দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ শনিবার সকাল থেকেই তামাম অসমবাসীর চোখ ছিল জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের (এনআরসি)-র সরকারি ওয়েবসাইটে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকাশিত হল নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা। দেখা গেল নতুন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লক্ষ মানুষ। বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ। গত বছরের ৩০ জুলাই ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল প্রায় ৪০ লক্ষ আবেদনকারীর নাম।
এ দিন সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল চরমে। সরকারি ওয়েবসাইট www.nrcassam.nic.in or www.assam.mygov.in- লগইন করার হিড়িক পড়ে যায়। ফলে বেশ কিছু সময়ের জন্য সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। অনলাইনে নিজেদের নামের তালিকা দেখতে অগণিত মানুষকে ভিড় জমাতে দেখা যায় সরকার পরিচালিত সেবাকেন্দ্রগুলির বাইরে।
প্রসঙ্গত তালিকা প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করেই কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্য। মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার নিরাপত্তা বাহিনী। গুয়াহাটি-সহ সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অসম পুলিশ আবেদন করেছে। অসমের উত্তরপূর্ব দিকের সুরক্ষাও যথেষ্ট আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। অসম পুলিশের তরফ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, যে সব ব্যক্তিদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।
এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে তুমুল উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বহু বাঙালি হিন্দুর নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীও।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ অসমে অনুপ্রবেশ করেছেন। সেই নিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তিও হয়েছে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সং শোধন করতে বলে। এর ফলে রাজ্যের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে প্রমাণ করতে হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে তাঁরা অথবা তাঁদের পরিবারের লোকজন ভারতীয় ছিলেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম না থাকলেও কেউ ‘বিদেশি’ বলে গ্য হবেন না। সে ক্ষেত্রে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে আবেদন করার সুযোগ থাকছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে ১০০ ট্রাইবুনাল চালু রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও ২০০ বাড়ানো হবে এবং ধাপে ধাপে সেই সংখ্যা এক হাজারে নিয়ে যাওয়া হবে। চূড়ান্ত তালিকায় নাম না থাকলে ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে আবেদন করা যাবে। কেউ ট্রাইবুনালে হেরে গেলে হাইকোর্টে যেতে পারবেন। সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ থাকবে। কিন্তু দীর্ঘ এই আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন কী অবস্থায় থাকবেন তালিকা বহির্ভূতরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রের আশ্বাস, কাউকেই ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে না। প্রত্যেককে সর্বোচ্চ আইনি অধিকার দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।