Mamata Banerjee‘৯০ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছি…’, ভোট চাইতে আসিনি, দিঘা থেকে ফিরেই বড়বাজারে মমতা

0
20
হীয়া রায় , দেশের সময়

কলকাতা: দিঘা থেকে ফিরেই বৃহস্পতিবার বড়বাজারের মেছুয়ায় গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।ওই হোটেল চত্বর পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ‘ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়েই এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেল। আমি রাত জেগে যা সব তদারকি করেছি। ৯০ জনের প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে।’ ক্ষোভের সুরেই তিনি জানিয়েছেন, ১৯৮৯ সালের বাড়ি। বিল্ডিংয়ের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। এই ধরনের বিপজ্জনক বাড়ি বা হোটেল চিহ্নিত করতে বলব। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, ‘এ ভাবে চলতে পারে না।’

গত মঙ্গলবার বড়বাজারের হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে  ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্ট হোটেলটি সিল করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আশেপাশের ভগ্ন বাড়ি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

পায়ে হাঁটার পথে একাধিক দাহ্য পদার্থ দেখে ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এত দাহ্য পদার্থ কেন? আগে জীবন রক্ষা করুন।” মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, “আমি ভোট চাইতে আসিনি। প্রয়োজনে আপনারা আমাকে ভোট নাও দিতে পারেন, কিন্তু নিজেদের জীবন রক্ষা করুন।”

যে হোটেলটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ভগ্ন বাড়ি। সেটি দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বার বার বলা হচ্ছে এই ভগ্ন বাড়িগুলো থেকে বেরোনোর জন্য। এগুলো এখনই সংস্কার না করলে তো ভেঙে পড়বে। তখন আপনারাই বলবেন, সরকার কী করছিল? কেন এদের সরানো হল না? কিন্তু কেউ যদি না সরে আমরা কি ধাক্কা দেয় বের করব?”

এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আসার আগে থেকেই বড়বাজারের ঘটনাস্থলে ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, কলকাতার পুলিশ কমিশমার মনোজ ভার্মা। তাঁদের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কলকাতা পুলিশ, কর্পোরেশন এবং দমকলকে বলব, বিশেষ কমিটি গঠন করতে। ১৫ দিনের মধ্যে এবিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে, কোথায় কোথায় এরকম ভগ্ন বাড়ি রয়েছে। কোথায় কোথায় অগ্নি নির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। কোথায় কোথায় বেআইনি নিমার্ণ রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, বড়বাজার এবং জোড়াসাঁকো এলাকায় এরকম প্রচুর ভগ্ন বাড়ি রয়েছে। বহু অনুরোধেও তাঁদের সরানো যায়নি। এরপরই হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১৫ দিন সময় দিচ্ছি তার মধ্যে কেউ কথা না শুনলে, না সরলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” এও বলেন, “আমরা তো সারাজীবন ছেড়়ে যেতে বলছি না, তিন মাসের মধ্যে তো সংস্কার করে আবার আপনাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”

একই সঙ্গে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ করবে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে যদি কোনও জনপ্রতিনিধিও বাধা দিতে আসে আমরা বরদাস্ত করব না। পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ করবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, একে ঘিঞ্জি এলাকা, তার ওপর প্রচুর দাহ্য পদার্থ, সেই সঙ্গে অনেকে বেআইনিভাবে নির্মাণ গড়ে তুলছেন। এ জিনিস বরদাস্ত করা হবে না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার দিঘা থেকেই রাতভর তিনি আগুনের পরিস্থিতির মনিটরিং করছিলেন। ঘিঞ্জি এলাকা এবং আশেপাশে ভগ্ন বাড়ি থাকায় দমকলকে উদ্ধারকাজে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “দমকল কর্মীদের ধন্যবাদ, ওরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশের বিল্ডিং দিয়ে ভেতরে ঢুকে ৯০ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। কিন্তু হোটেলের ঘরের ধোঁয়া বাইরে বেরোনোর জায়গা ছিল না। ছিল না হোটেলের ভিতর পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা। দু’জন তো সিঁড়ির কাছ অব্দি পৌঁছেও বাইরে বেরোতে পারেনি।ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে।”

ঘটনার পর সামনে এসেছে সংশ্লিষ্ট হোটেলটির একাধিক অব্যবস্থার প্রসঙ্গ। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে হোটেলের এক মালিক ও ম্যানেজারকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে হোটেল মালিক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “হোটেলের ব্যবসা দেখলেই হবে না, অতিথিদের সুরক্ষাও দেখতে হবে। এটা মানুষের জীবনের বিষয়। জীবন চলে গেলে তো আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।” 

ইতিমধ্যে নিহতদের জন্য পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “টাকা দিয়ে তো আর মানুষের জীবনের দাম মেটানো যায় না। তাই সুরক্ষার প্রশ্নে সকলকেই সচেতন হতে হবে।”

Previous articleISKCON যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই !বনগাঁ হরিদাসপুর ইসকন মন্দিরে বৈদিক মতে বিয়ের পর বার্তা নব দম্পতির: দেখুন ভিডিও
Next articleGopalnagar News পাকিস্তানের পতাকা লাগিয়ে নাশকতার ছক বানচাল করল পুলিশ , গ্রেপ্তার ২: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here