জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁও-এ গতকাল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি চারজন জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে- আদিল গুরু, আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ ও আবু তালহা। তাদের হাতে ছিল তিনটি একে-৪৭ রাইফেল এবং একটি এম৪ রাইফেল। জানা গেছে, তারা পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে জড়িত এবং অন্তত দুইজন বিদেশি নাগরিক।
এই বর্বর হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।

আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও দুই মিনিট নীরবতা পালন করেছেন। নীচের ছবিতে বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি এ জি মসিহ নীরবতা পালন করছেন।পহেলগামের হামলার ঘটনায় নিহতদের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন ।


প্রথমে গুলি নয়, আইডি বিস্ফোরণের ছক করেছিল জঙ্গিরা। তবে পরে পরিকল্পনা বদলে দু’টি দলে ভাগ হয়ে যায় জঙ্গিরা। তার পর একে ৪৭ নিয়ে পর্যটকদের উপর হামলা চালায় তারা। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর এমনই তথ্য উঠে আসছে। এ-ও জানা যাচ্ছে, মোট ছ’জন ঘাতক ছিল। তাদের মধ্যে দু’জন আবার স্থানীয় বাসিন্দা। তারা সকলে পাকিস্তানে গিয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় অন্তত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। মৃত পর্যটকদের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা যেমন রয়েছেন, তেমনই আছেন বিদেশিরাও। জানা যাচ্ছে, ওই জঙ্গিদের পরনে ছিল খাকি পোশাক। তাদের সঙ্গে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং প্রচুর বুলেট। সূত্রের খবর, হামলার আগে জঙ্গিরা ঘণ্টাখানেক ধরে এলাকা রেকি করেছিল। হামলা চালানোর পর কোন রাস্তা দিয়ে তারা পালাবে, সব ছকই কষে নিয়েছিল তারা। আর সেই কাজ সহজ করে দিয়েছিল দুই হামলাকারী। কারণ, তারা দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে পাকিস্তানে গিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় তারা। পরে পর্যটকদের সঙ্গে মিশে গিয়ে পহেলগাঁওয়ে হামলা চালিয়েছে।

শুধু তাই নয়, হামলার আগে পুরো এলাকা রেকি করেছিল জঙ্গিরা। আর গুলি করার আগে পর্যটকদের নাম এবং পরিচয় জিজ্ঞাসা করে তারা। কর্নাটকের বাসিন্দা পল্লবী রাও ভূস্বর্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন স্বামী ও পুত্রের সঙ্গে। তাঁর দাবি, স্বামীকে গুলি করলেও তাঁকে মারেনি ঘাতকেরা। বরং তিনি যখন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাকেও মেরো ফেলো,’ তখন এক জঙ্গি বল, ‘না, তোমায় মারব না। তুমি গিয়ে মোদীকে বোলো।’’
গোটা দেশ জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, আর নিরাপত্তা সংস্থাগুলি হামলাকারীদের সন্ধানে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে।
হামলার খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তড়িঘড়ি কাশ্মীর পৌঁছে রাজ্যপাল মনোজ সিনহা ও মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি সৌদি আরব সফরে ছিলেন, তাঁর সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। তিনি টুইটে জানান, “এই বর্বর ঘটনার পেছনে যারা আছে, তাদের বিচার হবেই। আমাদের সংকল্প আরও দৃঢ় হবে।”

আজ নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অমিত শাহ বলেন, “ভারত সন্ত্রাসের সামনে মাথা নত করবে না। এই কাপুরুষোচিত হামলার অপরাধীরা ছাড় পাবে না।”
বেঁচে ফেরা পর্যটকদের বক্তব্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবাদীরা ধর্ম জিজ্ঞেস করে পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের দেহ ইতিমধ্যেই তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পর্যটকদের সহায়তার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক বিমান সংস্থাগুলিকে ভাড়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে অনুরোধ করেছে।
এদিকে, হামলার পর দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের বড় বড় শহরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী সর্বত্র তৎপর।
