দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উনিশের ভোটে বাংলায় তৃণমূলের ভরাডুবির পর প্রশান্ত কিশোরকে পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছিল শাসকদল। সেই পিকে-র প্রথম কর্মসূচি ছিল, ‘দিদিকে বলো।’ সারা বাংলায় কোথায় কী অসুবিধা, কার কী সমস্যা, কোথায় কী অন্যায় হচ্ছে—সবাই একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে জানাতেন। তা পৌঁছে যেত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে। এবং সেসবের সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করত পার্টি এবং প্রশাসন। এবার কতকটা সেই মডেলই নিজের লোকসভা কেন্দ্রের জন্য চালু করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজের লোকসভা কেন্দ্রে আরও ভালো জনসংযোগের জন্য এবার এই পন্থাই বেছে নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। শনিবার সাংসদ হিসেবে নিজের আট বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি সভায় নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের জন্য টোল ফ্রি হেল্পলাইন নাম্বার ( ৭৮৮৭৭৭৮৮৭৭) চালু করেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে ডায়মন্ড হারবারের মানুষ নিজেদের যে কোন দরকারে ওই হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করে নিজদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন।
এর আগে রাজ্যে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্দিষ্ট নাম্বারে সাধারণ মানুষ নিজদের অভাব-অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কর্মসূচির সদর্থক প্রতিক্রিয়া বোঝা গিয়েছিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক জয়ের পিছনে অনেকেই এই জনসংযোগ কর্মসূচির ভূমিকা দেখেছেন। রাজনৈতিক মহল বলেছিল মানুষের মন বুঝেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানানোর বিষয়ে ‘এক্সট্রা’ নাম্বার গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে।
আগামী বছরই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপরেই লোকসভা নির্বাচন। দিল্লির লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক রণনীতি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে ‘দিদিকে বলো’র ব্যাপক সাফল্যের পরে সামনের দুই নির্বাচনের আগে ফের জনসংযোগই লক্ষ্য তৃণমূলের। এবার মানুষের অভিযোগ শুনবেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এর আগেও একাধিক ইস্যুতে নিজের কেন্দ্রের মানুষের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। করোনা নিয়ন্ত্রণে চালু করেছিলেন ‘ডায়মন্ড মডেল’।
শনিবার অভিষেক সাংসদ হিসেবে আট বছর পূর্ণ করলেন। ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত লোকসভা কেন্দ্রের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী কাজ করেছেন তার একটা রিপোর্ট কার্ডও পেশ করেছেন তিনি। পরিস্রুত পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, নারীকল্যাণ ইত্যাদি প্রভৃতির পাশাপাশি ‘বিতর্কিত’ কোভিড ব্যাস্থাপনার কথাও জায়গাও পেয়েছে সেই রিপোর্ট কার্ডে।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আগে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি দলে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুদ্ধ ঘোষণা থেকে শুরু করে কল্যাণের কুশপুতুল পোড়ানো—হইহই চলেছিল বাংলায়। এমনকি সেইসময়ে অভিষেকের খুড়তুতো ভাই আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে স্লোগান তুলেছিলেন, ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়।’ দেবাংশু ভট্টাচার্য, তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের মতো তৃণমূলের তরুণ নেতারাও সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছিলেন, অভিষেক কতটা দক্ষ প্রশাসক।
সেইসময়ে এও প্রশ্ন উঠেছিল, তৃণমূলের এই তরুণ নেতা কি নবান্নকে চ্যালেঞ্জ করছেন? যদিও অভিষেক শিবিরের তরফে সেসব নস্যাৎ করে পাল্টা বলা হয়েছিল, প্রতিটি সাংসদ যদি তাঁর নিজের কেন্দ্র নিয়ে এই রকম ভাবে ভাবেন তাহলে সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
এদিন নতুন কর্মসূচির ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল। গোটা ডায়মন্ড হারবার ছেয়ে ফেলা হয়েছে ঢাউস ঢাউস হোর্ডিংয়ে। তাতে অভিষেকের সঙ্গে রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ছবি।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দিদিকে বলো কর্মসূচি তৃণমূলকে নতুন শুরুর অক্সিজেন দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, অনেকে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিদি ইমেজের পুণর্নির্মাণও হয়েছিল ওই কর্মসূচির মাধ্যমে।
এমনিতে অভিষেক সারাবছর সাংসদ এলাকায় নিবিড় যোগাযোগ রাখেন। শুধু পরিষেবা দেওয়া নয়, ফুটবল টুর্নামেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিও করেন অভিষেক। এবার নতুন কর্মসূচি—‘এক ডাকে অভিষেক।’