Mamata Banerjee স্কুলে যান, মাইনে পাবেন,চাকরিহারাদের আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী, মুর্শিদাবাদে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার বার্তা মমতার

0
13
অর্পিতা বনিক, দেশের সময়

মেদিনীপুরের সভা থেকে চাকরিহারাদের আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারের সভা থেকে SSC ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারাদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, গরমের মধ্যে বসে না থেকে তাঁরা যেন স্কুলে ফিরে যান। তাঁরা যেন সরকারের উপর ভরসা রাখেন। সকলে মাইনে পাবেন। একই সঙ্গে নাম না করে মমতার নিশানা, ‘বাংলায় কয়েকটা লোক আছে শিক্ষকদের চাকরি খাওয়ার জন্য, সরকারি চাকরি খাওয়ার জন্য। ওরা মানুষের কাজ করে না, ওরা কোর্টে যায় আর PIL করে।’

মমতা এ দিন দাবি করেছেন, কিছু লোক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্ররোচনা দিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। মমতার কথায়, ‘আমরা চাকরি দেবো আর ওরা চাকরি খাবে? আপনারা স্কুলে যান। আমি তো আপনাদের বলেছি, সুপ্রিম কোর্ট আপনাদের টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল। আমরা তো রিভিউ পিটিশন করেছিলাম। বলেছি তো, আপনারা মাইনে পাবেন। সিস্টেম অনুযায়ী আপনারা মাইনে পাবেন। এর জন্য কোনও উত্তেজনার দরকার নেই।’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য তেমন কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। ফলে তাঁরা আরও বেশি করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। প্রয়োজনে রিভিউয়ে যাবেন। মমতার কথায়, ‘এ টুকু বিশ্বাস আমাদের উপর করতে পারেন। যারা আপনাদের চাকরি খেয়েছে, তাদের উপর ভরসা করবেন না। আইন মেনে আমাদের চলতে হয়, আইন পথ খুলে দেয়।’

হাইকোর্টে প্রাথমিকের একটি মামলা নিয়েও এ দিন প্রকাশ্য সভা থেকে মমতা জানান, ৩৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে ছাঁটাই করতে হবে বলে কেস করা হয়েছে। কারও নাম না করে এ দিন মমতা এক সময়ে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য সম্পর্কে বলেন, ‘একদিন আমাদের মন্ত্রিসভায় থেকে তারাও কম লোককে চাকরি দেয়নি। এখন মানুষের চাকরি কাড়ার আগে ভাবতে লজ্জা লাগছে না, ওদের পরিবার আছে, সন্তান আছে।’


মমতার অভয়বাণী, শিক্ষক শিক্ষিকারা নিশ্চিন্তে ক্লাস করুন। তাঁদের মাইনে নিয়ে ভাবতে হবে না। আইনের মধ্যে থেকেই রাজ্য সরকার কাজ করবে। মমতা এও জানান, সোমবার তিনি রাত ১২টা অবধি ফোনে কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘কেউ কেউ রিজিড হয়ে আছেন, টেন্টেড-আনটেন্টেড লিস্ট বের করতেই হবে। আরে আপনার কী যায় আসে এই তালিকা নিয়ে? ওটা দেখার জন্য রাজ্য সরকার আছে, কোর্ট আছে। আপনার লিস্ট দেখে লাভ নেই। আপনার চাকরি আছে কি না সেটা দেখা দরকার। আপনি ঠিকমতো মাইনে পাচ্ছেন কি না, সেটা দেখা দরকার।’

অন্যদিকে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে মুর্শিদাবাদে তুঙ্গে অশান্তি। এবার সেখানেই সরাসরি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর কলেজ মাঠে এক প্রশাসনিক সভা থেকে তিনি ঘোষণা করেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই তিনি মুর্শিদাবাদ সফরে যাবেন।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘ধুলিয়ানের দু’টি জায়গায় অশান্তি হয়েছে। এর নেপথ্যে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। বহিরাগতরা কিছু স্থানীয় মানুষকে ব্যবহার করে গোলমাল বাধিয়েছে। আমরা সেই ষড়যন্ত্র সামনে আনবই।’

ওই সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, যাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, তাঁদের বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অধীনে নতুন করে বাড়ি বানিয়ে দেবে সরকার। দোকানঘর যারা হারিয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মে মাসের শুরুতেই মুর্শিদাবাদে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিজেই নেবেন।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এতদিন অভিযোগ করছিলেন, অশান্তির পরেও মমতা কেন মুর্শিদাবাদে যাননি। এবার মঞ্চ থেকেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, ‘সঠিক সময়েই যাব। দুঃখজনক অশান্তির পিছনে যাঁরা রয়েছে, তাঁদের মুখোশ খুলে দেব।’

ওয়াকফ আইন সংশোধনের প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মুর্শিদাবাদে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে জাফরাবাদ, সুতি, জঙ্গিপুর, ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও, অশান্তির জেরে কয়েকটি পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে। প্রাণ গিয়েছে জাফরাবাদে এক বাবা-ছেলের। তাঁদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়করাও সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেছেন।

পূর্ব ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য এদিন মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরে ছিলেন। সেখানে প্রশাসনিক সভায় দাঁড়িয়ে শুধু সৌর প্রকল্প নিয়েই নয়, রাজ্যের নানা প্রসঙ্গে নিজের মতামত রাখেন তিনি। মুর্শিদাবাদের প্রসঙ্গ উঠতেই বলেন, ‘বহিরাগতরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমাদের সরকার শান্তির পক্ষে। কেউ চায় না, মানুষ ঘরছাড়া হোক, প্রিয়জন হারাক।’

প্রসঙ্গত, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের এক সম্মেলনে আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া, যাঁদের বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের নতুন করে বাড়ি করে দেওয়ার পাশাপাশি, দোকানঘরের ক্ষতির হিসেব করতে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

মঙ্গলবার ফের এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কাদের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তার সমীক্ষা চলছে। আমি গিয়ে নিজে দেখব এবং ব্যবস্থা নেব। এটা আমার কর্তব্য এবং আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।’

Previous articleBaguiati: বাগুইআটিতে ট্রলি ব্যাগে মহিলার দেহ উদ্ধার! , খোলা চুল-মুখে জড়ানো ব্রাউন টেপ, চোখ কপালে পুলিশের
Next articleবাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শে বিরভূমের পিছিয়ে পড়া স্কুলকে আর্থিক অনুদান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here