দেশের সময় বাগদা :বাগদা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পরেই তিনি বিধায়ক পদ থেকে অব্যাহতি নেন। এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে আগামী ১০ জুলাই। তৃণমূলের অন্দরে বিশ্বজিৎ দাসকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে, প্রার্থিতালিকায় দেখা গেল চমক।
ঠাকুমা বীণাপাণি ঠাকুরের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই অভিযোগ তুলে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে অনশনে বসেছিলেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে চর্চার বিষয় হয়ে ওঠেন বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরের নাতনি। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের মেয়ে এবার লড়ছেন নির্বাচনে।
মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক নিজেদের পক্ষে টানতে আবারও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রার্থী করা হল, ঠাকুরবাড়ির সদস্যকে। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির সদস্য কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর ও রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর। ঠাকুরনগর কলেজে থেকে প্রাণীবিদ্যায় স্নাতক উত্তীর্ণ হন তিনি।
২৬ বছর বয়সী মধুপর্ণা কলেজ পাস করা পর হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিনের জন্য অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। অল্প বয়সেই এবার রাজনীতিতে পা রাখলেন তিনি।
পৈত্রিক ভিটে বাড়ি থেকে অন্যায় ভাবে উচ্ছেদের অভিযোগে এনে ভিটে ফিরে পাওয়ার দাবিতে মে মাসে ঠাকুর বাড়িতে অনশন শুরু করেন মধুপর্ণা। মতুয়া ধর্ম মেলা চলাকালীন বড়মা বীণাপাণি দেবীর ঘরের তালা ভেঙে ঢুকেছিলেন শান্তনু ঠাকুর বলে অভিযোগ ছিল। সেই সময়ের ছবি সংবাদমাধ্যমেও দেখেছিল গোটা রাজ্য সহ মতুয়া ভক্তরা। পরে সেই ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন শান্তনু। নিজেদের ঘরেই আর প্রবেশ করতে পারছিলেন না মা মমতা বালা ঠাকুর ও মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরণ অনশনে বসেছিলেন মধুপর্ণা। অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে, তাঁর অনশনের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে চর্চার বিষয় হয়ে পড়ে। সেই মধুপর্ণাকেই এবার প্রার্থী করল তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে ঠাকুরবাড়ির দ্বন্দ্বের আবহে একাধিকবার সামনে এসেছে মধুপর্ণার নাম। রাজনৈতিক মহল বলছে, তিনি যদি জিততে পারেন তিনিই হয়তো হবেন বিধানসভার কনিষ্ঠতম সদস্য। কিন্তু, মধুপর্ণার রাজনীতিতে হাতখড়ি কার হাত ধরে?
মধুুপর্ণা বলেন, “দাদুর আমল থেকে এটা চলে আসছে। রাজনীতি আমাদের ধমনীতে। আমার মা একজন রাজ্যসভার সাংসদ। মা আমার শক্তি। মাকে দেখেই রাজনীতিতে নামা।” তবে রাজনীতির আঙিনায় নতুন হলেও জয়ের ব্যাপারে এখন থেকেই বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে মধুপর্ণাকে। বিরোধীদের কীভাবে প্রতিহত করবেন সেই টিপস দিচ্ছেন খোদ মা। মধুপর্ণা স্পষ্টই বলছেন, হ্যাঁ, মায়ের পরামর্শ পেয়েছি। আসুক আক্রমণ। রাজনীতিতে যখন নেমেছি তখন লড়াই তো করে যেতেই হবে। লড়াই চলতে থাকবে। মতুয়াদের লড়াই এটা।
মধুপর্ণা স্পষ্টই বলছেন, “আমি মতুয়াদের জন্য, বাগদার মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। ওদের জন্য কিছু করতে পারলে ঠাকুরবাড়ির নাম হবে। আমার দাদুর নাম হবে। সে কারণেই ওদের জন্য কিছু করতে চাই। তাহলেই আমাদের বাড়ির নাম হবে।”
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এই বিধানসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লক পালা করে জিতে এসেছে। ২০০৬ সালে এক কেন্দ্রে খেলা ঘুরিয়ে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল প্রার্থী দুলাল বর এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাতে থাকলেও বিশ্বজিৎ দাস এই কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জিতে আসেন ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। এবার তাঁকেই লোকসভায় প্রার্থী করা হয়েছিল। তবে, উপনির্বাচনে মমতা কন্যাকে প্রার্থী করে চমক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। উপনির্বাচনের জন্য চারটি কেন্দ্রেরই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। বিজেপি বা অন্যান্য দলের তরফে এখনও কোনও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে মধুপর্ণা জানান, তিনি রাজনীতি করবেন এমনটা ঠিক ছিল না। হঠাৎ করেই তৃণমূলের তরফ থেকে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে বাগদা উপনির্বাচনে। তার জন্য তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানান। সীমান্ত শহর বনগাঁ বিজেপি গড় হিসেবে উঠে আসলেও, মতুয়া অধ্যুষিত বাগদা বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেসকে মেয়ে উপহার দিতে পারবেন বলেই মনে করেন মা মমতাবালা ঠাকুর।