
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই ১৭১ দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরে। বিমান ভেঙে পড়ার সেই মুহূর্তের ভিডিয়ো তুলেছিল বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার ১৭ বছরের এক কিশোর।
আমদাবাদ শহরের এক ভাড়া ঘরে থাকে সে। ওই কিশোরের মোবাইলে ধরা পড়েছে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক আগে ও পরে দৃশ্য। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে, বিমানটি ধীরে ধীরে নিচে নামছে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যাচ্ছে প্রবল বিস্ফোরণ।

সেই ভিডিয়োই এখন তার আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি তার পরিবারের। শনিবারই তার বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। পৃথক ভাবে অহমদাবাদ অপরাধদমন শাখাও ওই কিশোরের বয়ান রেকর্ড করে নিয়ে গিয়েছে।
ভিডিওগ্রাফার ওই কিশোরের নাম আরিয়ান। নিজের অজান্তেই এমন একটি ভয়াবহ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে সে। আরিয়ান জানিয়েছে, “আমি শুধু বিমানটির ভিডিও তুলছিলাম। বোয়িং ৭৮৭-৭ ড্রিমলাইনারটি নামার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।”

আমদাবাদ ক্রাইম ব্রাঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ আরিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে। তবে তাকে বা তার পরিবারকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। আরিয়ান তার বাবার সঙ্গে সাক্ষী হিসেবে নিজের বিবৃতি দিয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ, অপরাধদমন শাখা তাকে তলব করায় আতঙ্কিত তার পরিবার। যদিও বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, বিমান দুর্ঘটনার ছবি তোলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক কিশোরকে। কেন ছবি তুলেছিল? কোনও অভিসন্ধি ছিল কি না, তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিশ এবং অপরাধদমন শাখা। তবে পুলিশের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, কিশোরকে গ্রেফতারির যে খবর রটেছে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো। প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবেই ওই কিশোরের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।

ঘটনার সময় বিমানটি বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে ছিল। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, AI 171 মাত্র ৬৫০ ফুট উপরে উঠেছিল। বিমানবন্দরের এটিসি বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনও সাড়া মেলেনি। এরপরই এক মিনিটের মধ্যে মেঘানিনগরে ভেঙে পড়ে বিমানটি।
আরিয়ানের পরিবারের দাবি, ঘটনার পর থেকেই সে আতঙ্কে রয়েছে। তার বোন জানায়, ভাইয়ের মানসিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সে বলছে, “এখানে আর থাকতে চাই না। খুব বিপজ্জনক লাগছে।” বাড়িওয়ালাও জানিয়েছেন, আরিয়ান চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। রাতে ঘুমোতে পারেনি, কিছু খাচ্ছেও না।

বৃহস্পতিবার ওড়ার এক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। তার দাবি, যে হেতু বিমানবন্দর কাছে, তাই বিমানের ওড়ার ছবি তুলেছিল সে। এর নেপথ্যে কোনও অভিসন্ধি ছিল না। বিমানটি যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হবে আর সেই মুহূর্ত তার মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যাবে, সেটাও ভাবতে পারেনি সে। তবে ভিডিয়োটি ভাইরাল হতেই ওই কিশোরের খোঁজ শুরু হয়। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরিয়ান জানিয়েছে, যে হেতু সে বিমানবন্দর এলাকাতেই থাকে তাই বিমানের ওঠানামা প্রতি দিনই দেখতে পায়। বিমান ওড়ার ছবি ক্যামেরাবন্দি করে বন্ধুদের দেখাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু সেই ভিডিয়ো করার সময়ে বিমান দুর্ঘটনার মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হয়ে যাবে, তার কোনও আন্দাজ ছিল না। কিন্তু সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই আরিয়ানের খোঁজ শুরু হয়। তাকে ডেকে পাঠায় পুলিশ এবং অহমদাবাদের অপরাধদমন শাখা।
সে দিনের ঘটনা এবং সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে শিউরে ওঠে আরিয়ান। সে বলে, ‘‘আমার মোবাইলে ২৪ সেকেন্ডের ভিডিয়ো রয়েছে। খুব ভয় পাচ্ছি। আমার বোনকেই প্রথম ভিডিয়োটি দেখিয়েছিলাম। কারণ, সেই সময় ওই দৃশ্য দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।’’ আরিয়ানের বোনও তার ভাইয়ের জন্য উদ্বিগ্ন। সে বলে, ‘‘দাদা আমাকে ভিডিয়োটি দেখিয়েছিল। তার পর বলে এই এলাকায় থাকতে চায় না। কারণ, যে দুর্ঘটনা সে চোখের সামনে দেখেছে, যে কোনও সময় তাদেরও বিপদ ঘটতে পারে পরে জানিয়েছিল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল দাদা। ওই ঘটনা দেখার পর ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না। দু’দিন ঠিকমতো খেতে বা ঘুমোতেও পারেনি।’’

গত ১২ জুন আমদাবাদে ভেঙে পড়া এয়ার ইন্ডিয়ার AI 171 বিমান দুর্ঘটনায় বিমানযাত্রী, ক্রু সদস্য, পাইলট, বি জে মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া এবং স্থানীয়দের মিলিয়ে মোট ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে মেঘানি নগরের একটি মেডিক্যাল হোস্টেল কমপ্লেক্স।