দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ কাটমানি খাওয়া আটকাতে এ বার আরও কড়া হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দিল, এক টাকার কাজ করাতে গেলেও এ বার টেন্ডার ডাকতে হবে পঞ্চায়েতকে। কোনও কাজই টেন্ডার ছাড়া করানো যাবে না।
ওই নির্দেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য প্রশ্ন উঠল, এতে কাটমানি খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তো? বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ লক্ষ টাকা বা তার বেশি অর্থের প্রয়োজন — এমন কোনও কাজ করাতে গেলে টেন্ডার ডাকতে হবে। তার মানে কি ওই কাজে এতোদিন কাটমানি খাওয়া হয়নি।
কারণ, অভিযোগ রয়েছে এলাকা ভিত্তিতে তিন-চার জন ঠিকাদারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ দেওয়া হয়। তার পর ওই ঠিকাদারের থেকে কাটমানি নেন স্থানীয় নেতা। তা ছাড়া রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, প্রশাসনের তরফে সাহায্য না করলে কি পঞ্চায়েতের এক শ্রেণির তৃণমূল নেতা কাটমানি খেতে পারতেন?
সে প্রশ্নের সবিস্তার জবাব এদিন পঞ্চায়েত দফতর থেকে মেলেনি। দফতর সূত্র শুধু জানিয়েছে, পঞ্চায়েত স্তরে কোথাও কোথাও বল্গাহীন স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি চলছিল। তা ঠেকাতেই নতুন নিয়ম করা হল। রাস্তা মেরামত থেকে শুরু করে গাছের চারা লাগানো সব কাজই দরপত্র ডেকে করতে হবে।
শুধু টেন্ডার ডাকলেই হবে না। সূত্রের খবর ওই নয়া নির্দেশিকায় পঞ্চায়েত দফতর স্পষ্ট জানিয়েছে, টেন্ডার ডাকার পর দফতরের যে ‘সিকিওর সফ্টওয়্যার’ আছে, তাতে সব তথ্য আপলোড করতে হবে। এরপর পঞ্চায়েত দফতর সেই তথ্য খতিয়ে দেখে সবুজ সংকেত দিলে তবেই সেই টেন্ডার অনুযায়ী কাজের বরাত দেওয়া যাবে।
১০০ দিনের কাজের ‘জবকার্ড’ তৈরি বা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কোনও কিছু কিনতে গেলেও তার দাম সংক্রান্ত তথ্যওই সফ্টওয়্যারে আপলোড করতে হবে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সরকার যে পদক্ষেপ করেছে তা ইতিবাচক। যদিও এতে কাটমানি খাওয়া বন্ধ করা যাবে কিনা সংশয় রয়েছে। তা ছাড়া এতে একটা উল্টো ফলও হতে পারে। ছোটখাটো সব কাজের জন্য টেন্ডার ডাকতে গেলে তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
ফলে বহু পঞ্চায়েতে কাজের গতিও ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের কথায়, রাজনীতিতে ধারনাটাই শেষ কথা। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর রাজ্য সরকার তথা শাসক দল যে ভাবমূর্তি ফেরাতে সক্রিয় সেটা বোঝা যাচ্ছে। সরকার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা তৈরি করতে চাইছে নবান্ন। যাকে ইদানীং পেশাদাররা পারসেপশন ম্যানেজমেন্ট বলেন। তবে তা আদৌ কাজে দেয় কিনা সেটাই এখন দেখার।