বহু প্রতীক্ষিত রামমন্দিরের দ্বারোদঘাটন হচ্ছে আগামী ২২ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রামলালার এই মন্দিরের উদ্বোধন করবেন।
দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ২২ জানুয়ারি। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন। জোর কদমে চলছে তার প্রস্তুতি। নবনির্মিত রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে দ্রুত বদলাচ্ছে অযোধ্যার ছবি। রেল স্টেশনের আধুনিকীকরণ থেকে আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দর, কিংবা সরজূ তীরের সৌন্দর্যায়নের ছোঁয়ায় বদলাচ্ছে অযোধ্যার অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। সেজে উঠছে রাম জন্মভূমি। আর ছোট্ট রামলালার জন্য আসমুদ্র হিমাচল থেকে আসছে উপহার। ভালবাসা উজাড় করে দিচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থা। উপহার আসছে বিদেশ থেকেও।
পুরাণে বলা হয়, রাম লালার মাতুলালয়, ছত্তীসগঢ়ের চাঁদখুড়িতে। আর নেপালের জনকপুরে জন্ম হয় সীতার। সূত্রের খবর, অযোধ্য়ায় রাম-লালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে এই দুই জায়গা থেকে আসছে প্রচুর উপহার।
কী কী উপহার এল রামলালার জন্য
প্রায় তিন কুইন্টাল চাল আসছে ছত্তীসগঢ় থেকে। প্রচুর ফল, পোশাক আসছে জনকপুর থেকে। এছাড়াও নেপাল থেকে আসছে বিভিন্ন ধরনের গয়না, বাসন, এবং মিষ্টি। মন্দিরের জন্য় উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছে ২ হাজার ১০০ কেজি অষ্টধাতু। এছাড়াও ভদোদরা থেকে ১০৮ ফুট লম্বা ধুপ, পাটনার মহাবীর ট্রাস্ট থেকে পাঠানো হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা মূল্য়ের সোনার ধনুক। ৬০০ কেজির এক ঘণ্টা এসেছে রামেশ্বরম থেকে।
রামমন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে ট্যাটু
অন্যদিকে, রামমন্দির উদ্বোধনের আগে অনেকেই নিজের শরীরে, তার ছাপ রাখছেন। কাজ বেড়েছে ট্যাটু শিল্পীদের। অনেকেই হাতে তৈরি রামমন্দিরের মডেলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বাজারে। বদলে যাওয়া রামনগরী অযোধ্যায় গাইডের কাজ করছেন স্থানীয়দের কেউ কেউ।
মন্দিরের এ টু জ়েড
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের ওয়েবসাইট বলছে, মূল মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৭ একর জমির ওপরে।
মোট বিল্ট আপ এরিয়া ৫৭ হাজার ৪০০ বর্গফুট। মন্দিরের মোট দৈর্ঘ ৩৬০ ফুট। প্রস্থে ২৩৫ ফুট। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মন্দিরের চূড়া পর্যন্ত মোট উচ্চতা ১৬১ ফুট। রামমন্দিরের ৩টি তলের প্রতিটির উচ্চতা ২০ ফুট করে। মন্দিরের প্রথম তলে মোট স্তম্ভ রয়েছে ১৬০টি। দ্বিতীয় তলে স্তম্ভের সংখ্যা ১৩২, আর তৃতীয় তলে ৭৪টি স্তম্ভ রয়েছে। রাম মন্দিরের মোট ফটকের সংখ্যা ১২। একেবারে ধ্বজার নীচে থাকবে গর্ভগৃহ। সেখানেই অধিষ্ঠিত হবেন রামলালা। মন্দিরে প্রবেশের পথ বা সিঁড়ির নাম দেওয়া হয়েছে সিংহদ্বার। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলেই সোজা দেখা যাবে গর্ভগৃহ। দেখা মিলবে রামলালার।
Ayodhya Ram Mandir Tour Package : অযোধ্যা যেতে খরচ কত?
বিমানপথ, রেলপথ এবং সড়কপথ, তিনভাবেই পৌঁছনো যায় অযোধ্যাতে।
অযোধ্যার নিকটতম বিমানবন্দর গোরক্ষপুর এবং আমায়ুসি। প্রথমটি অযোধ্যা থেকে ১১৮ কিলোমিটার দূরে এবং দ্বিতীয়টি ১২৫ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে ২২ জানুয়ারির আশপাশে বিমানভাড়া পড়ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। মুম্বই থেকে ভাড়া প্রায় ৭-৮ হাজার। দিল্লি থেকে বিমানভাড়া ৫-৭ হাজার টাকা। বেঙ্গালুরু থেকে ভাড়া ৯-১৩ হাজার।
ট্রেনে চেপে রামমন্দির দর্শনে যেতে গেলে নামতে হবে অযোধ্যা অথবা ফৈজাবাদ জংশনে। কলকাতার ভক্তরা হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেসে চেপে সহজেই পৌঁছতে পারেন অযোধ্যায়। এসি টু টায়ারের ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ১৭১০ টাকা। এসি থ্রি টায়ারের টিকিট ভাড়া ১১৯৫ টাকা। মুম্বই থেকে ছাপড়া এক্সপ্রেস, অযোধ্যা এক্সপ্রেসে পৌঁছনো যাবে। ভাড়া ৬৩০ থেকে ১৬৩০ টাকা পর্যন্ত। দিল্লি থেকে অযোধ্যা পৌঁছনোর জন্য রয়েছে কাফিয়াত এক্সপ্রেস, ফরাক্কা এক্সপ্রেস, সত্যাগ্রহ এক্সপ্রেস, চম্পারন হামসফর, অযোধ্যা এক্সপ্রেস। এই অযোধ্যা এক্সপ্রেসে এসি থ্রি টায়ারের ভাড়া ১২৬৫ টাকা। এসি টু টায়ারের ভাড়া ২২৫৫ টাকা।
সড়কপথে লখনউ থেকে অযোধ্যার দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। বারাণসী থেকে ২০০ কিলোমিটার, এলাহাবাদ থেকে ১৬০ কিলোমিটার, গোরক্ষপুর থেকে ১৪০ কিলোমিটার এবং দিল্লি থেকে সড়কপথে অযোধ্যার দূরত্ব ৬৩৬ কিলোমিটার।
হোটেল খরচ
২০২৪ সালের ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে অযোধ্যার অধিকাংশ হোটেলে ইতিমধ্যেই ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গিয়েছে। অযোধ্যা রামায়ণ হোটেলের ম্যানেজার অমিত মিশ্র বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে “রামমন্দির ” উদ্বোধনের
সময়টা এখানে হোটেল বুকিংয়ের চাহিদা তুঙ্গে। আমরা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি বুকিং সামাল দিতে।’ জানুয়ারি মাসের ২১ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে অযোধ্যার হোটেল হনুমাজির রুম পিছু এক রাতের খরচ ৮ হাজার ১৬ টাকা। হোটেল নীলকণ্ঠতে জানুয়ারি মাসের এক রাতের ভাড়া ১০ হাজার ৩২৫ টাকা। হোটেল অযোধ্যা প্যালেসে জানুয়ারি মাসের এক রাতের খরচ পড়ছে ১৬ হাজার ২২১ টাকা।কে কে এবং হোটেল ট্রিমরুমস শুভারম্ভের ভাড়া ১০ হাজার ৭৩৭ টাকা। রামমন্দিরের নিকটবর্তী হোটেলের এক রাতের খরচ উঠে গিয়েছে ২০ হাজার ৯২৫ টাকা পর্যন্ত। যে রুমের এক রাতের ভাড়া সাধারণত পড়ে ১৯০০ টাকা। সেটি পৌঁছে গিয়েছে ৮ হাজার টাকায়। আকাশছোঁড়া ভাড়া সত্ত্বেও রামমন্দির দেখার হিড়িকে ইতিমধ্যেই উপচে পড়ছে ভিড়। বাড়তি টাকা দিয়েই হোটেল বুকিং চলছে দেদার।