দেশের সময় ওয়েবডেস্ক অবশেষে শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর হল অনুব্রত মণ্ডলের। গরু পাচার কাণ্ডে দীর্ঘদিন তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। জানা গেছে,জামিনের অন্যতম শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, কোনও অবস্থাতেই তদন্তকে প্রভাবিত করবেন না অনুব্রত। কোনও ভাবেই প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রভাবিত করতে পারবেন না। জমা রাখতে হবে পাসপোর্টও।
মোটমাট,তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে– এই শর্তেই সুপ্রিম কোর্টে জামিন মঞ্জুর হয়েছে তাঁর।
তবে সিবিআইয়ের সব মামলায় জামিন পেলেও, এখনই জেলমুক্ত হচ্ছেন না বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। কারণ ইডির করা মামলায় তাঁকে তিহাড় জেলেই থাকতে হচ্ছে আপাতত।
জানা গেছে, আজ, মঙ্গলবার অনুব্রতর গরু পাচার নিয়ে সিবিআইয়ের করা মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী। অবশেষে, শুনানির পরে তৃণমূল নেতার জামিন মঞ্জুর করে বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ।
২০২২ সালে বীরভূমে নিজের বাড়ি থেকেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুব্রত। আসানসোল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। পরে তিহাড়ে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। একই মামলায় আর্থিক তছরূপের অভিযোগ সে বছরেরই শেষের দিকে ইডিও তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। ফলে একই অপরাধে জোড়া মামলায় জেল খাটছিলেন তিনি।
সিবিআই মামলায় অনুব্রতর জামিন চেয়ে তাঁর আইনজীবী বারবারই আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু প্রতিবারই সিবিআইয়ের বিরোধিতায় সে আবেদন খারিজ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, এই মামলায় অনুব্রতই মূল অভিযুক্ত। তিনি জামিন পেলে সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে পারেন। তাই অনুব্রতর আইনজীবী যতই বারবার দাবি করতে থাকেন যে গরু পাচার মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তেরা ছাড়া পেলেও তাঁর মক্কেলকে আটকে রাখা হচ্ছে, সে কথা গ্রাহ্য হয়নি আদালতে। অবশেষে জামিন হল আজ।
গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করে ইডি-সিবিআই। প্রসঙ্গত, গত ১১ অগস্ট সকালে বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় অনুব্রতের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সেদিনটা ছিল রাখি। গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে আটক করে সিবিআই। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়। তারপর জেল হেফাজতে ছিলেন। এরই মধ্যে তদন্ত যত এগোতে থাকে, তৃণমূলের ‘কেষ্ট’-র একাধিক সম্পত্তির হদিশ পেতে থাকেন তদন্তকারীরা।
অনুব্রত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৬.৯৭ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া যায়। এছাড়ও প্রচুর নামে বেনামে জমি জায়গা সম্পত্তি, পরিচারক, রাঁধুনীর নামেও সম্পত্তির হদিশ মেলে। এরপরই এই মামলায় যুক্ত হয় ইডি। এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উৎস জানতে আসানসোল জেল হেফাজতে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি আধিকারিকরা। তারপর তাঁকে শোন অ্যারেস্ট করা হয়। এরপর ইডি অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে চান। কিন্তু দিল্লি না যেতে চেয়ে পাল্টা আইনি লড়াইয়ে নামেন অনুব্রত। কিন্তু শেষমেশ অনুব্রতকে দিল্লি যেতেই হয়।
তবে সিবিআই মামলায় জামিন হলেও, ইডির মামলা এখনও রয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে। সেখানে যতদিন না তিনি জামিন পাচ্ছেন, ততদিন তিহাড় থেকে মুর্তি নেই কেষ্ট মণ্ডলের।