


ঘন ঘন ‘মুড সুইং’ আবহাওয়ার। এই হাল্কা রোদের ঝিলিক, তো পরক্ষণেই বৃষ্টি। দুর্গাপুজোর আনন্দ পণ্ড করবে বৃষ্টি? এখন এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে পুজো উদ্যোক্তা থেকে আমজনতার মনে। সকাল হলেই যেন এখন আকাশের মুখ ভার, জমাট বাঁধা ঘন কালো মেঘ। আবার কখনও দিন শুরু হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি দিয়ে। এই আবহাওয়াতেই যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বঙ্গবাসী।

এদিকে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব শুরু হতে হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। ঝলমলে রোদ আর পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ দেখার জন্য চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে বাঙালির। তবে পরের পর নিম্নচাপের ঠেলায় দুর্গাপুজোও কি ভাসতে চলেছে ভারী বৃষ্টিতে? সেই আশঙ্কাই এখন সকলের মনে। কেমন থাকবে পুজোর সময় আবহাওয়া?
শনি এবং রবিবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, এই পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। ফলে উইকএন্ড শপিংয়ের প্ল্যানে বৃষ্টির স্পয়েলার দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু সোমবার থেকে ফের বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে।

হাতে বাকি আর মাত্র ২৩ দিন। তার আগে একের পর এক নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি থামছেই না বাংলায়। তবে কি এবার পুজো কাটবে মাথায় ছাতা নিয়ে? হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবার। জানা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে পূর্ব ভারতের দক্ষিণবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরবঙ্গ, সিকিম এই সমস্ত জায়গায় স্বাভাবিকের থেকে অধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
হাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, সাধারণত অক্টোবরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় থাকে মৌসুমি বায়ু। এবারেও তেমনটাই থাকার সম্ভাবনা। ফলে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলতে পারে ততদিন। যদিও ষষ্ঠী থেকে দশমীর মধ্যে বৃষ্টি হবে কি না, সে পূর্বাভাস এত তাড়াতাড়ি দিতে পারছে না হাওয়া অফিস।

বুধবারও সারা দিন কলকাতা সহ জেলায় জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও রয়েছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। এদিন বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি সহ বেশ কিছু জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পাশাপাশি বইবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া।
শুক্রবারও আবহাওয়ার তেমন কোনও উন্নতির সম্ভাবনা নেই। তবে শনি ও রবিবার বৃষ্টি কমবে দক্ষিণবঙ্গে। যদিও রেহাই মিলবে মনে করার কোনও কারণ নেই। সোমবার থেকে ফের বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই। এমনটাই জানাচ্ছে হাওয়া অফিস।
এদিকে, উত্তরবঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। শুক্রবার ও শনিবার বৃষ্টির পরিমাণ আরও কম থাকবে। তবে রবিবার থেকে ফের বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ। রবিবার ও সোমবার কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
এটা ঘটনা, ফের নিম্নচাপ ঘনিয়েছে বঙ্গোপসাগরে। গত দেড় মাসে এটি ১৩ নম্বর নিম্নচাপ বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। উত্তর–পূর্ব বঙ্গোপসাগরে মায়ানমার উপকূল সংলগ্ন এলাকায় তৈরি ঘূর্ণাবর্তটি মঙ্গলবারই নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আর তার জেরেই চলছে বৃষ্টি। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ওড়িশার উপর দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে। পাশাপাশি একটি মৌসুমী অক্ষরেখা রাজস্থানের বিকানির, চুরু, গুনা হয়ে মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের উপর দিয়ে ওডিশার কেওনঝাড় হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এগিয়েছে। যার জেরে মৎস্যজীবীদের ২ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর অবধি গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
চলতি বর্ষায় এখনও পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে সামগ্রিক ভাবে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম বৃষ্টি পেয়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি। কলকাতায় স্বাভাবিকের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।
পুজো যখন দোরগোড়ায়, সেই সময়ে মুখভারী আকাশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাঙালির। পুজোয় কি বৃষ্টি হবে? তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর পুজোর সময়ে রাজ্য থেকে বিদায় নেবে না মৌসুমী বায়ু। তবে পুজোর সময়ে বৃষ্টি হবে কি না, তা এত আগে থেকে নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়, জানাচ্ছেন আবহবিদরা।