Asia Cup 2022: জোড়া হার! এশিয়া কাপ থেকে কার্যত বিদায় ভারতের, চমক দিল ‘আন্ডারডগ’ শ্রীলঙ্কা

0
390

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ জোড়া হার। পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেল ভারত।

কে টুর্নামেন্টের ফেভারিট, কেই বা আন্ডারডগ এ সব হিসেবনিকেশ চলে প্রতিযোগিতা শুরুর আগে। এশিয়া কাপে ফেভারিট হিসেবে পা রেখেছিল টিম ইন্ডিয়া। রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলের সুপার ফোর স্টেজে পরপর দুই ম্যাচের হার। প্রথমটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়টি আন্ডারডগ টিম হিসেবে এশিয়া কাপ খেলতে আসা শ্রীলঙ্কা। লঙ্কান বোলিং ব্রিগেডের দাপটে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ।

যদিও খাতায় কলমে এখনও ভেসে থাকবেন রোহিতরা।‌ তবে সেক্ষেত্রে পাকিস্তানকে হারতে হবে আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাঁদের বাকি দুটো ম্যাচ। একইসঙ্গে ভারতকে বড় ব্যবধানে হারাতে হবে আফগানিস্তানকে। তবেই রানরেটের বিচারে ফাইনালে যাওয়ার একটা হালকা সম্ভাবনা থাকবে ভারতের। যা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে।

মঙ্গলবার দুবাইয়ে রোহিতদের ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের ছাড়পত্র প্রায় হাতে পেয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান তোলে ভারত। এক বল বাকি থাকতে জয়সূচক রানে পৌঁছে যায় লঙ্কা। দুটো পার্টনারশিপ ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল। এক, নিসাঙ্কা-কুশলের ওপেনিং জুটি।

দ্বিতীয়, রাজাপক্ষ-শানাকার পঞ্চম উইকেটে ৬৪ রান। ঠিক যেন পাকিস্তান ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। শেষ দু’ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১ রান। ১৪ রান দেন ভুবনেশ্বর। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯তম ওভারে ১৯ রান দিয়েছিলেন ভারতীয় পেসার। এশিয়া কাপে ডেথ ওভারে ডান হাতি ব্যাটারদের সামনে টোটাল ফ্লপ ভুবি। ফাইনাল ওভারে খলনায়ক থেকে রাতারাতি হিরো হওয়ার সুযোগ ছিল অর্শদীপের সামনে। প্রথম চারটে বল দারুণ করেছিলেনও। ম্যাচের এই পরিস্থিতিতে একজন ২৪ বছরের ছেলের পক্ষে মাথা ঠাণ্ডা রেখে এরকম বল করা প্রশংসাযোগ্য।

শ্রীলঙ্কাকে প্রায় আটকেও দিয়েছিলেন। পঞ্চম বলে শানাকাকে রান আউট করতে পারলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্যরকম হলেও হতে পারত। কিন্তু মিস করেন ঋষভ এবং অর্শদীপ।‌ কাজে লাগল না চাহালের ৩ উইকেট। ব্যাক টু ব্যাক হারে রোহিতের অধিনায়কত্ব নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন উঠে গেল। দীপক হুডাকে দিয়ে এক ওভারও বল না করালে তাঁকে সাত নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়ে কী লাভ? এদিন অশ্বিনকেও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেননি ভারতের নেতা।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একা লড়াই চালিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। আজ সেই ভূমিকায় রোহিত শর্মা। ভারতের নেতা ছাড়া সবাই ফ্লপ। একে একে এলেন এবং গেলেন। একমাত্র উইকেট আঁকড়ে পড়ে ছিলেন হিটম্যান। ৪১ বলে ৭২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। তারমধ্যে রয়েছে ৫টি চার এবং ৪টি ছক্কা। রোহিতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী সূর্যকুমার যাদব। ৩৪ রান করে আউট হন। এই দু’জন ছাড়া ভারতীয় ব্যাটারদের নিয়ে শব্দ খরচ করার কিছু নেই।

টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান শানাকা। লঙ্কায় একাধিক বাঁ হাতি থাকায় এদিন রবি বিষ্ণোইয়ের জায়গায় দলে ফেরানো হয় রবিচন্দ্রন‌ অশ্বিনকে। পাকিস্তান ম্যাচের মতো একজন ছাড়া সবাই ব্যর্থ। শুরুতেই পরপর দুই ওভারে কেএল রাহুল, বিরাট কোহলি আউট। দিলশান মদুশঙ্কার সঙ্গে মহেশ ঠিকশানাকে নতুন বল দিয়ে সবাইকে অবাক করেন শ্রীলঙ্কার নেতা শানাকা। তাঁর এই ফাটকাই খেটে যায়। দ্বিতীয় ওভারে লঙ্কার স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন রাহুল। চার মেরে ইনিংসের সূচনা করলেও মাত্র ৬ রানে ফিরে যান ভারতের ওপেনার।

পাকিস্তান ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করা বিরাট কোহলি এদিন ডাহা ব্যর্থ। মাত্র ৪ বল ক্রিজে ছিলেন। ফিরলেন শূন্য রানে। ভুল শট সিলেকশনের খেসারত দিতে হল। মাত্র ১৩ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত। এই জায়গা থেকে দলকে টেনে তোলেন রোহিত শর্মা-সূর্যকুমার যাদব। তৃতীয় উইকেটে ৯৭ রান যোগ করে এই জুটি। তারমধ্যে সিংহভাগ রান রোহিতের। এদিন চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি সূর্যকে। কোনওক্রমে ভারত অধিনায়ককে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন। ৩২ বলে অর্ধশতরান সম্পূর্ণ করেন রোহিত। ১০ ওভারের শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৯ রান ছিল ভারতের। এই পার্টনারশিপে ভর করে ম্যাচে ফেরে টিম ইন্ডিয়া।

কিন্তু জুটি ভাঙতেই আবার পতনের সূত্রপাত। এদিনও রান পাননি হার্দিক পাণ্ডিয়া (১৭) এবং ঋষভ পন্থ (১৭)। ক্রিজে নেমেই পরপর তিনটে চার মেরে আশা জাগিয়েছিলেন বাঁ হাতি উইকেটকিপার ব্যাটার। কিন্তু মাত্র ১৩ বল উইকেটে টেকেন। শানাকার বলে শূন্য রানে জীবন ফিরে পেয়েও ফায়দা তুলতে পারেননি হুডা। পরের ওভারেই মদুশঙ্কার বলে বোল্ড হন। নজর কাড়েন ২২ বছরের বাঁ হাতি জোরে বোলার। ৩ উইকেট শিকার তাঁর। শেষ ওভারে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ভারতকে ১৭৩ রানে পৌঁছে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

রান তাড়া করতে নেমে ভারতকে চমকে দেয় শ্রীলঙ্কার ওপেনাররা। নিসাঙ্কা, কুশলদের সামনে অতি সাধারণ দেখাচ্ছিল ভুবনেশ্বর, অর্শদীপ, হার্দিকদের। টি-২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড করে শ্রীলঙ্কা। ১০ ওভারের শেষে বিনা উইকেট হারিয়ে রান ছিল ৮৯। প্রথম উইকেটে ৯৭ রান যোগ করে নিসাঙ্কা-কুশল জুটি।

দুই ওপেনারই ৩৩ রানে অর্ধশতরানে পৌঁছন। শ্রীলঙ্কার এই ওপেনিং জুটি মনে করায় নয়ের দশকের জয়সূর্য-কালুউইথারানাকে। সাম্প্রতিককালে এরকম ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়নি লঙ্কাকে। কিন্তু অহেতুক রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে ৩৭ বলে ৫২ রান করে আউট হন নিসাঙ্কা।

এখানেই লঙ্কার পতনের শুরু। অপরিণত এবং অনভিজ্ঞ ক্রিকেটে মাত্র ১৩ রানে ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। যুজবেন্দ্র চাহালের স্পিন ভেল্কিতে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে ভারত। পরপর নিসাঙ্কা, আসালঙ্কা এবং কুশলকে ফিরিয়ে দেন ভারতীয় স্পিনার। ৩৭ বলে ৫৭ রান করে আউট হন কুশল মেন্ডিস। এরপরই চাপে পড়ে যায় লঙ্কা। কিন্তু ভারতের শেষরক্ষা হল না।। শ্রীলঙ্কার বৈতরণী পার করান অধিনায়ক দাসুন শানাকা (৩৩) এবং ভানুকা রাজাপক্ষ (২৫)। 

এই হারে এশিয়া কাপের সুপার ফোর স্টেজের কোন স্থানে রয়েছে ভারত? শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত দুটি করে ম্য়াচ খেলেছে। দুটি ম্যাচ জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। নেট রান রেট +০.৩৫১। এরপর রয়েছে পাকিস্তান। একটি ম্যাচে হার ও একটিতে জয়ের সুবাদে বাবর আজমদের পয়েন্ট ২। আফগানিস্তান খেলেছে একটি ম্যাচ। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বিরুদ্ধে হেরেছে তারা। দুই ম্যাচ হেরে ভারতের পয়েন্ট শূন্য। সুপার ফোর স্টেজে এখনও তিনটে খেলা বাকি। ভারত বনাম আফগানিস্তান, আফগানিস্তান বনাম পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা বনাম পাকিস্তান। ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচটি রয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে।

Previous articleRahul Gandhi- Sheikh Hasina: শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে সৌজন্য সাক্ষাৎ রাহুল গান্ধীর
Next articleMoloy Ghatak: এবার মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি, এলাকা ঘিরেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here