দেশের সময়: তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচি একশো শতাংশ সফল। বিজেপির রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। সাড়ে ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে এমনটাই বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, আরও বেশি উদ্যম ফিরে পেলাম। দ্বিগুণ উৎসাহে এবার ঝাঁপাব। একইসঙ্গে প্রত্যয়ী অভিষেকের ঘোষণা, এসব করে কোনও লাভ হবে না। কর্ণাটকের ফল প্রতিফলিত হবে আগামী লোকসভা নির্বাচনে। বিজেপি ফিনিশ হয়ে যাবে।
তাঁর অভিযোগ, বিজেপিই তো এখন কেন্দ্রীয় এজেন্সি পরিচালনা করছে। তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রায় হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছেন। ভিড় দেখে বিজেপির মনে ভয় ধরে গিয়েছে। তাই নানাভাবে নবজোয়ার যাত্রাকে আটকানোর চেষ্টা চলছে। ইডি, সিবিআই লেলিয়ে দিচ্ছে। আমি মোটেই তদন্ত আটকাতে চাইছি না। আটকাতে চাইলে আসতাম না।
দু’মাস ধরে জনসংযোগ কর্মসূচি চালাচ্ছি। শরীর খারাপ হয়েছে। এত ধকল না নেওয়ার জন্য বলেছিলেন দলনেত্রী। শুনিনি। জ্বর, গলাব্যথা হয়েছে। হাত কেটে গিয়েছে। তবুও কলকাতায় ফিরিনি। সিবিআইয়ের জন্য ফিরতে হল। ভালই হল। আরও বেশি উদ্যম পেলাম। সেই উদ্যম নিয়েই এবার ঝাঁপাব। নাম না করে মোদীকে নিশানা অভিষেকের, বলেন, নোটবন্দি তো করেছিলেন? কী লাভ হয়েছে? দু’হাজার টাকার নোট তুলে নিতে হচ্ছে কেন?
আবারও বলছি, আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে সামনে আনুন। প্রমাণ থাকলে ফাঁসির মঞ্চে উঠব। সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সুর চড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করা হচ্ছে। তদন্তকারীদেরও সময় নষ্ট হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস তো অশ্বডিম্ব। তাঁর তোপ, এভাবে ডাকাডাকি বন্ধ করুন। প্রমাণ থাকলে সরাসরি গ্রেফতার করুন। তবে আবার বলে দিচ্ছি, আমাকে এজেন্সি দিয়ে ধমকে, চমকে লাভ নেই। আমরা কখনওই বশ্যতা স্বীকার করব না। অভিষেক বলেন, যদি মাথা নত করতেই হয়, মানুষের কাছে করব। মানুষই ঈশ্বর। কিন্তু দিল্লিতে যাঁরা বসে আছেন, কখনওই তাঁদের কাছে মাথা নত করব না। এদিন নাম না করে শুভেন্দুকে নিশানা করেন অভিষেক। বলেন, আমাকে একটা তালিকা ধরিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এদের চেনেন? ৯০ শতাংশের বাড়ি তো পূর্ব মেদিনীপুর আর মুর্শিদাবাদে। সেখানে সেই সময় দলের তরফে কে দায়িত্বে ছিলেন? তাহলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না কেন? আমার কাছে যা জানতে চাওয়া হয়, সবই বলেছি। বেশিরভাগ প্রশ্নই বোগাস। অভিষেকের তোপ, বিজেপি ওয়াশিং মেশিন। ওখানে থাকলে সাত খুন মাপ। বিজেপির দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ডাকা হয় না। তাঁর তোপ, সব ক’টা চোর বিজেপির সদস্য। আমরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিজেপি ক’টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? নারদাকাণ্ডে টাকা নেওয়ার পরও তাঁকে কি গ্রেফতার করা হয়েছে? কেন হবে না? বিজেপিতে আছে বলে? সুদীপ্ত সেনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না? বিজেপিতে আছে বলে? অভিষেক বলেন, বিজেপিতে যাঁরা থাকবে, তাঁদের জন্য এক আইন। আর তৃণমূলে যাঁরা থাকবে, তাঁদের জন্য আর এক আইন। এটা চলতে পারে না। আমার যা বলার সিবিআইকে বলে এসেছি।দেশে নতুন সংসদ ভবনের মোটেই দরকার ছিল না বলেও মন্তব্য করেন অভিষেক।
এদিন অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মণ্ডহারবারের বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। এর মধ্যে কয়েকজন তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশি হয়। তৃণমূল নেতার গাড়ি থেকে কয়েকটি খাম উদ্ধার হয়েছে। এদিকে, এদিনই সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের লেখা একটি চিঠি সামনে এনে শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
এর পাল্টা হিসেবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, কুণালবাবু সাংবাদিকদের সামনে এসব দাবি করছেন কেন? তাঁর যদি কিছু বলার থাকে, তিনি আদালতে যাচ্ছেন না কেন? ইডি, সিবিআই প্রত্যেকেই আইন মেনে কাজ করছে। তাঁর তোপ, এখন তো ভাইপো ডাক পেয়েছে। এবার কাকু ডাক পাবে। ভাইপো, কাকু, পিসি সবাই আসবে। ফ্যামিলি ড্রামা হবে। দেখতে থাকুন। প্রসঙ্গত, এদিন কালীঘাটের কাকুর বাড়ি থেকে পনেরো ঘণ্টা পর বেরয় ইডি। কেন্দ্রীয় চলে যাওয়ার পর কালীঘাটের কাকু সুজয়কৃষ্ণ বলেছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।