দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অ্যাডেনোভাইরাস ধীরে ধীরে আতঙ্ক তৈরী করছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, করোনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এই ভাইরাসের প্রভাবে। যদিও এখনও এই ভাইরাসের দাপট ততটা দেখা না দিলেও শিশুদের নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।
সর্দি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল দেড় বছরের এক শিশু। তার বাড়ি নদিয়ার কল্যাণীতে। জ্বরের পাশাপাশি শিশুটির শ্বাসকষ্টের সমস্যার ছিল। সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিশুটিকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। এর পর মেডিক্যাল কলেজের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে ভর্তি ছিল শিশুটি। রবিবার ভোররাতে মৃত্যু হয়েছে তার। এর পরই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে শিশুটির মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
ফের এই ভাইরাসের জেরে প্রাণ হারাল রাজ্যের দুই শিশু।জানা গেছে, হাওড়ার উদয়নপুরের বাসিন্দা ৯ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়া থেকে শিশুটি জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছিল। প্রথমবার চলতি মাসের ২ তারিখ এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফের ভর্তি করতে হয়। শনিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে তার।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, অ্যাডেনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই প্রাণ গেছে শিশুটির। যদিও হাসপাতালের দাবি মানতে নারাজ পরিবারের লোকজন। তাঁদের দাবি, হাসপাতালের গাফিলতির জেরেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। অভিযোগ, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বিসি রায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বেড না থাকায় আইসিইউতে ভর্তি করানো যায়নি। যদিও এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
অন্যদিকে, রবিবার ভোরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একটি দেড় বছরের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ অ্যাডেনোভাইরাস। শিশুটি কল্যাণীর বাসিন্দা। বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছিল। প্রথমে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শিশুটির।
চিকিৎসকদের মতে, যে শিশুদের বয়স দু’বছরের কম, তাদের ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা বেশি। বয়স এক বছরের কম হলে ঝুঁকি আরও বেশি। এই বয়সের শিশুদের ভীষণ সাবধানে রাখতে হবে। বড়দের কারও জ্বর-সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে অবশ্যই বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, বড়দের থেকেই এই সংক্রমণ শিশুদের মধ্যে ছড়ায়।
অ্যাডিনো ভাইরাসের দাপট যখন বাড়ছে তখন তা নিয়ন্ত্রণে সজাগ কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। পুরনিগমের চিকিৎসক এবং নার্সদের ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল অফিসারদের দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শিশুদের অভিভাবকের কথা শুনে পরীক্ষা করতে হবে। বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব নাকি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, তা জানাতে হবে। শিশুর শারীরিক অবস্থা কেমন থাকছে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। বাড়িতে রাখলে অভিভাবকদের বুঝিয়ে দিতে হবে, কী দেখে তাঁরা সতর্ক হবেন। হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে শিশুর উপর নজর রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নার্সদেরও।