

রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে গেল স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা SIR-এর মূল পর্বের কাজ। আজ, মঙ্গলবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি শুরু করেছেন BLO-রা। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম, হুগলি, শিলিগুড়ি, কোচবিহার— সর্বত্র এক ছবি। সকাল থেকে ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়ছেন BLO-রা। হাতে তুলে দিচ্ছেন এনিউমারেশন ফর্ম। বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কী করতে হবে, কোথায় কী লিখতে হবে।
এই এনিউমারেশন পর্বের জন্য রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে BLO-দের। মূলত স্কুল শিক্ষক, শিক্ষিকারাই BLO হিসেবে কাজ করছেন। এ দিন হাতে লিস্ট নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে যাচ্ছেন তাঁরা। ভোটাররা যেমন ফর্ম ফিলআপের জন্য প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে প্রস্তুত, BLO-রাও খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছেন সব তথ্য যথাযথ কলামে লেখা হচ্ছে কি না।

এনিউমারেশন ফর্মে লিখতে হবে জন্মতারিখ, আধার, ভোটার কার্ডের নম্বর, মোবাইল নম্বর, বাবা, মা, স্বামী, স্ত্রীর এপিক নম্বর (যদি থাকে)। একই সঙ্গে ২০০২ সালের SIR-এ নাম থাকলে সেই তথ্য দিতে হবে। যদি বাবা, মা বা আত্মীয়ের নাম থাকে, সেই বিস্তারিত দিতে হবে।

BLO-রা যে হেতু এখনও অন-ডিউটি পাননি। ফলে নিজেদের কর্মস্থলের কাজ সেরে যেতে হবে বাড়ি বাড়ি। সারা দিনের যে কোনও সময়েই আপনার বাড়িতে যেতে পারেন তাঁরা। BLO বাড়িতে এলে আপনি যদি না থাকেন, চিন্তার নেই। তিন বার আপনার বাড়িতে আসবেন BLO। তার পরেও না পেলে, বাড়ির দরজায় নোটিস দিয়ে ফর্ম রেখে যাবে। ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এনিউমারেশন ফর্ম ফিলআপ পর্ব।

বাড়িতে থাকলে হাতে হাতেই ফর্ম নিতে পারবেন ভোটার। যদি বাড়িতে না থাকেন, কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তা হলে, অনলাইনে ফর্ম ফিলআপ করতে পারবেন। তবে তা শুরু হতে আরও দিন দুই সময় লাগবে।
একই সঙ্গে ১ জানুয়ারি, ২০২৬-এর মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে, তারাও ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারবেন এই এনিউমারেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই। ৬ নম্বর ফর্ম নিতে হবে তার জন্য। ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। ৭ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

আপনার ফর্মটি পূরণ করবেন কীভাবে? কিংবা ওই ফর্ম কেমন দেখতে হবে? কেমন দেখতে হবে Form?
যদি ফর্মটিকে ভাল করে লক্ষ্য করা হয়, তা হলে দেখা যাবে, এতে তিনটে ধাপ রয়েছে। ফর্মের একদম শুরুতে থাকছে ভোটারের নাম ও ঠিকানা দেওয়ার জায়গা। যদিও এই জায়গাটি বিএলও-দের জন্য। এর পাশেই রয়েছে সিরিয়াল নম্বর, পার্ট নম্বর। তার পাশে QR Code। যেটিও বিএলও-দের সুবিধার্থে। প্রতি ভোটারের জন্য আলাদা QR Code তৈরি করা হয়েছে কমিশনের তরফে। তারপর থাকবে ভোটারের একটি পুরনো ছবি, যা সচিত্র ভোটার কার্ডেও রয়েছে। তার পাশে থাকবে বর্তমান ছবি দেওয়ার জায়গা।
এরপর দ্বিতীয় ধাপ। সেখানে থাকছে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ। প্রথমেই ভোটার দিতে তাঁর জন্ম তারিখ। এরপর দিতে হবে আধার নম্বর। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। দিতে মোবাইল নম্বর। অবশেষে ভোটারের বাবার নাম। সঙ্গে ভোটার কার্ডের এপিক নম্বর। একই ভাবে দিতে হবে মায়ের নাম। সঙ্গে এপিক নম্বর। কোনও ভোটারের যদি বাবা-মা আর জীবিত না থাকেন। বিশেষ করে মহিলাদের সুবিধার্থে স্বামীর নাম দেওয়ার জায়গা রেখেছে কমিশন। সঙ্গে তাঁর ভোটার কার্ড থাকলে দিতে হবে এপিক নম্বর।
এবার আসা যাক তৃতীয় ধাপে। এটি এই ফর্মের শেষ পর্যায় বলা যেতে পারে। যেখানে থাকছে দু’টি জায়গা। প্রথমটিতে দিতে হবে ২০০২ সালের সংশোধিত তালিকায় থাকা নির্বাচকের নাম এবং তাঁর সঙ্গে ভোটারের সম্পর্ক। দ্বিতীয়টিতে দিতে হবে সেই আত্মীয়ের পরিচয়।

প্রথম বাক্সে অর্থাৎ ফর্মের বাঁদিকে প্রথমে দিতে হবে ভোটারের নাম। তারপর এপিক নম্বর। এরপর দিতে হবে আত্মীয়ের নাম, বলে রাখা প্রয়োজন, এই আত্মীয়ের কোনও সংজ্ঞা দেয়নি কমিশন। তবে সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট ভোটারের বাবা, মা কিংবা ঠাকুরদা দিকের কেউ, যাঁর ২০০২ সালের তালিকায় নাম রয়েছে, তাঁর নাম এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। এরপর তাঁর সঙ্গে কি সম্পর্ক। সঙ্গে লিখতে হবে জেলা ও বিধানসভার নাম। দিতে হবে ওই কেন্দ্র ও পার্টের নম্বর। এবার এই ফর্মের ডানদিকে আসা যাক।
অর্থাৎ দ্বিতীয় বাক্স। ২০০২ সালের সংশোধিত তালিকায় ভোটারের নাম না থাকায়, তৃতীয় ধাপের প্রথম অংশে তিনি যদি নিজের আত্মীয় বা বাবা-মায়ের নাম দিয়ে থাকেন। তা হলে দ্বিতীয় অংশে তাঁকে প্রদান করতে হবে সেই আত্মীয় বা তাঁর বাবা-মায়ের সমস্ত তথ্য। দিতে হবে নাম, এপিক নং, সম্পর্ক ইত্যাদি। অনেক ফর্ম ফিল-আপের ক্ষেত্রে ভুল করে থাকেন। চেষ্টা করবেন এক্ষেত্রে যাতে না ঘটে। কমিশনও সেটাই বলছে। মনে সংশয় তৈরি হলে, যোগাযোগ করবেন বিএলও-র সঙ্গে।
কখন বাতিল হবে আপনার ফর্ম?

- এই বাতিলের ব্যাপারটাও ফর্মেই উল্লেখ করে দিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে –
যদি আপনি দেশের নাগরিক না হন। - যদি আপনার দেওয়া তথ্য ভুয়ো বা মিথ্য়া হয়। তখনই বাতিল হবে ফর্ম। উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কমিশন।



