
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ১৬০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের শিলান্যাস করলেন তিনি। এই প্রকল্পকে ‘ল্যান্ডমার্ক’ প্রজেক্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৫ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেরে রাজ্যের ২৩ জেলার মানুষই উপকৃত হবেন বলে দাবি তাঁর।
এটা বাংলার জন্য ঐতিহাসিক প্রকল্প। এর আগে রাজ্যে এমনটা কখনও হয়নি”! শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস করে এই মন্তব্যই করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বার্তায় পূর্ববর্তী বাম সরকারকেও খোঁচা দেন তিনি। বলেন, ‘আগে লোকে বলত লোডশেডিংয়ের সরকার, আর নেই দরকার। এই প্রকল্পের কারণে পরবর্তী ১০০ বছর বিদ্যুতের সমস্যা হবে না রাজ্যে’।
এই অনুষ্ঠানে জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। শুধু শালবনিতে নয়, গোটা রাজ্যের জন্যই এই প্রকল্প উন্নয়ন করবে। মুখ্যমন্ত্রী এই পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ”শালবনির কারখানার জন্য গোটা রাজ্য, ২৩ জেলাই উপকৃত হবে। ১৫ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হবে। বিদ্যুতের আর কোনও সমস্যা হবে না। ২৪ ঘণ্টাই পরিষেবা মিলবে।”

শালবনির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস তো হল, আগামী দিনে শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলা আরও কতটা উন্নতি করতে চলেছে তার একটা হিসেবও দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, রাজ্যে ৬টি ইকোনমিক করিডোর তৈরি হয়েছে।

ডেউচা-পাঁচামিতে বিশাল কোল ব্লক তৈরি হচ্ছে। সেখানে ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে আগামী ৩০ তারিখ দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হবে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে পাঁচটি বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করবে। ফলে আগামী কয়েক বছরে প্রচুর মানুষ কাজ পেতে চলেছেন বলে আশ্বাস দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছরে কত খরচ হয়েছে তার খতিয়ানও দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, ইতিমধ্যে ৭৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ৩.৫ লক্ষ লাইন ও ৭৫০টার বেশি সাব স্টেশন তৈরি হয়েছে। আগে রাজ্যে ১ কোটি ৭ লক্ষ উপভোক্তা ছিলেন, এখন সেটা হয়েছে ২ কোটি ৩০ লক্ষ। মমতা এও বলেন, আগামী দিনে আরও ৪৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে বিদ্যুতের জন্য।
মমতা মনে করিয়ে দেন, বিজিবিএস-এ ৯৯ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। তার মধ্যে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ হয়েছে। বিরোধীরা বারংবারই শিল্প ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারকে নিশানা করে আসে। দাবি করা হয়, তৃণমূল আমলে শুধু বড় বড় কথা বলা হয়, আদতে শিল্প হয়নি আর ভবিষ্যতেও হবে না। সোমবারের অনুষ্ঠান থেকে বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করে মমতা বলেন, ”এবার আর আমাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। সমালোচনা করতে পারেন। তবে যারা বলেন বাংলায় শিল্প হয় না, হচ্ছে না, হচ্ছে না, তাঁরা চোখ খুলে দেখে যান।”

পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধনের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে ৯টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হয়েছে। ৬টি ইকোনমিক করিডর হচ্ছে। আরও ৫টি বড় কোম্পানি আসছে। পশ্চিমবঙ্গকে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল গেটওয়ে’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন মমতা।
সভা থেকে তাঁর বার্তা, আবার ট্রেনিং সেন্টার হবে শালবনিতে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে স্থানীয় যুবক-যুবতীদের। এ দিন এই অনুষ্ঠানে জিন্দাল গ্রুপের কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সাংসদ দেবও উপস্থিত ছিলেন। সকলেই রাজ্যে ‘শিল্প বান্ধব’ পরিবেশের কথা তুলে ধরেছেন।
