আদরের মেয়েকে কৈলাসে স্বামী গৃহে ফিরিয়ে দেওয়া । বাগবাজার – শোভাবাজার রাজবাড়িতে মন খারাপের দশমী ৷ যে দালানে তিল তিল করে তৈরি হয়েছিল মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি। এবার তাঁকে বিদায় জানানোর পালা। বিজয়ার পুজোপাঠ হয়ে গিয়েছে সকালেই। কানে কানে মাকে বলা হল, আবার এসো মা। তারপরই শুরু হয় কনকাঞ্জলি পর্ব। দেখুন ভিডিও
আবার দীর্ঘ একবছরের অপেক্ষা। দেখতে দেখতে চোখের পলকে কেটে গেল দিনগুলি। এক লহমায় আনন্দ আমেজ শেষ। বনেদিবাড়ির ও কিছু বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জন দশমীতেই হবে। বেশিরভাগ বারোয়ারি পুজোর বিসর্জন মঙ্গলবার হবেনা। মায়ের নিরঞ্জনের আগে সিঁদুর খেলায় মাতেন মহিলারা। বাগবাজারের সিঁদুর খেলার খ্যাতি সর্বত্র।
বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সিঁদুর খেলার ঘোষণা করা হয়েছিল। চলতি বছরও প্রথা এবং ঐতিহ্য মেনেই বাগবাজারে আয়োজিত হল সিঁদুর খেলা। সনাতনী বিবাহিত মহিলারা মেতে উঠেছেন সিঁদুর খেলায়। বাগবাজারে সিঁদুর খেলতে যাওয়ার জন্য সারা বছর প্রতীক্ষা করেন অনেকে। অবশেষে মায়ের বিদায়বেলায় সিঁদুর খেলায় মেতে উঠলেন বাঙালি বিবাহিত নারীরা। লাল পেড়ে সাদা শাড়িতে সকালবেলাতেই মণ্ডপে পৌঁছলেন মহিলারা। সাবেকি সাজে মহিলারা মেতে উঠলেন ।
উত্তর কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো। এই বছর বাগবাজারের পুজো ছিল সাবেকি ধাঁচে। জয়পুরের একটি মিউজিয়ামের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়। মণ্ডপ সজ্জায় বিশেষ নজর দেওয়া হয়। প্রতিবছরই দশমীতে বাগবাজার অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এবছরও তার অন্যথা হলনা।
শোভা বাজার বাড়িতে দুর্গাপুজো হচ্ছে ২৬৭ বছর ধরে। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে ১৭৫৭ সালে শুরু হয় এই পুজো। ইংরেজ আমলে এ বাড়িতে ব্রিটিশরাও আসতেন অতিথি হয়ে। উত্তর কলকাতার অন্যতম প্রাচীন পুজো এটি। সাবেকিয়ানা আর বনেদিয়ানার মেলবন্ধন ঘটে এই পুজোয়।
ঘরের মেয়ে রূপে পূজিতা উমাকে দেওয়া হয় মিষ্টি ভোগ। বরাবরের মতো এবারও মেদিনীপুর থেকে আসেন মিষ্টির কারিগরেরা। চাল, কলা দিয়ে নৈবেদ্য এবং দুধ, মিষ্টি, সন্দেশ দিয়ে দেবীকে মিঠাই ভোগ নিবেদন করা হয়। শোভাবাজার রাজবাড়িতেই ভিয়েন বসে। সেখানে ১০-১২ রকমের মিষ্টি তৈরি হয়। লাল মিষ্টি আর সাদা মিষ্টিই প্রধান। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী বিকেলে মিছরি, জল ও মাখন দিয়ে দেবীকে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। রাতে শুকনো মিষ্টি সহযোগে ফের মিঠাই ভোগের আয়োজন করা হয় শোভাবাজার রাজবাড়িতে।
এ বাড়ির রীতি হল, বাহকের কাঁধে চাপিয়ে, শোভাবাজার রাজবাড়ি থেকে শোভাযাত্রা করে বাগবাজার ঘাটে গিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে ওড়ানো হত নীলকণ্ঠ পাখি। তবে এখন সেই নীলকণ্ঠ পাখি বিলুপ্তপ্রায়। তাই প্রাচীন রীতিতে আনা হয়েছে বদল। এখন থার্মোকলের নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি করে গ্যাস বেলুনের মাধ্যমে তা উড়িয়ে দেওয়া হয় আকাশে।
কলকাতায় গঙ্গার ঘাটে দশমীর সকালে গঙ্গার ঘাটে বিসর্জনের প্রস্তুতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জলে-স্থলে রয়েছে পুলিশের নজরদারি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। ড্রোন উড়িয়েও নজরদারি চালানো হয়। গঙ্গাবক্ষে টহল দিচ্ছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ।
দশমীর দিন দুপুর সোয়া ১টা থেকে বন্ধ রাখা হয় চক্ররেল পরিষেবা। এদিন প্রথমে বাড়ির ঠাকুর বিসর্জন হয়। এরপর একে একে বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের পালা। বাবুঘাট, জাজেস ঘাট, বাগবাজার ঘাট, আহিরীটোলা ঘাট-সহ গঙ্গার একাধিক ঘাটে চলবে বিসর্জন।
বিজয়ার প্রস্তুতি কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজোতেও ৷
মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছরের বেশি পুরনো। সকাল থেকে শুরু হয় দেবী বরণের প্রস্তুতি। মাকে বরণ করার পর শুরু হবে সিঁদুর খেলা। এরপর দর্পণে বিসর্জন। দুপুরের পর কাটি গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। পুজো দেখতে বিদেশ থেকেও এসেছেন পর্যটকরা।