সদ্য লোকসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। রাজ্যে ২৯টি আসন পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। গতবারের তুলনায় আসন সংখ্যা কমেছে বিজেপির। এই সাফল্য যে আগামী ২১ জুলাই উদযাপন করা হবে, তা আগেই বলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। তবে প্রশ্ন হল, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি থাকবেন?
গত বছরের ২৩ নভেম্বরে নেতাজি ইন্ডোরে কর্মী সভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেখানে অভিষেকের কোনও ছবি ছিল না। তা নিয়েও সে সময় দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল। দলের রাজ্য মুখপাত্র কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, পোস্টারে অভিষেকের ছবি থাকা উচিত ছিল।
সামনেই ২১ জুলাই। দল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর এই দিনে ধর্মতলায় শহিদ দিবসের আয়োজন করে তৃণমূল। লোকসভায় বিপুল জয়ের পর এবারের সমাবেশকে ঐতিহাসিক করে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে তৃণমূল।
ইতিমধ্যে এআইটিসির টুইটার হ্যান্ডেলের কভার পেজে ২১ জুলাইয়ের ছবিও দেওয়া হয়েছে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকলেও অভিষেকের ছবি নেই। স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের অন্দরেও কানাঘুষো শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, আবার সেই নভেম্বর বিপ্লব ফিরে আসতে পারে!
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরই নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে অভিষেক জানিয়েছিলেন, কিছুদিন তিনি ছুটি নিচ্ছেন এবং সাংগঠনিক কাজ থেকে দূরে থাকবেন। অভিষেকের ওই পোস্ট ঘিরে সে সময় দলের অভ্যন্তরে একাধিক জল্পনা তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে অভিষেকের একটি ছোট অস্ত্রোপচার হয়।
তবে ২১ জুলাইকে কেন্দ্র করে এআইটিসির টুইটার হ্যান্ডেলের কভার পেজের ছবি সামনে আসতে অভিষেকের টুইট ঘিরে ফের নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রে উঠে আসছে নভেম্বর বিপ্লবের প্রসঙ্গও।
কী হয়েছিল নভেম্বরে?
নভেম্বরে নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের কর্মী সভার নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি ঘটনা। ১০০ দিনের বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে এবং কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে অভিষেকের নেতৃত্বে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে দু’দিনের ধর্না কর্মসূচি হয়েছিল। দিল্লিতে সমস্যার সুরাহা না হওয়ায় সেখান থেকেই রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক। পুজোর মুখে টানা পাঁচদিন রাজভবনের সামনে ধর্নাতেও বসেছিলেন তিনি। পরে রাজ্যপালের আশ্বাসে ঘেরাও তুলে নেওয়া হলেও তখনই অভিষেক জানিয়েছিলেন, পুজো মিটলেই নেত্রীর নেতৃত্বে নভেম্বর থেকে ফের বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।
স্বাভাবিকভাবে অভিষেক যে এজেন্ডাকে দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেই সংক্রান্ত নভেম্বরের মিটিংয়েই তাঁর ছবি না থাকা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই প্রশ্ন উঠেছিল। এবারেও একুশের জুলাইয়ের সমাবেশ ঘিরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় নতুন করে শোরগোল তৈরি হয়েছে দলের অভ্যন্তরে।
প্রসঙ্গত, দলনেত্রীর পাশাপাশি এবারের লোকসভা ভোটে উত্তর থেকে দক্ষিণ মাটি কামড়ে প্রচার করেছিলেন অভিষেকও। লোকসভায় ২৯টি আসনে জয়ের নেপথ্যে তাই অভিষেকের ভূমিকাকেও অস্বীকার করা যায় না।
দলের একাংশের কথায়, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলে এখনও শেষ কথা বলেন তিনিই। সেদিক থেকে দলীয় কর্মসূচিতে নেত্রীর ছবি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওই মহলের মতে, যদি আগে কখনও অভিষেকের ছবি না রাখা হত, তাহলে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার কোনও জায়গা থাকতো না। কিন্তু অতীতে দীর্ঘ কয়েকবছর যেখানে দলনেত্রীর পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে অভিষেকের ছবিও রাখা হত, সেখানে আচমকা এই পরিবর্তন অনেকেরই চোখে লাগছে।
তবে দলের আর একটি সূত্রের খবর, চোখের চিকিৎসার কারণে ওই সময় সম্ভবত দেশের বাইরে থাকবেন অভিষেক। ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সংক্রান্ত বৈঠকেও তাঁর হাজির থাকার সম্ভাবনা নেই।
এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি থাকতে পারবেন একুশের সভায়? বিগত বছরগুলিতে ২১ জুলাই সফল করতে ক্যামাক স্ট্রিট অফিসে বিশেষ তৎপরতা দেখা যেত। তবে এবার ব্যতিক্রম হওয়ায় চর্চা শুরু হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, চিকিৎসা প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে একুশের আগেই ফিরে আসবেন অভিষেক। তবে এ নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। দলের এক নেতার কথায়, “কর্মীদের মধ্যে চর্চা হতেই পারে। তবে এনিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কর্মসূচির সঙ্গে যেহেতু তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকছেন না, সম্ভবত সে কারণেই ছবি রাখা হয়নি।”
দলের এক নেতার কথায়, “কর্মীদের মধ্যে চর্চা হতেই পারে। তবে এনিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কর্মসূচির সঙ্গে যেহেতু তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকছেন না, সম্ভবত সে কারণেই ছবি রাখা হয়নি।”