দেশের সময় উত্তরবঙ্গ : কলকাতা হাইকোর্টের এজলাস ছেড়ে জনতার আদালতের মুখোমুখি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে রাজনীতির মঞ্চে প্রথম ভাষণে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিৎ ‘নো ভোট টু তৃণমূল’ স্লোগান তুলে ‘দুর্বৃত্তদের’ গদিচ্যুত করার ডাক দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিলিগুড়ির সভাতেই রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই প্রথম-ভাষণ দেওয়ায় বিজেপি তাঁকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচারে তৃণমূল বিরোধী হাতিয়ার হিসেবে অভিজিৎকে দিয়ে শান দিতে চাইছে বিজেপি। এদিনের সভায় তাঁকে হাজির করানোর ব্যাপারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন রয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এদিন অভিজিৎ ভাষণের শুরু থেকেই চাঁচাছোলা আক্রমণ শুরু করেন। তিনি বলেন, তৃণমূল দুর্বৃত্তদের দল। এদের একটি ভোটও দেবেন না। চাকরিপ্রার্থী যারা অনেক বেশি নম্বর পেয়েছে তাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। তাহলে কারা চাকরি পেয়েছেন? যাঁরা টাকা দিয়েছেন তাঁরা। এই যে দুর্বত্তরা তারা নিজেদের পকেটে টাকা ঢুকিয়েছে।
রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে ছেড়েছে। এরপরেই তিনি খাদ্য দুর্নীতির প্রসঙ্গও টেনে আনেন। বলেন, খাদ্য দুর্নীতিতে খাদ্যমন্ত্রী জেলে আছেন। শিক্ষামন্ত্রী জেলে আছেন। বাসস্থানের দুর্নীতির কথা তো আপনারা জানেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার দুর্নীতিতে কাউকে যদি ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়ে থাকে, তার মধ্যে ২৫ হাজার টাকা এদের পকেটে গেছে।
অভিজিৎ উত্তরবঙ্গের জনতার আদালতে আর্জি জানিয়ে বলেন, সামনে ছাব্বিশে একটা ভোট আসছে, সেই ভোটে এই দুর্বৃত্তদের একটা শিক্ষা দিতে হবে। সেই শিক্ষা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাদের উৎখাত করতে হবে। ক্ষমতায় আসীন এই দুর্বৃত্ত দলকে বুঝিয়ে দিতে হবে, তোমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের ভোটে একটিও ভোট তৃণমূলকে না দেওয়ার ডাক দেন অভিজিৎ। তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার শপথ নিতে বলেন প্রাক্তন বিচারপতি। সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে অভিজিৎ আরও বলেন, তৃণমূলেও ভাঙন ধরছে। কারণ এই পরিস্থিতিতে এই দলে থাকা যায় না। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে গদিচ্যুত করার জন্য লোকসভা ভোট থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার পদক্ষেপ করতে আহ্বান জানান অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এদিন শুরুতেই থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে শানালেন অল আউট অ্যাটাক। আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে তিনি বলেন, “আমাদের তিনটি প্রধান চাহিদা থাকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। খাদ্য দুর্নীতিতে তাঁদের খাদ্য মন্ত্রী জেলে আছেন। তিনি তাঁর বাড়িতে আর থাকতে পারেন না। শিক্ষা দুর্নীতিতে শিক্ষামন্ত্রী জেলে আছেন। বাড়িতে নেই। আর বাসস্থানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা চুরি করা হয়েছে। কাউকে যদি ৫০ হাজার চটাকা দেওয়া হয়ে থাকে তার থেকে সঙ্গে সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই দুবৃত্তদের আপনারা চোখের সামনে দেখেছেন। সামনেপ নির্বাচনে এই দুষ্কৃতিদের একটা শিক্ষা দিতে হবে। সেই শিক্ষা তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাতের শিক্ষা। বাংলার ক্ষমতায় আসীন দুর্বৃত্তদলটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে তোমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তোমরা যে পরিমাণ জালিয়াতি করেছ তার মূল্য তোমাদের চোকাতেই হবে।”
এলাকায় তৃণমূল বিরোধী প্রচারে জোর দেওয়ার কথাও শোনা গেল অভিজিতের গলায়। বলেন, “শপথ নিন। এলাকায় প্রচার করুন। তৃণমূলকে একটাও ভোট নয়। ওরা নারী নির্যাতন করে। সন্দেশখালির ঘটনা তো জানেন। ওদের একটা ভোটও নয়। এই শপথ আমাদের নিতেই হবে। যাতে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের বিদায়ের পথটা দেখিয়ে দেওয়া যায়। তাই এই লোকসভা নির্বাচন থেকে তাঁর উদ্যোগ নিতে হবে।”