দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আজ রবিবার দু’ঘণ্টা স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার পরেই ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছিল অর্পিতা মুখার্জিকে।শেষ শুনানি। আপাতত রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালতে। তবে সূত্রের খবর, শুনানিতে ইডির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ‘ যা পাওয়া গিয়েছে তা পেঁয়াজের মতো, খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যাবে নতুন তথ্য।’
অর্পিতার ফ্ল্যাটে শনিবারর আচমকা তল্লাশি চালান ইডির আধিকারিকরা। আর সেখানেই উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২১ কোটি নগদ টাকা। সঙ্গে বিপুল অঙ্কের গয়না, বৈদেশিক মুদ্রা এবং বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। গতকাল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারের পরেই গ্রেপ্তার করা হয় অর্পিতা মুখার্জিকেও। আজ শারীরিক পরীক্ষা করার পর ব্যঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছিল তঁকে।
যদিও তাঁর বাড়ি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের টাকার উৎস নিয়ে এখনও নিশ্চুপ তিনি। আদালতে তোলার আগেই জানিয়েছিলেন তাঁর ভরসা আছে আদালতের ওপর, আইনের ওপর। এমনকি তৃণমূলের দাবিতে একপ্রকার সিলমোহর দিয়েই দাবি করেছিলেন, কোনও দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই অর্পিতার।
আজ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়েছিল অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। শুনানি শেষ হয়ে গিয়েছে।আদালতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের হেফাজতের জন্য আবেদন জানানো হয় ইডির তরফে। অন্যদিকে অর্পিতার আইনজীবী তাঁর জামিনের জন্য আবেদন করেন। সওয়াল জবাব শেষে রায়দান স্থগিত রাখে আদালত। পরে অর্পিতার একদিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। আগামিকাল (সোমবার) অর্পিতাকে বিশেষ ইডি আদালতে তোলা হবে।
ইডির আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, অর্পিতার বিপুল পরিমাণ টকার উৎস কী? তার উত্তরের জন্য তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সূত্রের খবর, ইডি জানতে চায়, অর্পিতা কাদের মাধ্যমে কোথা থেকে পেয়েছিলেন এতো টাকা? উদ্ধার হওয়া মোবাইলগুলি কোন কাজে লাগত? নজরে রয়েছে অর্পিতার বিদেশ ভ্রমণও।
ইডির আইনজীবীর দাবি, এটি হিমশৈলের চূড়া মাত্র। শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগের যে দুর্নীতির অভিযোগে যে বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই বেআইনি টাকার একটি ছোট্ট অংশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি আইনজীবীর। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইডির বক্তব্য, এই ক্ষেত্রে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এমন এক সূত্র, যে সূত্র ধরে এগোতে পারলে বাকি লেনদেনের সূত্র পাওয়া যাবে।
এদিকে হাইকোর্টে বড় অভিযোগ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। চিকিৎসার নামে দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চাইছে এসএসকেএম হাসপাতাল! ইডি-র আইনজীবী এদিন এও জানিয়েছেন, এসএসকেএম হাসপাতালের তরফে ইডি-র সঙ্গে কোনওরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে না। বরং কেন্দ্রীয় এজেন্সির অফিসারদের এসএসকেএম থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এত হাসপাতাল থাকতেও কেন এসএসকেএমে চিকিৎসার ছাড়পত্র পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিম্ন আদালতের সেই রায়ে আপত্তি তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার আর্জি জানায় ইডি। জরুরি ভিত্তিতে রবিবার বিকেলেই সেই মামলা শুনছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
এদিন হাইকোর্টে শুনানি চলাকালে ইডির আইনজীবী এমভি রাজু বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। জোকা ইএসআই হাসপাতাল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট দিয়েছে। তার পরেও কেন এসএসকেএম হাসপাতালেই যেতে হল রাজ্যের মন্ত্রীকে? প্রশ্ন তুলেছে ইডি।
ইডির আইনজীবী আরও বলেছেন, চিকিৎসার নামে আসলে দুর্নীতিকেই ধামাচাপা দিচ্ছে এই হাসপাতাল। ইডির অফিসারদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কোনওভাবেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত প্রভাবশালী বলেই এমনটা করা হচ্ছে বলে আদালতে জানিয়েছে ইডি।
আদালতে ইডির আইনজীবী এদিন বলেন, ইডির হেফাজত এড়ানোর উদ্দেশ্যেই অসুস্থতার ‘নাটক’ করছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ একটি হাসপাতালকে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা চলছে। অন্য হাসপাতালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভর্তির জন্য জোর সওয়াল করেছেন ইডির আইনজীবী। এখন দেখার এই মামলায় কী রায় দেয় উচ্চ আদালত।