জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার পর বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচ পদক্ষেপ করেছিল ভারত। ইসলামাবাদকে কড়া বার্তা দিয়ে বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে তলব করা হয় পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ কূটনীতিককে। এই বিষয়ে সরকারের কোনও মন্ত্রকের তরফে কিছু জানানো না-হলেও, সংবাদ সংস্থা এএনআই এমনটাই জানিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামের জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভারত যে কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে, বুধবার সন্ধেয় তা স্পষ্ট করেছিল বিদেশ মন্ত্রক।
পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল, জলচুক্তি স্থগিত, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধর মতো একাধিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের কথা জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। এমনকী নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের আধিকারিকদেরও এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছিল।

সূত্রের খবর, শুধুই ঘোষণায় আটকে না থেকে বুধবার মধ্যরাতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল ভারতে থাকা পাক কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে। সেখানে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তাঁর হাতে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার নোটিস ধরানো হয়েছে।

সূত্রের দাবি, নয়াদিল্লির পাক দূতাবাসে থাকা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা, বায়ু উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ (পার্সোনা নন গ্রাটা) বলে সম্বোধন করে সাতদিনের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামের জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবারই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, কাউকে রেয়াত করা হবে না। বুধবার দেশে পৌঁছে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন তিনি। তারপরই কড়া পদক্ষেপ করেছে বিদেশ মন্ত্রক।

বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হল। শুধু তাই নয়, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের আধিকারিকদেরও এক সপ্তাহের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে।
ইসলামবাদের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আধিকারিকদের দেশে ফেরার নির্দেশও দিয়েছে নয়াদিল্লি। এও স্পষ্ট করা হয়েছে, পাক নাগরিকদের আপাতত আর ভিসা দেওয়া হবে না।
যদিও পহেলগামের হামলার ঘটনার সঙ্গে তাঁদের যোগ নেই, এই দাবি করেছে পাকিস্তান। কিন্তু পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন এই হামলার পিছনে রয়েছে বলে ইতিমধ্যে স্বীকার করেছে। গোটা কর্মকাণ্ডের পিছনে পাক সেনা ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই রয়েছে বলেও দাবি। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জঙ্গি হামলার ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ বড় পদক্ষেপ করেছে মোদী সরকার। এবার সেদেশের পাক কূটনীতিক সাদ আহমেদ ওয়ারাইচকে মধ্যরাতে ডেকে পাঠিয়ে ভারত ছাড়ার নোটিস ধরানো হল।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি নাগরিক রয়েছেন। অভিযোগ, পর্যটকদের ধর্ম পরিচয়ের ভিত্তিতে বেছে বেছে গুলি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি ধর্মের মানুষ ছাড়া কাউকে রেয়াত করা হয়নি। এই ঘটনার পর তিন বাহিনীকেই সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। উচ্চপর্যায়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
