দেশের সময় , বাগদা: সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ান ও আধিকারিকের বিরুদ্ধে এক মহিলা গণধর্ষিতা হওয়ার অভিযোগের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাগদা এলাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ন্যক্করজনক এই ঘটনার খবর পেয়েই শনিবার ঘটনাস্থলে যান বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সংসদীয় জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। বিএসএফ -এর দুই জওয়ানের এহেন আচরণের কড়া নিন্দা জানান বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। এই ঘটনা বিএসএফ-এর এলাকা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সীমান্তের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যেই বিএসএফ এমন ধরনের অত্যাচার করছে। তাদের এলাকা বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হলে বিএসএফ-এর দ্বারা সাধারণ মানুষ আরও বেশি অত্যাচারের শিকার হবেন।” দলের নির্দেশমতো প্রয়োজনে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে বলেও জানান তিনি। বাগদার বিধায়ক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন।
বিএসএফ জওয়ানদের ন্যক্করজনক কাজের নিন্দা করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও টুইট করে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
Indian women ARE NOT SAFE under @narendramodi ji's watch!
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) August 27, 2022
The Prime Minister gives lengthy speeches on Nari Shakti and respecting women when the reality is very, very different. Who are you trying to fool, Mr Modi?
Hear from @DrShashiPanja 👇 pic.twitter.com/kxqv8Z5USS
সরাসরি বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, “আমাদের দেশ নারীদের জন্য ক্রমশ অনিরাপদ হয়ে উঠছে, ভারতে @BJP4India-র দুঃশাসন!” একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, “@অমিতশাহ, আপনার নজরে বিএসএফ অফিসার ও জওয়ান এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছে, যদি সে আওয়াজ তোলে এরকম পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সত্যিই আত্মনির্ভর ভারত-এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
এদিকে, বিএসএফ জওয়ানদের হাতে বসিরহাটের মহিলার গণধর্ষণের ঘটনায় বাগদার জিৎপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এদিন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এদিন বাগদায় যান পুলিশ সুপার তরুণ হালদারও। অন্যদিকে, শুক্রবার রাতেই অভিযুক্ত দুই জওয়ানকে গ্রেফতার করেছে বাগদা থানার পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া দুই বিএসএফ-কর্মীকে শনিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্তকারীদের সূত্রের খবর,, গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার জিতপুর বর্ডার আউটপোস্টের কাছাকাছি এলাকায় সীমান্ত পেরনোর চেষ্টা করছিলেন বছর তেইশের ওই তরুণী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও দুই সন্তান। তাঁরা আদতে উত্তর ২৪ পরগনারই বসিরহাটের ত্রিমোহিনী এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা রাতের অন্ধকারে সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সীমান্ত এলাকায় পাহারার দায়িত্ব বিএসএফের ৬৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের। ওই রাতে বিএসএফ-কর্মীদের টর্চের আলোয় ওই তরুণীদের গতিবিধি টের পেয়ে যায় বিএসএফ। এর পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তাড়া খেয়ে ওই তরুণী স্বামী-সন্তান-সহ পালানোর চেষ্টা করেন। সেই সময় স্বামী এবং এক সন্তানের কাছ থেকে তিনি অন্য সন্তান-সহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
বিএসএফ-এর ভয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন সব্জী ক্ষেতের মধ্যে। সেখান থেকে টেনে বার করে ধর্ষণ করা হয় বছর তেইশের তরুণীকে বলে অভিযোগ! বাগদায় ধর্ষণের ঘটনায় ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ৷
এর পর শুক্রবার ওই তরুণী বাগদা থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই বিএসএফ-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। তাঁর দেহে মারধরের চিহ্নও মিলেছে। ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে পেয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণ করা হবে বলেও জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে। পাশাপাশি, শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগকারিণীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।
বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিতের অভিযোগ নিয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল কটাক্ষের সুরে বলেন, বিশ্বজিৎবাবুরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। আইন আইনের পথে চলবে। যদি ওঁরা দোষ করে থাকেন তা হলে শাস্তি পাবেন।
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘কাশ্মীরে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে এমন বহু মিথ্যে অভিযোগ উঠেছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে কী হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা দরকার৷ এরকম হয়ে থাকলে তা সত্যিই ভয়ঙ্কর অপরাধ৷’