

ধনতেরাস শুধুই সম্পদের উৎসব নয়। এটি সুখ ও সমৃদ্ধির এক বৃহৎ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। ধনতেরাসের সকলের জীবনে সম্পদের পাশাপাশি আনন্দ ও ঐশ্বর্য নিয়ে আসে। ধনতেরাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, সেই কাহিনির অব্যবহিত পর থেকেই মহাধুমধামসহকারে প্রতি বছর হিন্দুরা ধনতেরাস উৎসব পালন করে থাকে।

ধন ত্রয়োদশী তিথিটি অত্যন্ত শুভ। আশ্বিন বা কার্তিক মাসের (যে বছর যেমন পড়ে) কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিনটি সারা ভারতে ধনতেরস বা ধন ত্রয়োদশী হিসেবে পালিত হয়। অবাঙালিরা এই ত্রয়োদশীকে দেওয়ালির প্রথম দিন বা সূচনা পর্ব বলে মানেন। এই দিন বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললে পরিবারের সবার কল্যাণ হয়, সংসারে সমৃদ্ধি আসে। কী সেই নিয়মনীতি? শাস্ত্র কী বিধান দিচ্ছে?
বিশিষ্ট বাস্তুবিদ জ্যোতিষ বিদদের কথায় ,ধন ত্রয়োদশীর আগে বাড়িঘর খুব ভাল করে সাফসুতরো করে নিতে হবে। বিশেষ করে বাড়ির সদর দরজা বা ফ্ল্যাটের মেন ডোর যেন ঝকঝকে থাকে। কারণ এতটাই পজিটিভ এনার্জির পাওয়ার পয়েন্ট। ধনতেরসের দিন সদর দরজার দু’পাশে মঙ্গল ঘট বসাবেন নিজের আরাধ্য দেবতার নাম জপ করে। লাল হলুদ ফুলে সদর দরজা সাজালে দেখতেও যেমন ভাল লাগবে তেমন অশুভশক্তির বিনাশ হবে।

ডোরম্যাট,পর্দা-আপহোলস্ট্রি, কার্পেট-এই ধরনের জিনিস যা সচরাচর পাল্টানো হয় না ,বা পরিস্কার করা হয় না, সেগুলোর দিকে আগে নজর দিতে হবে। নতুন ডোরম্যাট কিনতে পারেন বা খুভ ভাল করে ওয়াশ করিয়ে নিতে পারেন।আর বাড়িতে জমিয়ে রাখা অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেলে দিতে হবে।
রান্নাঘরে ফাটা কাপ ,ভাঙা প্লেট, তোবড়ানো বাসন, খারাপ হয়ে যাওয়া টোস্টার, মিক্সার-গ্রাইন্ডার-এসব জমিয়ে রাখবেন না। ধনতেরসের আগে রান্নাঘর খুব ভাল করে পরিস্কার করুন। কারণ একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের পজিটিভ এনার্জির কেন্দ্র কিচেন।
জায়গার অভাবে আজকাল ঠাকুরঘর খুব কম বাড়িতে থাকে। তবে একটা দেবতার স্থান বা ঠাকুরের আসন তো প্রতি গৃহস্থ বাড়িতে থাকেই। ধনতেরসের আগে এই দেবতার আসনকে ভক্তি ভরে পরিস্কার করে নতুন বস্ত্র পেতে সাজাতে হবে।ধনতেরসের দিন সকালে দীপধূপ জ্বেলে দেবতার পুজো করুন। সংসারে শান্তি সমৃদ্ধি আসবে।

ধনতেরাসের তিথি ও শুভক্ষণ
ধনতেরাস এই বছর ১৮ অক্টোবর অর্থাৎ শনিবার পড়েছে। ধনতেরাসের তিথি শুরু হবে ১৮ অক্টোবর দুপুর ১২ টা বেজে ১৮ মিনিটে। তিথি শেষ হবে ১৯ অক্টোবর দুপুর ১টা বেজে ৫১ মিনিটে। হিন্দু পঞ্জিকায় সকালের তিথিই তারিখ নির্ধারণের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যাকে উদয়তিথি বলা হয়।

ধনতেরাসের উৎপত্তির নেপথ্যে
ধনতেরাসের উৎপত্তির নেপথ্যে যে কাহিনি রয়েছে, তা হল রাজা বলির কাহিনি। বিষ্ণুর এক অবতারও এই কাহিনির সঙ্গে জড়িত। তখন রাজা বলির পৃথিবীতে প্রবল প্রতিপত্তি। যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি দখল করে বসেছেন এই বিশাল বিস্তৃত সাম্রাজ্য। তাঁর এই রাজ্যজয় ও সম্পত্তির নেশা ভীত করেছিল সমস্ত দেবতাগণকে। সবাই গিয়ে তখন শরণাপন্ন হন ভগবান বিষ্ণুর। ভগবান বিষ্ণু তখন অবতীর্ণ হন বামন রূপে। রাজা বলির যজ্ঞে বামন হয়ে তিনি গেলে রাজা তাঁকে কিছু দানের ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
শুক্রাচার্য বুঝেছিলেন তাঁর স্বরূপ
রাজা বলির সেই যজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন শুক্রাচার্য স্বয়ং। তিনি বামনের স্বরূপ চিনতে পারেন। সতর্ক করেন রাজা বলিকে। কিন্তু মদগর্বিত রাজা পিছপা হননি। তিনি বামনকে ইচ্ছাপ্রকাশ করতে বলেন। সেই সময় বামনরূপী বিষ্ণু তাঁর তিনটি পদক্ষেপের সমান জমি কামনা করেন। রাজা ভাবেন, এ আর এমন কী। কিন্তু বামনের প্রথম পদক্ষেপে গোটা পৃথিবী আচ্ছন্ন হয়। দ্বিতীয় পদক্ষেপে গোটা স্বর্গ। এর পর তৃতীয় পদক্ষেপ কোথাও রাখার স্থান হচ্ছিল না। সেই সময় বামনই প্রশ্ন করেন রাজাকে, বলুন কোথায় রাখব। রাজা তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। তিনি মাথা নত করে বলেন, আমার মস্তকে রাখুন প্রভু। এরপর তৃতীয় পদক্ষেপ তাঁর মস্তকে রাখেন বিষ্ণু। কথিত আছে, রাজা বলির কাছ থেকে যা যা পুনরুদ্ধার করেছিলেন বিষ্ণু, সেসবই বহুগুণ বাড়িয়ে ফেরত করেন দেবতাগণকে। সেখান থেকেই পালন করা হয় ধনতেরাসের এই উৎসব।