জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার বা এনএসএ) পদে টানা তৃতীয় বার অজিত ডোভালকে পুনর্বহাল করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বৃহস্পতিবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৭৭ বছরের ডোভালের পুনর্নিয়োগের কথা জানানো হয়েছে। গত ১০ জুন থেকেই কার্যকর হয়েছে ওই নির্দেশিকা।
দেশের সময় দিল্লি : বহাল থাকলেন অজিত ডোভাল। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন), তৃতীয় মেয়াদের জন্য তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত করা হল। এদিন মন্ত্রিসভার নিয়োগ কমিটি এই পদে অজিত ডোভালের নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, ১০ জুন থেকেই তাঁর নিয়োগ কার্যকর হবে। ডোভালের পাশাপাশি পিকে মিশ্রকেও ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ, মন্ত্রিসভাতেও যেমন নিজের কোর টিম ধরে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, একইভাবে সচিবদের মধ্যেও নিজের দলই অটুট রাখলেন তিনি। দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত, অথবা যেটি আগে হবে, সেই পর্যন্ত পদে থাকবেন।
অজিত ডোভালকে এমন সময় প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে ফিরিয়ে আনা হল, যখন জম্মু ও কাশ্মীর একের পর এক জঙ্গি হানার সম্মুখীন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর, কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর জন্য, দীর্ঘদিন উপত্যকায় পড়েছিলেন ডোভাল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছিলেন। গত রবিবার থেকে একের পর এক জঙ্গি হামলা চলছে কাশ্মীরে। এই অবস্থায়, জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন), অজিত ডোভাল এবং অন্যান্য সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে এক পর্যালোচনা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বৈঠকে মোদী কাশ্মীরের পরিস্থিতির মোকাবিলায়, সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষমতার পূর্ণ প্রয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন কাশ্মীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার সঙ্গেও কথা বলেছেন মোদী।
https://x.com/shemin_joy/status/1801217618164003254?t=Bl1lRiHirXLhlNEUMNZ_RQ&s=19
ভারতের ইতিহাসে, প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টার আসনে অজিত ডোভালই সবথেকে বেশি সময় ধরে আছেন। এই মেয়াদ বৃদ্ধির আগেই এই রেকর্ড করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পিকে মিশ্রও তাঁর আসনে সবথেকে বেশি সময় ধরে থাকার রেকর্ড করেছেন। দুজনেই তাঁদের কার্যকালে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা পাবেন। এই দুই প্রাক্তন আমলাকে, সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করার পাশাপাশি, অমিত খারে এবং তরুণ কাপুরকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না আসা পর্যন্ত দুই বছরের জন্য তাঁরা এই পদে থাকবেন।
পাঁচ বছর দক্ষতার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলানোর ‘পুরস্কার’ হিসাবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে পুনর্নিয়োগ পেয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই আইপিএস আফিসার। শুধু আরও পাঁচ বছর স্বপদে পুনর্বহালই নয়, তাঁর পদমর্যাদাও বাড়িয়ে দিয়েছিল দ্বিতীয় মোদী সরকার। মোদীর প্রথম বারের প্রধানমন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরে ডোভালের পদমর্যাদা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর সমান। সেই পদমর্যাদা বাড়িয়ে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা।
দ্বিতীয় দফার মেয়াদে ডোভালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ৩৭০ ধারা রদের পর অশান্ত হয়ে ওঠা কাশ্মীর উপত্যকায় আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর ক্ষেত্রে। পাশাপাশি, ২০২০-র জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে দফায় দফায় বেজিংয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনেও তাঁর উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। যদিও সে সময়ই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ডোভালের ‘দূরত্বের’ খবর নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। ফলে তৃতীয় দফায় মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি পুনর্নিয়োগ পাবেন কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল সংশয়। বৃহস্পতিবার সেই সংশয়ে ইতি টেনে দিলেন মোদী।