দেশের সময়: জেলে বসেই পঞ্চায়েত ভোটের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল? আসানসোল জেল থেকে কলকাতায় আনার পথে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর উত্তর, ব্যাপক হবে পঞ্চায়েত ভোট। অনুব্রতকে জিজ্ঞাসা করা হয় কর্মীদের কী বলবেন? প্রশ্ন শুনেই অনুব্রত বলেন, তৃণমূলের হয়ে কাজ করতে বলব। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় কেমন আছেন? অনুব্রত বলেন, ভাল আছি। এর পর জিজ্ঞাসা করা হয়, শরীর ভাল আছে? তাঁর উত্তর, তাই কি থাকে। প্রশ্ন করা হয়, সামনে পঞ্চায়েত ভোট। কেমন হবে? তাঁর সটান উত্তর, ব্যাপক হবে।
অনুব্রত মণ্ডলের এই বার্তা ঘিরে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হলেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। এমনকী নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেষ্ট চোর? তার পর নিজেই প্রশংসা করে বলেছেন, কেষ্টর মতো পরোপকারী ছেলে আমি খুব কম দেখিছি। নেত্রীর এই ভূমিকায় তিনি যে খুশি, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অনুব্রতও।
সিবিআই হেফাজতে থাকার সময়েই সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত বলেছেন, ঠিকই বলেছেন। তিনি নেত্রী বলবেন না? আর এবার তিনি বুঝিয়ে দিলেন, জেল হেফাজতে থাকলেও দল নিয়ে তাঁর ভাবনা উড়ে যায়নি। জেলে বসেও সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডল। এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে তাঁর এক একটি মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়েছে। কখনও তিনি নকুলদানা দাওয়াইয়ের কথা বলেছেন। কখনও আবার বলেছেন, চড়াম চড়াম ঢাক বাজবে। তিনিই বলেছেন, উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে। বলেছেন, গুড়-বাতাসা দেওয়া হবে।
এ হেন অনুব্রতকে নির্বাচন কমিশনও ভোটের দিন আটকে রাখতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের সামনেই নিজের দাপটে ভোট পরিচালনা করেছেন তিনি। বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআইয়ের হাজিরা এড়িয়েছেন। কিন্তু ন’বার হাজিরা এড়ালেও শেষরক্ষা হয়নি।কলকাতা থেকে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা বোলপুরে তাঁর বাড়িতে এসেছে গ্রেফতার করেছে।
তিনি সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হতেই জেলায় দলের কর্মীরা কিছুটা মুষড়ে পড়েছেন। অনুব্রতকে ছাড়া কি পঞ্চায়েত ভোট করতে হবে, সেটাই ভাবাচ্ছে বীরভূমের তৃণমূল কর্মীদের। কিন্তু এদিন অনুব্রত বুঝিয়ে দিয়েছেন, জেলে বসেও পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন। আর তিনি যে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন, সেই ছকেই ধরাশায়ী হবে বিরোধীরা। অনুব্রতর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার অবশ্য বক্তব্য, এতদিন ভোট লুট হয়েছে। এখন এসব বলে কর্মীদের অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। লাভ হবে না। মানুষ এবার নিজের ভোট নিজে দেবেন। প্রসঙ্গত, আজ বিধাননগরে এমপি এমএলএ কোর্টে তোলা হবে অনুব্রতকে।
প্রসঙ্গত,২০১০ সালের মঙ্গলকোট বোমা বিস্ফোরণের মামলায় অনুব্রত সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাতেই আজ আদালতে হাজিরার তারিখ। পৌনে এগারোটা নাগাদ তাঁকে নিয়ে আদালতে পৌঁছয় পুলিশ।
প্রিজনভ্যান ছেড়ে এসি চারচাকা গাড়িতে অনুব্রতকে কলকাতায় আনা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। সিঙ্গুরের কাছে গাড়ি থামে। গাড়িতে বসেই ব্রেকফাস্ট সারেন তিনি। কিন্তু এই খাতিরদারি কেন, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়ে।