উৎকণ্ঠার অবসান। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। মহাজগতের মায়া কাটিয়ে অবশেষে ঘরে ফিরল ঘরের মেয়ে। ন’মাস আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কার্যত আটকে থাকার পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযোদ্ধা মহাকাশচারী বুচ উইলমোর অবশেষে ছুঁলেন পৃথিবীর মাটি। তাঁদের ফিরিয়ে আনল ইলন মাস্কের স্পেস এক্স সংস্থার ড্রাগন ক্যাপসুল ।
ভারতীয় সময় ঠিক তখন মঙ্গলবার শেষরাত ৩টে ২৭ মিনিট। ধীরে ধীরে পৃথিবীতে অবতরণ করল স্পেস এক্সের মহাকাশযানটি। অতি সন্তর্পণে নভোচর জুটিকে স্প্ল্যাশডাউন করানো হলো ফ্লরিডার উপকূলে গাল্ফ অফ মেক্সিকোতে। এর পর ভেসেলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে নির্দিষ্ট স্থানে। দীর্ঘ ন’মাসের মহাকাশ বাসের জেরে শরীরে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে সুনীতা ও বুচের। ফলে সম্পূর্ণ বিশ্রাম এবং চিকিৎসকদের নজরদারিতে রাখা হবে তাঁদের।
https://x.com/NASA/status/1902118174591521056?t=tSgu-v7vAJJlmpVS9YQ66g&s=19
সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর, নিক হেগ ও রাশিয়ান অ্যাস্ট্রোনট আলেকজান্ডার গোরবুনভকে নিয়ে ক্যাপসুল আনডক হয় মঙ্গলবার সকাল ১০টা বেজে ৩৫ মিনিটে। ১৭ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জার্নি শেষে ভোররাত ৩টে ২৭ মিনিটে পৃথিবীর মাটি ছুঁয়ে ফেলেন সুনীতারা। তার আগে ভারতীয় সময় ঠিক রাত ২টো বেজে ১৫ মিনিটে শুরু হয় স্প্ল্যাশডাউন প্রক্রিয়া। সফল ভাবে অবতরণ করে স্পেস এক্সের ড্রাগন ক্যাপসুল। সমুদ্র ছোঁয়ার পরেই সেটিকে টেনে নিয়ে যাবে স্পেস এক্সের একটি উদ্ধারকারী ভেসেল। একে একে সুনীতা-সহ বাকি নভোচরেরা বেরিয়ে আসবেন পৃথিবীর হাওয়ায়।
https://x.com/NASA/status/1902118174591521056?t=5Z6cPjkkFXEXYAP9SrwQ2Q&s=19
১৭ ঘণ্টা ধরে সফর করেন সুনীতারা। ঘরে ফেরার পথে পদে পদে ছিল ঝুঁকি। ২০০৩ সালে নাসারই মহাকাশচারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কল্পনা চাওলার মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’ পৃথিবীতে ল্যান্ডিংয়ের ঠিক ১৬ মিনিট আগে ভস্মীভূত হয়ে যায়। মৃত্যু হয় কল্পনা-সহ সাত জন নভোচরের। সেই ঘটনা এড়াতে এ বার আগাগোড়া সতর্ক ছিল নাসা। পৃথিবীতে ফেরার আগে তাই খতিয়ে দেখা হয় সবকিছু। ক্যাপসুলের কোথাও কোনও লিক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয় বার বার।
https://x.com/NASA/status/1902099027199480089?t=5b7rLAvVD807vhtJNjmKKA&s=19
পরিবার, অনুগামী থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সুনীতাদের ঘরে ফেরার। তাঁকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। চিঠিও লেখেন ভারতকন্যা সুনীতাকে।
আট দিনের জন্য মহাকাশ সফরে গিয়ে স্পেসশিপের যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে ন’মাস আটকে পড়তে হয় নাসার এই দুই নভোচরকে। একাধিক বার তাঁদের ফিরিয়ে আনার প্রয়াস করা হলেও তা সফল হয়নি।
অবশেষে গত ১৬ মার্চ ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে উড়ে যায় Crew-10। ২৯ ঘণ্টা সফর করে সুনীতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় মাস্কের সংস্থার ড্রাগন ক্যাপসুল। এর পর নাসার দুই এবং রসকসমস ও জাপানের স্পেস সেন্টারের আরও দুই মহাকাশচারীর উপর স্পেস স্টেশনের দায়িত্ব তুলে দিয়ে ঘরের পথে রওনা দেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর।