে দিয়ে মানুষের সামনে গোটা বিষয়টি তুলে ধরছি। আমাদের বিশ্বাস, এসব বেশিদিন চলবে না। মানুষ ঠিকই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠবে।
বিজেপি প্রার্থী অরূপকুমার পালের বক্তব্য, গত পুরভোটে আমাদের দল এই ওয়ার্ডে ৯৩৪টি ভোট পেয়েছিল। এবার ভোট পেয়েছে ৭২৪টি। গান্ধীপল্লিতে মাত্র ২৫মিনিট এবং সুভাষপল্লিতে এক ঘণ্টা ভোট হয়েছে। এটা তারই ফল। আমরা হলফ করে বলতে পারি, নির্বিঘ্নে ভোট হলে তৃণমূল তৃতীয় স্থানে চলে যেত।
তাঁর দাবি, মানুষ তৃণমূলকে চাইছে না। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে ওরা হেরে যাবে। এটা বুঝতে পেরেই ওরা ভোট লুট করছে। অরূপবাবু বলেন, আমি ভোটের আগেও যেমন মানুষের সঙ্গে ছিলাম। এখনও সেটাই আছি। আগামী দিনেও থাকব। এই ভোটের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেবে তা নেতৃত্ব ঠিক করবে। তবে দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্যই সহমত পোষণ করব। এদিন ভোট গণনা বয়কট করেন বিরোধীরা। এনিয়ে বিজেপি প্রার্থীর কটাক্ষ, তৃণমূল মেরে ধরে ভোট করেছে। ওরাই নিজেদের ভোট নিজেরা গুনে নিয়ে বাড়ি যাক। অসুবিধার কী আছে।
১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহার জয় প্রায় নিশ্চিত ছিল। গত পুরভোটে এই ওয়ার্ডে তৃণমূলের দিলীপ দাস প্রায় চারশোর কাছাকাছি ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু পাপাইয়ের জয়ের মার্জিন বেড়েছে অনেকটাই। ২১১৮ ভোটে জিতেছেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২৮৪১টি। ভোটের ফল ঘোষণার পরই উল্লাসে মেতেছেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু একটি ওয়ার্ডের উপ নির্বাচন ঘিরে যেভাবে শাসক দলের বিরুদ্ধে রিগিং, সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে, তাতে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, এই জয় আদৌও কতটা নৈতিক?
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের অবশ্য বক্তব্য, হার নিশ্চিত জেনে বিরোধীরা রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে ভোটের দিন ময়দান থেকে রণে ভঙ্গ দেয়। আসলে ওদের এটা ওদের ফুটেজ খাওয়ার কৌশল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধীরা যত আক্রমণ করবে, মানুষ ততই তৃণমূলকে ঢেলে ভোট দেবে। তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। তাঁর দাবি, রিগিংয়ের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। যদি এক ঘণ্টা ভোট হয়ে থাকে, তা হলে বিজেপি ৭২৪ ভোট পেল কী করে। এক ঘণ্টায় কী এত ভোট কোথাও পোল হয়?
কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দর বক্তব্য, বিরোধী দলগুলি ভোট বয়কট করেছে। গণনাও বয়কট করেছে। ভোটের যে ফল সামনে এসেছে, তা মানুষের সঠিক রায় নয়। কে জিতত, কে হারত সেটা পরের বিষয়।
কিন্তু মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। যেটা হল, তার খেসারত তৃণমূলকে দিতে হবে। পুর নির্বাচনে আমাদের পক্ষে ভোট পড়েছিল ৩৫টি। উপ নির্বাচনে সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে আমাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে বারোটা থেকে আমরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করেছি। তার পরও আমাদের পক্ষে ৫২টি ভোট পড়েছে। যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাই।
বনগাঁ পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল প্রার্থী পাপাই রাহা।এই ওয়ার্ডটি তৃণমূলের দখলেই ছিল৷ কিন্তু পুরপ্রতিনিধি দিলীপ দাস-এর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে উপনির্বাচন করতে হয়৷ এই ওয়ার্ডে অবশ্য দ্বিতীয় স্থান দখল করতে পেরেছে বিজেপি৷ তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী পাপাই রাহা পেয়েছেন ২৮৪২টি ভোট৷ সেখানে বিজেপি প্রার্থী অরূপ কুমার পাল পেয়েছেন ৭২৪টি ভোট৷ তৃতীয় স্থানে থাকা বামফ্রন্টের প্রার্থী পেয়েছেন ৩৩২টি ভোট৷ ২১১৮ ভোটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী৷