দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি।
এ কথা জানিয়েছেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জাওয়াহিরির মৃত্যু প্রসঙ্গে টেলিভিশনে বক্তৃতা দেন বাইডেন। পরে গোটা বিষয়টি টুইট করে তিনি জানিয়েছেন। জানিয়েছেন, শনিবার কাবুলে হানা দেয় আমেরিকার বিমান। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে আল কায়দার শীর্ষ নেতার।
৯/১১ হামলার অন্যতম চক্রী আয়মান আল-জাওয়াহিরি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় জঙ্গি হামলায় লাদেনের সঙ্গী ছিল সে। আল কায়দা প্রধানের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করার সঙ্গেই আরও একটি টুইট করে বাইডেন লেখেন, যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের থেকে আমেরিকার মানুষকে রক্ষা করার সংকল্প ও ক্ষমতা প্রদর্শন জারি রেখেছে আমেরিকা। বাইডেন লিখেছেন, কত দেরি হল সেটা বিষয় নয়, কোথাও লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল বিষয় নয় সেটাও। যেখানেই থাক, আমরা খুঁজে বের করবই।
I’m addressing the nation on a successful counterterrorism operation. https://t.co/SgTVaszA3s
— President Biden (@POTUS) August 1, 2022
লাদেনের সঙ্গে যৌথ ভাবে আল কায়দার প্রতিষ্ঠা করে জাওয়াহিরি। লাদেনের মৃত্যুর পর থেকে আল কায়দার রাশ ছিল তাঁর হাতেই। ২০১১ সালে নিহত হয়েছিলেন ওসামা বিন লাদেন।
ওসামা বিন লাদেন বেঁচে থাকাকালীনই তিনি ছিলেন ছিলেন সংগঠনের দু’নম্বর নেতা। পেশায় চিকিৎসক। দায়িত্ব নিয়ে জাওয়াহিরি ঘোষণা করেছিলেন, ওসামার অসমাপ্ত কাজ তাঁকেই শেষ করতে হবে। তাঁর মাথার দাম ছিল আড়াই কোটি মার্কিন ডলার। যৌবনেই তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন জেহাদি আন্দোলনে। বিন লাদেনের মতো তিনিও সোভিয়েত বিরোধী জেহাদি লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ করতে আফগানিস্তান যান। সেখানেই ঘাঁটি গাড়েন।
তাঁর মাথার দাম ছিল আড়াই কোটি মার্কিন ডলার। ওসামা বিন লাদেনের পরে তাঁর উত্তরসূরী হিসেবেই আল-কায়দার মুখ হয়ে ওঠেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। মিশরের খ্যাতনামা সার্জন, নেতা, বক্তা আল জাওয়াহিরি তাঁর যৌবনকাল থেকেই জেহাদের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন। একটা সময় ওসামার পরেই আল-কায়দার দু’নম্বর নেতা ছিলেন জাওয়াহিরি। ওসামা নিহত হওয়ার পরে সেই জায়গা তিনিই নেন। একের পর এক নাশকতামূলক কাজকর্মে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন জাওয়াহিরি ৷
ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পরে ক্রমেই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছিল আল-কায়দা। জীবনের শেষ কয়েক বছর মূল সংগঠনের কাজ থেকে দূরে থাকলেও আল-কায়দা ও তাদের ছাতার তলায় থাকা অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে ওসামার প্রতীকি ভূমিকা ও অনুপ্রেরণা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই জায়গায় বহাল হয়েছিলেন মিশরের চিকিৎসক নেতা আল জাওয়াহিরি ৷
ইরাকে মার্কিন সেনার অবস্থানের সময়ে সেখানে আল-কায়দার শাখা তৈরি হয়। এর এক নেতা ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদি। তিনি মার্কিন সেনার হাতে ধরা পড়ে কয়েক বছর গুয়ানতানামো বে-তে বন্দি ছিলেন। ২০০৯-এ মুক্তি পাওয়ার পরে ইরাকে নতুন করে আল-কায়দার সংগঠন গড়ে তুলতে শুরু করেন আল-বাগদাদি। এখানেই তাঁর সঙ্গে আল-কায়দার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধ শুরু হয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এই বিরোধ প্রবল হয়। আইএস-এর নৃশংস কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে জাওয়াহিরি-সহ আল-কায়দার শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের সমালোচনা করতে শুরু করেন। ফলে আইএস-এর সঙ্গে আল-কায়দার সম্পর্কই শুধু ছিন্ন হয় না, সিরিয়ার কয়েকটি জায়গায় দু’দলের জঙ্গিরা সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন।
আল-কায়দার ‘নরম মনোভাব’ আইএসের পছন্দ হয়নি। তবে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরেই আল জাওয়াহিরি ভিডিও বার্তায় মায়ানমার, বাংলাদেশ, অসম, গুজরাত, আমদাবাদ ও কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর অবিচার ও শোষণের থেকে মুক্ত করার জন্য ‘আল-কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ স্থাপনের কথা জানিয়েছিলেন। ভারতে একাধিকবার নাশকতামূলক হামলা চালানোর হুমকিও দিয়েছিলেন জাওয়াহিরি।
আমেরিকার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি তালিকায় নাম ছিল আয়মান আল-জওয়াহিরি । ওসামার উত্তরসূরির বিরুদ্ধে আমেরিকার বাইরে মার্কিনিদের হত্যা ও খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। ভারত সরকারকেও এক ভিডিও বার্তায় হুমকি দিয়েছিলেন জাওয়াহিরি। ‘কাশ্মীরকে ভুলো না’ শিরোনামে ওই বার্তায় তিনি বলেছিলেন, “কাশ্মীরে মুজাহিদিন বা জিহাদিদের এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত ভারতীয় সেনার ক্ষতি সাধন করা।”
কাশ্মীরি জিহাদিদের পাকিস্তানের ওপর ভরসা রাখা উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। আল-কায়দা প্রধানের বক্তব্য ছিল, “ভারতীয় সেনা ও সরকারের বিরুদ্ধে অবিশ্রান্ত আঘাত হানাই এখন জিহাদিদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।” অসম, গুজরাত, আমদাবাদ ও কাশ্মীরের মতো সাম্প্রদায়িক দিক থেকে উত্তেজনা প্রবণ এলাকার যুবকদের নিজেদের দলে টানার পরিকল্পনা জাওয়াহিরিরই ছিল বলে মনে করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ওসামার উত্তরসূরীও নানা সময় বলেছিলেন,জেহাদের পতাকা তুলে এই অঞ্চলগুলিতে নানা রাষ্ট্রের সীমানা মুছে দিয়ে মুসলিমদের এক করার কাজ করবে আল-কায়দার এই নতুন শাখা।
২০২১ সালে তালিবানরা কাবুলের ক্ষমতা দখেলর পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আল-কায়দা নেতাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। সেই সময় জাওয়াহিরির অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তালিবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসার পরেই আয়মান আল জাওয়াহিরি কোনও ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেননি। বা জনসমক্ষে আসেননি।
সেই সময় খবর রটেছিল হাঁপানির সমস্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে আল-কায়দা প্রধানের। পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্ট জানায় জাওয়াহিরি বেঁচেই আছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী কোনও এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর মার্কিন ড্রোন হামলায় আল জাওয়াহিরির নিহত হওয়ার খবর দিল আমেরিকা।