পিয়ালী মুখার্জি, কলকাতা: প্রয়াত প্রাক্তন ফুটবলার, অলিম্পিয়ান সমর বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি আবার ময়দানে বেশি পরিচিত বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই। চলতি বছরের শুরুতেই সুভাষ ভৌমিককে হারিয়েছে ময়দান। তার পর সুরজিত্ সেনগুপ্তকেও হারাতে হয়েছে। এই শোক ভোলার আগেই ফের শোক সংবাদ ।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন গভীর রাতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় প্রাক্তন অলিম্পিয়ানের । হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাত ২.১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সমর বন্দ্যোপাধ্যায় ।
ময়দানে বদ্রু নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন প্রাক্তন অলিম্পিয়ান সমর বন্দ্যোপাধ্যায় । ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভারতীয় দলকে। মোহনবাগানে খেলেছেন ১৯৫২-১৯৫৯। তাঁর মৃত্যুতে স্বভাবতই শোকের ছায়া ময়দানে । অ্যালঝাইমার্স, উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যাজোটেমিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বদ্রু।
টুইটারে শোকবার্তা জানান মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘প্রখ্যাত ফুটবলার সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। ২০১৬-১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জীবনকৃতি সম্মান দেওয়া হয়েছিল। ওনার পরিবার এবং ফ্যানদের সমবেদনা জানাই। অনেকের জন্যই তিনি অনুপ্রেরণা।’
মোহনবাগানকে প্রথম ডুরান্ড কাপ দিয়েছিলেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। কাকতালীয়ভাবে আজ এটিকে মোহনবাগানের ডুরান্ড যাত্রা শুরু করার দিনই এল তাঁর প্রয়াণ সংবাদ। মোহনবাগানি বলে পরিচিত বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর সময়ে সবুজ মেরুন জার্সিতে প্রায় সব ট্রফিই জিতেছেন। তাই বিদায়বেলায় তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহনবাগান তাঁবুতে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কিংবদন্তি ফুটবলারের মৃতদেহ পৌঁছয় প্রিয় ক্লাবে। সবুজ মেরুন পতাকায় মুড়ে ফেলা হয় অলিম্পিয়ানকে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত, ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি, সুব্রত ভট্টাচার্য। মোহনবাগান ক্লাবেই কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানের কর্তারা।
লাল হলুদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত, মহমেডানের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন বেলাল খান। এছাড়াও হাজির ছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত, সহ সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি প্রমুখ।
একাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা জড়িয়ে আছে তাঁর সঙ্গে। তারমধ্যে অন্যতম হল ১৯৭৭ সালের সন্তোষ ট্রফির ঘটনা। সেই সময় ফুটবলারদের পাঁচতারা হোটেলে রেখে সন্তোষ ট্রফির প্রস্তুতি সেরেছিল বাংলা দল।
তখন নির্বাচক বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতে খুব একটা ভালো পারফরম্যান্স ছিল না বাংলার। তখন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ফুটবলাররা থাকছে ফাইভ স্টারে, কিন্তু খেলছে ওয়ান স্টারের মতো।’ তাতেই ক্ষেপে যায় ফুটবলাররা।
সন্তোষ ট্রফি জয়ের পর গৌতম সরকার, প্রসূন ব্যানার্জিরা তাড়া করেছিলেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বরাবরই পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। এই ঘটনায় তাঁর কোট, টাই পরে মাঠে ছুটে বেড়ানোর ঘটনা এখনও অনেকেই ভুলতে পারেনি।