শ্রাবণী হালদার : হঠাৎ গ্যালারি ঘাটতে গিয়ে ছবিটা পেলাম। ছবিটা পাওয়ার সাথে সাথে চোখের কোণে জলটা চিক চিক করে উঠতে লাগলো। ছোটবেলার অনেক সুখের মুহূর্ত আজও অমলিন ,যে মানুষটির জন্য।তাঁর প্রতীকীর সামনে দাঁড়িয়ে আমি৷ দেখুন ভিডিও
আজ যার কথা বলবো তিনি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তথা আমাদের ছবির জগতের প্রাণ পুরুষ মাধব চন্দ্র নাথ। তাঁর বিধগ্ধতা শুধুমাত্র ছবি নিয়ে নয়, মাউথ অর্গানেও পারদর্শিতা ছিল অভাবনীয়। যেকোনো বিষয়ের ওপর অসাধারণ বক্তব্য রাখতে পারতেন তিনি। আমরা ছাত্র- ছাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে যেতাম তাঁর যে কোনো বিষয় উপস্থাপনের যে পটুত্ব ,তা আত্মস্থ করার চেষ্টা করতাম মাত্র।
ছবি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি অন্যমাত্রায় উদ্ভাসিত, এক কথায় আমরা তাকে চিত্রশিল্পের সব্যসাচিও বলতে পারি। স্যার এর হয়ত দশ হাত ছিল না ,কিন্তু মস্তিষ্কের ব্যাবহার দশদিকে ঘোরাতেন। সত্যিই এমন অকূল ভান্ডারের তল পাওয়া যে বড়ই কঠিন।
তিনি একপ্রকার কাজ পাগল ছিলেন। আমাদের বলতেন,- ” শুধু কাজ করো “, আরো বলতেন,- “সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম চাই “। ছাত্র -ছাত্রীরদের ব্যক্তিত্ব গঠনেও তিনি তৎপরতার সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
প্রতিবছর “৫ সেপ্টেম্বর” শিক্ষক দিবস উৎসাহের সঙ্গে আমরা পালন করতাম , এবং অভিনব পদ্ধতিতে। মাধব বাবু সেটি খুব পছন্দ করতেন ও আমাদের উৎসাহিত করতেন।
সারাবছর আমরা ছাত্র -ছাত্রীরা ভাবতাম, পরের বার কি নতুন পন্থা অবলম্বন করা যায় তাকে চমকে দেওয়ার জন্য।ফি বছর নতুন নতুন পদ বানিয়ে খাওয়াতেন, সেটি অবশ্যই তাঁর স্ত্রী অনুরাধা, আমাদের প্রিয় কাকিমা রান্নার দ্বায়িত্ব সামলাতেন । এক কথায় একটা যৌথ পরিবারের মত ছিলাম৷ তিনি শুধু আমাদের বলতেন, – “তোমরা যেনো কোনোদিন এই অনুষ্ঠান বন্ধ কোরো না “।
তাঁকে কথা দিয়েছি ‘বন্ধ করবো না এই মহতি অনুষ্ঠান’ ।তাই আমাদের সকলের প্রিয় চিত্রকর শিক্ষক মাধব চন্দ্র নাথের স্মরণে আমাদের আর্টিস্ট গ্রুপ শৈল্পিক ক্যানভাসের উদ্যোগে বনগাঁ পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড টাউন হলে দু’দিনের চিএ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে৷
২৭ মে শুক্রবার বিকাল ৩টে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন প্রয়াত শিল্পী মাধব নাথের স্ত্রী অনুরাধা নাথ৷ উপস্থিত থাকবেন বনগাঁপুরসভার পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। অতিথি শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন, রবিন মন্ডল, মনোজ বিশ্বাস, বাসুদেব হালদার, শংকর মন্ডল সহ বুলবুল দত্ত চৌধুরী- র মত বিশিষ্ট চিত্র শিল্পীরা৷ চিত্র প্রদর্শনী চলবে ২৭ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৷ এই দু’দিন বিকাল ৩ টে থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বনগাঁ পাবলিক লাইব্রেরী এন্ড টাউন হলের গ্রান্ডফ্লোর খোলা থাকছে দর্শকদের জন্য৷
আজকাল প্রিয় মানুষদের নিয়ে বলতে বড্ড ভয় করে। করনায় অনেক কিছু হারিয়েছি , পরিস্থিতি অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে । সব ত্যাগ করতে করতে পরিধিটা অনেকটাই ছোটো হয়ে এসেছে। তবে এই বিশ্বাসটা এখনও আছে, আবার দেখা হবে কোনো একদিন!