

দুর্গা পুজো কালী পুজোর পর এবার বাঙালি মেতে উঠেছে রাসের উৎসবে। রাধেশ্যাম সুন্দরের রাসযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে বনগাঁ হরিদাসপুর ইস্কন মন্দিরের পরিচালনায় এবং বনগাঁ পুরসভার সহযোগিতায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় বুধবার সন্ধ্যায় । বনগাঁ বিএসএফ ক্যাম্প মোড় থেকে র্যালী শুরু হয়ে এই শোভাযাত্রা যশোররোড ধরে প্রায় দু কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছাবে হরিদাস পুর ইস্কন মন্দিরে।

কৃষ্ণ রাসযাত্রা,ঐশ্বরিক প্রেম ও উদযাপন উন্মোচিত ।
— ঐশ্বরিক রস-লীলা, গোপীদের সাথে ভগবান কৃষ্ণের নৃত্যকে কেন্দ্র করে, এই উৎসবটি সমৃদ্ধ , পবিত্র আচার-অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির সংমিশ্রণকে ধারণ করে যা সারা ভারত ও বিশ্বের ভক্তদের আকর্ষণ করে।

রাস মূলত বৈষ্ণব ধর্মের উৎসব। বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় শ্রীকৃষ্ণের প্রেম প্রকৃতির উৎসব। এই উৎসবে গোপিনী সহযোগে রাধাকৃষ্ণের আরাধনাই রাসের মূল বিষয়। পুরাণে রাস উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন মতেরও উল্লেখ আছে। কোথাও শারদ রাস আবার কোথাও বসন্ত রাসের উল্লেখ পাওয়া যায়।

কার্তিক পূর্ণিমার রাতে পালিত হয় রাস উত্সব। মঙ্গলবার বিভিন্ন জায়গায় রাসযাত্রা পালন। কথিত আছে ‘রস’ থেকেই রাস কথাটির উত্পত্তি। রস অর্থে সার, নির্যাস, আনন্দ, আহ্লাদ, অমৃত ও ব্রহ্ম বোঝায়। শ্রীকৃষ্ণকে ঘিরেই পালিত হয় রাস উত্সব। এই কারণে কার্তিক পূর্ণিমার অপর নাম রাস পূর্ণিমা। দেখুন ভিডিও

বৈষ্ণবদের কাছে রাস কথাটির অন্য অর্থ বহন করে। শ্রীকৃষ্ণ কার্তিক পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনে যমুনার তীরে গোপিনীদের আহ্বান করেন এবং তাঁদের বিশ্বাস ও ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে সঙ্গদান করেন। তাই বৈষ্ণবদের কাছে রাস আসলে ভক্ত ও ভগবানের মিলন উৎসব। রাসের সঙ্গে নারী-পুরুষের হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে নাচের বিষয়টি যুক্ত। একে বলা হয় ‘হল্লীবক’ নৃত্য।

বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থে রাসের তাৎপর্য্যের উল্লেখ রয়েছে। পদ্মপুরাণে শারদরাস ও বাসন্তীরাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্ৰহ্মবৈবর্তপুরাণে বাসন্তীরাস এবং শ্ৰীমদ্ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে শারদরাসের বর্ণনা আছে। বিষ্ণুপুরাণের মতে কৃষ্ণ রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন গোপরমণীদের সঙ্গে। শ্ৰীধর স্বামী বলেছেন, বহু নৰ্তকীযুক্ত নৃত্য বিশেষের নাম রাস– ‘রাসো নাম বহু নৰ্ত্তকীযুক্তেনৃত্যবিশেষঃ’। শ্ৰীমদ্ভাগবতের মতে, শ্রীকৃষ্ণ যোগমায়াকে গ্রহণ করেই রাস অনুষ্ঠান করেছিলেন। বস্ত্রহরণের দিন গোপিনীদের কাছে শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি রাসলীলা করবেন ৷ শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের ভক্তি দেখে তাঁদের মনোকামনা পূরণ করতে রাসলীলা করেন।

কিন্তু যখনই শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের অধীন বলে ভেবে গোপিনীদের মন অহংকারে পূর্ণ হল, তখনই শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের মধ্য থেকে অন্তর্হিত হয়ে যান। তখন গোপিনীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন য ভগবানকে ‘একমাত্র আমার’ বলে ভেবে অহংকারের ফলে শ্রীকৃষ্ণকে তাঁরা হারিয়ে ফেলেছিলেন। ত্রিজগতের পতি শ্রীকৃষ্ণকে কোনও বন্ধনে আটকে রাখা যায় না। তখন গোপিনীবৃন্দ একাগ্রচিত্তে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করতে শুরু করেন। ভক্তের ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান গোপিনীদের মানব জীবনের পরমার্থ বুঝিয়ে দিয়ে তাঁদের অন্তর পরিশুদ্ধ করেন। এইভাবে রাস উৎসবের প্রচলন হয় বলে মনে করা হয়।



